অর্থনীতি

১৬ বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ

অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়ে গ্রাহকদের দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি তছরুপের অভিযোগ ওঠা ১৬ বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

Advertisement

কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- পদ্মা ইসলামী লাইফ, প্রগতি লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, মেঘনা লাইফ, ন্যাশনাল লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, বায়রা লাইফ, সন্ধানী লাইফ, প্রোগ্রেসিভ লাইফ, পপুলার লাইফ, সানলাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, রূপালী লাইফ ও ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে পাঠানো এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) সম্প্রতি এ নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে সই করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব মো. সাঈদ কুতুব।

আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৩ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যলয় থেকে আপনাদের (আইডিআরএ) নিকট পাঠানো একটি পত্রের অনুলিপি এ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এমতাবস্থায় প্রাপ্ত পত্রটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশক্রমে পাঠানো হলো।

Advertisement

এদিকে আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট দুদক থেকে পাঠানো চিঠিতে ১৬টি বেসরকারি জীবন বীমার আইন লঙ্ঘন করে ব্যবস্থাপনা ব্যয় খাতে অতিরিক্ত অর্থ খরচের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়।

ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৯-১৫ পর্যন্ত জীবন বীমা আইন ২০১০-এর ৬২ ধারা এবং জীবন বীমা বিধিমালা ১৯৫৮-এর ৩৯ বিধির ব্যত্যয় ঘটিয়ে ১৬টি বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি অনুমোদিত ব্যয়সীমার চেয়ে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে। এ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়ে বীমা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন মর্মে কমিশন মনে করে।

চিঠিতে ছক আকারে ১৬টি কোম্পানির নাম এবং কোন কোম্পানি কত টাকা আইন লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত খরচ করেছে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর চিঠির শেষ অংশে বলা হয়েছে, ওই ১৬টি বীমা কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে দুদককে অবহিতের অনুরোধ করা হলো।

দুদকের চিঠির তথ্য অনুযায়ী, ১৬টি কোম্পানি ২০০৯-১৫ পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় খাতে এক হাজার ৬৮১ কোটি টাকা আইনি সীমার অতিরিক্ত খরচ করেছে। এর মধ্যে- পদ্মা ইসলামী লাইফ ১৬৬ কোটি ৮৩ লাখ, প্রগতি লাইফ ১৪৬ কোটি ৯৬ লাখ, সানফ্লাওয়ার লাইফ ৮৬ কোটি ১৮ লাখ, মেঘনা লাইফ ৮৩ কোটি ৯৪ লাখ, ন্যাশনাল লাইফ ২১ কোটি ৩৭ লাখ, গোল্ডেন লাইফ ১৫৬ কোটি ২৫ লাখ, বায়রা লাইফ ৩৮ কোটি ৬৫ লাখ, সন্ধানী লাইফ ১৫৫ কোটি ৫৯ লাখ, প্রোগ্রেসিভ লাইফ ৩৯ কোটি ৪৪ লাখ, পপুলার লাইফ ২৮৩ কোটি ৩৮ লাখ, সানলাইফ ৮৪ কোটি ১৩ লাখ, হোমল্যান্ড লাইফ ৪৬ কোটি ৯৫ লাখ, প্রাইম ইসলামী লাইফ ৭১ কোটি ৭৯ লাখ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ২০০ কোটি ৫১ লাখ, রূপালী লাইফ ৪৪ কোটি ৪০ লাখ এবং ডেল্টা লাইফ ৫৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা আইনি সীমার অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।

Advertisement

দুদকের ওই চিঠির পর আইডিআরএ থেকে কোম্পানিগুলোতে নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে আইডিআরএ’র এক নির্বাহী পরিচালক (ইডি) জানান, চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আইডিআরএ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে কোম্পানিগুলোতে নিরীক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত কমিটি বীমা আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী নিরীক্ষা কার্যক্রম চালাবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা কর্পোরেশনসহ ১৭টি বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে ২০০৯-১৫ পর্যন্ত ব্যবস্থপনা ব্যয় খাতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের মাধ্যমে তছরুপের অভিযোগ ওঠে। এরপর ২০১৬ সালের জুনে তা খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

অনুসন্ধান শেষে ২০১৭ সালের আগস্টে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক জালাল উদ্দিন কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইডিআরএকে চিঠি দেয়ার সুপারিশ করা হয়। জীবন বীমা কোম্পানিগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংজ্ঞায় না পড়ার কারণে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও কারও বিরুদ্ধে মামলা করা থেকে বিরত থাকে দুদক।

তবে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বীমা আইন সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেয় দুদক। এরপর আইন সংশোধনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়, দুদক ও বীমা কোম্পানির প্রতিনিধিদের একাধিক বৈঠক হয়। তবে এখন পর্যন্ত দুদকের প্রস্তাব অনুযায়ী আইনের সংশোধন হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে আইডিআরএ মুখপাত্র ও সদস্য গোকুল চাঁদ দাস জাগো নিউজকে বলেন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের বিষয়ে আমাদের আগের দায়িত্বশীলরা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। এছাড়া কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত ব্যয় পর্যায়ক্রমে সমন্বয় করতে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এমএএস/এএইচ/এমএআর/এমএস