সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ এবং সর্বদক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দ্বীপটি দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। সেন্টমার্টিনে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু কেন যেন যাওয়া হচ্ছিল না! তাই এবারের সুযোগটা আর হাতছাড়া করলাম না।
Advertisement
কিছুদিন যাবৎ আলোচনা হচ্ছিলো শেকৃবি ট্যুরিজম সোসাইটি সেন্টমার্টিনে যাওয়ার আয়োজন করতে যাচ্ছে। যোগ দিলাম তাদের সাথে। মোট ৩৭ জনের বেশ বড়সড় একটা টিম হয়ে গেল আমাদের। এর মধ্যে কারও কারও অভিভাবক ও বন্ধু আমাদের সঙ্গী হয়েছিল। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি ) বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা এই ট্যুরে অংশগ্রহণ করে। এই ট্যুরটি আয়োজনের ক্ষেত্রে রাফি, প্লাবন, হালিমীসহ অনেকেই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।
১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে আমাদের গাড়ি ছাড়বে। তাই যথেষ্ট সময় হাতে রেখেই বিকেল ৪টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বের হই। আমাদের টিমের লোকজন পৌঁছানোর পর নির্ধারিত সময়ের বেশ খানিকটা পরে সায়েদাবাদ থেকে গাড়ি ছাড়লো গন্তব্যের উদ্দেশে। দ্বীপ দেখার নেশায় মত্ত হয়ে বুকভরা আশা নিয়ে সবার মন উথলে উঠছিলো তখন। পরিবেশ-পরিস্থিতি মোটেও আমাদের অনুকূলে ছিল না। তবুও কেউ পিছপা হতে রাজি নই। শহরে যানজটের কারণে গাড়ির গতি মন্থর হয়ে গেল। মেঘনা ব্রিজেও জ্যামে আটকে বেশ খানিকটা সময় নষ্ট হলো। গাড়ির ভেতর নাচ, গানে মেতে উঠল সবাই। পরদিন সকালে আমাদের গাড়ি কক্সবাজার পৌঁছলো। অবশ্য এর মাঝে রাতের খাবারের জন্য যাত্রাবিরতি নিয়েছিলাম আমরা।
> আরও পড়ুন- সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নতুন যে সিদ্ধান্ত আসছে
Advertisement
১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবসের দিন। গাড়ির জানালার ফাঁক দিয়ে দেখলাম, স্কুল-কলেজে বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। টেকনাফ পৌঁছতে বেশ দেরি হয়ে গেল। ততক্ষণে জাহাজ চলে গেছে। অনেকে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো। তখন ইঞ্জিনচালিত নৌকাই (ট্রলার) একমাত্র ভরসা সেন্টমার্টিনে যাওয়ার জন্য। এদিকে সমুদ্র অঞ্চলে সতর্কতা সংকেত দেওয়া হয়েছে। অবশেষে আমাদের অভিভাবক কৃষিবিদ নিপা মোনালিসা ম্যাডামের সাহসিকতায় আমরা ট্রলারেই যাত্রা করলাম সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে। চলমান বোটে আশেপাশের চমৎকার দৃশ্যপট দেখতে দেখতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর আমরা সেন্টমার্টিনে পৌঁছলাম। সেন্টমার্টিনে পৌঁছানোর অনুভূতি যেন সব ক্লান্তি দূর করে দিলো।
হোটেলে ফিরলাম আমরা। একটু বিশ্রাম নিয়ে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে গেলাম সবাই। ততক্ষণে বিকেল হয়ে গেছে। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের লোভ কি আর সামলানো যায়! দিনের বাকিটা সময় দ্বীপে ঘোরাঘুরি করলাম আমরা। সেন্টমার্টিন মন সতেজ করার জন্য এক চমৎকার জায়গা। বিশেষ করে দম্পতিদের জন্য বেশ উপযুক্ত স্থান। আর পর্যটকদের সাথে স্থানীয় লোকজনের ব্যবহারও বেশ ভালো। রাতে সাগরপাড়েও বেশ আড্ডা জমে উঠল আমাদের। সাগরপাড়ে দাঁড়িয়ে মায়ানমারের কিছু ভূখণ্ডও চোখে পড়ে।
পরদিন ভোরে উঠতে হলো সবাইকে। ছেঁড়াদ্বীপে যাবো সবাই। পায়ে হেটেই রওনা হই আমরা। চারপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে আর গল্প-গুজবে মত্ত হয়ে এগিয়ে চললাম আমরা। ছেঁড়াদ্বীপে গিয়ে সেলফি, ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল সবাই। বেশ চমৎকার দ্বীপ! প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। কোরালগুলোও বেশ চমৎকার। পরে ছেঁড়াদ্বীপ থেকে বোটে সেন্টমার্টিন ফিরলাম আমরা। সাগরে গোসল করতে গেলাম সবাই। লাফ-ঝাঁপে মাতোয়ারা সবাই। বড় বড় ঢেউয়ের তালে লাফালাফির অন্যরকম মজা আছে। লবণাক্ত পানিতে ২-৩ ঘণ্টা সাঁতার কাটার পর গোসল শেষ হলো। রকমারি সামুদ্রিক মাছ দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার শুরু হলো ঘোরাঘুরি। মধ্যরাতে হয়ে গেলো বারবিকিউ পার্টি। কেউ কেউ সাগর তীরে হাঁটাহাঁটি করতে গেলো। আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম।
> আরও পড়ুন- শীতে পাহাড় ও সমুদ্রের হাতছানি
Advertisement
পরদিন সকাল থেকে আবার শুরু হলো মার্কেটসহ দ্বীপের এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি, সামুদ্রিক পণ্য কেনাকাটা। দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই ঢাকার দিকে রওনা হলাম। বিকেল ৩টায় সেন্টমার্টিন থেকে জাহাজ ছাড়লো। নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে সন্ধ্যায় টেকনাফ পৌঁছলাম আমরা। চুক্তিবদ্ধ গাড়িতে ঢাকার দিকে রওনা হলাম। কক্সবাজারে সুগন্ধা বিচে যাত্রাবিরতি নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম সবাই। সাগরের উত্তাল গর্জন আর হিমেল হাওয়া যেন তখনও মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছিল। রাতে গাড়িতে ঘুমিয়ে গেলাম সবাই। পরদিন সকালে কুমিল্লায় আবার যাত্রাবিরতি নেওয়া হলো নাস্তা করার জন্য। এরপর আবার ঢাকার দিকে গাড়ি ছুটে চলল। নাচে, গানে মেতে উঠল সবাই।
সফরটিতে যাওয়ার সময় অনেকেই অনেকের অপরিচিত ছিলাম। তবে ফেরার সময় যেন সবাই একে অপরের অনেক পরিচিত হয়ে গেছি। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যদিয়ে ভালোভাবেই ১৯ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে ঢাকায় ফিরি আমরা। সব মিলিয়ে ট্যুরটা ছিল এককথায় অসাধারণ, অতুলনীয়। হৃদয়ের মণিকোঠায় এক টুকরো চিরসবুজ স্মৃতি হয়ে বিরাজ করবে অনন্তকাল।
এসইউ/পিআর