রাজনীতি

ঢাকা-১১ : নৌকায় সয়লাব অলিগলি, খোঁজ নেই ধানের শীষের

প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে প্রার্থী ও তার সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা ব্যস্ত সময় পার করছেন। চারদিকে চলছে ভোটের উৎসবমুখর প্রচারণা। সব দলের প্রার্থীরাই নেমে গেছেন ভোটের মাঠে।

Advertisement

সেই সঙ্গে চলছে প্রার্থীদের পক্ষে গণসংযোগ, মিছিল, মাইকিং, শোডাউনসহ ভোটারদের দরজায় দরজায় গিয়ে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা। তবে এ বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপকভাবে চলছে প্রার্থীদের প্রচারণা।

ঢাকার অন্যান্য আসনের মত ঢাকা-১১ আসনেও চলছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা উৎসব। এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান এমপি এ কে এম রহমতুল্লাহ। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন শামীম আরা বেগম। তিনি বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুমের সহধর্মিনী।

পুরো ঢাকা-১১ আসনের অলি গলি থেকে শুরু করে সর্বত্রই এখন নির্বাচনী আমেজ। অলি-গলি, প্রধান সড়ক, মার্কেটের সামনে নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে গেছে। তবে এসব পোস্টারগুলোর বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এ কে এম রহমতুল্লাহর। বিএনপির ধানের শীষেরর প্রার্থী শামীম আরা বেগমের নির্বাচনী পোস্টার তেমনটা চোখে পড়ে না। তা সত্ত্বেও সর্বত্রই শুধু আলোচনাই আসন্ন নির্বাচন নিয়ে। পাড়া মহল্লা, চায়ের দোকান, আড্ডায় আলোচ্য বিষয় এখন রাজনীতির হালচাল, আসন্ন নির্বাচন, মহাজোট, আওয়ামী লীগ, ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি, জাতীয় পাটি, প্রার্থী, এলাকার উন্নয়ন চিত্র ইত্যাদি।

Advertisement

ঢাকা-১১ আসনের বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা শিহাবুল ইসলাম। পাড়ার চায়ের দোকানে স্থানীয় আরও ৩ জনকে সঙ্গে নিয়ে চায়ের কাপে তুলেছেন ভোটের ঝড়। তিনি বলেন, এই আসনে আমরা সেই প্রার্থীকেই ভোট দেব যিনি এলাকার উন্নয়ন করবে। তবে তিনি বলেন, এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ব্যাপক প্রাচার-প্রচারণা থাকলেও বিএনপি প্রার্থীর তেমন একটা প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না।

পাশেই থাকা আরেকজন সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রতিদিনই এলাকায় মিছিল মিটিংসহ পোস্টারে ছেয়ে গেছে। কিন্তু ধানের শীষের প্রার্থীর মাঠে তেমন পোস্টার প্রচারণা নেই। তবে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই এখন আলোচনা শুধু নির্বাচন নিয়ে। সাধারণ মানুষ আসন্ন নির্বাচন নিয়ে খুবই আগ্রহী।

ঢাকা-১১ আসনে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী শামীম আরা বেগম অভিযোগ করেন, প্রচার-প্রচারণায় বিভিন্নভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে তাদের। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। সামনা সামনি বাধা দেয়া না হলেও বিভিন্ন জায়গায় লাগানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। প্রচারণার কাজ না করার জন্য নেতা কর্মীদের ফোনেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। তবে প্রতিদিনই আমরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। তাদের কাছে ভোট চেয়ে জনসংযোগ চালাচ্ছি।

এদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থীত প্রার্থী প্রতিদিনই এলাকায় প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। পুরো এলাকা তার নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এ কে এম রহমতুল্লাহর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এখন ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।

Advertisement

সব মিলিয়ে এই আসনের সব প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, মতবিনিময়, মিছিল-মিটিংয়ে সরগরম পাড়া-মহল্লা। ঢাকা-১১ এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে এ কে এম রহমতুল্লাহ, বিএনপির ধানের শীষে শামীম আরা বেগম লড়ছেন। এই আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির (জাপা) এস এম ফয়সাল চিশতী (লাঙ্গল), গণফোরামের মোজাম্মেল হক-বীর প্রতীক (উদীয়মান সূর্য), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল বাতেন (কাঁঠাল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আমিনুল ইসলাম (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মিজানুর রহমান (আম), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শরীফ মো. মিরাজ হুসেইন (হারিকেন)।

ঢাকা-১১ আসনটি রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বাড্ডার ২১ নম্বর ওয়ার্ড, রামপুরার ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং বাড্ডা, বেরাইদ, সাঁতারকুল ও ভাটারা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এলাকাটি ঢাকা-৫ আসনের অংশ ছিল। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে বাড্ডা-রামপুরা-ভাটারার অংশ নিয়ে ঢাকা-১০ আসন গঠিত হয়। পরের নির্বাচনে ফের পুনর্বিন্যাসের মধ্য দিয়ে আসনটি হয় ঢাকা-১১।

প্রসঙ্গত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে প্রার্থী ও তার সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এএস/এমএমজেড/এমএস