বছর জুড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা ছিলো উর্ধ্বমূখীই। সবার প্রত্যাশা ছিলো শনিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচটি জিতে বছরটা সাফল্যের রঙে রাঙিয়ে রাখবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
Advertisement
কিন্তু ম্যাচে ৫০ রানের পরাজয়ে ধূলিসাৎ হয়েছে সে সম্ভাবনা। প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের শুরুতে বোলারদের ও পরে বাংলাদেশের ইনিংসের শেষদিকে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় আশা জাগিয়েও ছোঁয়া হয়নি ১৯১ রানের লক্ষ্য। তবে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের জয়-পরাজয়ের চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়ায় মাঠের আম্পায়ার তানভীর আহমেদের ‘নো বল’ কাণ্ড।
বাংলাদেশ ইনিংসের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার ওশেন থমাসের বলে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে বসেন লিটন দাস। ফিল্ডার বল হাতে নিয়ে উল্লাসে ফেটে ওঠার সাথে সাথে আম্পায়ার তানভির মুখে ‘নো’ বলে আর ডান হাত প্রসারিত করে জানিয়ে দেন, নাহ আউট হবে না। এটা নো বল।
কিন্তু টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা যায় বোলার থমাসের সামনের পা মোটেই দাগ অতিক্রম করেনি। দাগের মধ্যেই ছিল। তা নিয়ম অনুযায়ী মোটেই নো বল নয়। একদম সিদ্ধ ডেলিভারি।
Advertisement
খালি চোখে সবাই দেখেছেন আম্পায়ার তানভীর আহমেদের পরপর দু’টি পরিষ্কার ও আইনসিদ্ধ বোলিংকেও নো বল ডেকে বিতর্কিত হয়ে খেলার সৌন্দর্যহানি ঘটানোর পাশাপাশি স্বাভাবিক ছন্দ আর গতিও নষ্ট করেছেন আম্পায়ার তানভীর।
কিন্তু আম্পায়ারের ওই ভুল সিদ্ধান্তের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্যাপ্টেন কার্লোস ব্রাথওয়েট ফোর্থ আম্পায়ার, থার্ড আম্পায়ার এবং ম্যাচ রেফারির কাছে গিয়ে কয়েক মিনিট কথা বলেছেন। সেসময় তিনি কি বলেছিলেন? পুরো ঘটনাটিকে ব্রাথওয়েট কীভাবে দেখছেন? নিশ্চয়ই খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
তাহলে শুনুন, খেলা শেষে প্রেস কনফারেন্সে সে প্রশ্নই করা হয়েছে ব্রাথওয়েটকে। তিনিও দারুণ গুছিয়ে জবাব দিয়েছেন। একদম পরিণত মস্তিষ্কের পাকা কথাবার্তা। এতটুকু আবেগতাড়িত না হয়ে ভীনদেশের প্রচার মাধ্যমের সামনে কতটা সাজানো-গোছানো কথা-বার্তা বলা যায়, ঠিক তাই বলেছেন ব্রাথওয়েট।
কথা বলার সময় তাকে খেয়াল রাখতে হয়েছে কোনোভাবেই যাতে ‘কোড অফ কন্ডাক্ট’ ভঙ্গ না হয়। আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি এবং প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে এতটুকু ছোট না করে রীতিমতো এক মৌখিত বিবৃতি দিয়ে ফেলেছেন ব্রাথওয়েট।
Advertisement
তবে তার একটি ক্ষোভের জায়গা আছে। তা হলো- তার মনে হয় এবার বাংলাদেশ সফরে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজে বেশ ক’টি সিদ্ধান্ত তার দলের বিপক্ষে গেছে।
এ সম্পর্কে ব্রাথওয়েট বলেন, ‘আমি দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পরই ম্যাচ রেফারির কাছে গিয়েছিলাম। তাকে বলেছি, আমার মনে হয় না এ সিরিজে কোনও ফিফটি-ফিফটি সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে আসেনি। সবগুলো ডিসিশন বাংলাদেশের পক্ষে গেছে। আমি কখনও কারো বিপক্ষে প্রতারণার অভিযোগ আনতে চাই না। আমি তা বলতেও চাই না। তারা (আম্পায়াররা) পেশাদার।’
‘আমি ভাবতে চাই না যে, আম্পায়াররা পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দিতেই মাঠে নেমেছেন। ভালো করে বলতে গেলে, আমি তাদের বিপক্ষে প্রতারণার অভিযোগ আনিনি। তবে ম্যাচ রেফারির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছি, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজের সব ফিফটি ফিফটি ডিসিশন আমাদের বিপক্ষে গেছে। এটা সত্যি লাল ও সাদা- দুই বলেই আমরা আমাদের সেরাটা উপহার দিতে পারিনি। তবে এটাও ঠিক আম্পায়ারিং আমাদের ভালো খেলায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে।’
ওই ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যায় গিয়ে ব্রাথওয়েট বলেন, ‘সবার জানা নো বলের রিভিউ হয় না। আম্পায়ার ‘নো’ না ডাকলে তখন সেটা রিভিউ নেয়া যায় বা রিভিউ করার নিয়ম আছে। কিন্তু এখানে আম্পায়ার নো ডেকে ফেলেছেন। সবাই দেখেছেন যা মোটেই নো বল ছিল না। অবশ্যই তখন বোলার থমাস ছিল চাপে। যে বলে উইকেট পাওয়ার কথা, সেখানে তার বলে ফ্রি হিট- খুব স্বাভাবিকভাবেই একটা বাড়তি আবেগ ও উত্তেজনা ভর করেছিল তার ওপর। অধিনায়ক হিসেবে আমার তখন দায়িত্ব ছিল দলকে সামলানো। আমি সেই চেষ্টাই করেছি। যেহেতু বারবার ফিফটি ফিফটি সিদ্ধান্তগুলো আমাদের বিপক্ষে যাচ্ছিল, তাই অধিনায়ক হিসেবে আমার কর্তব্য ছিল ম্যাচ রেফারিকে বিষয়টি বলা।’
‘একপর্যায়ে ম্যাচ রেফারির সঙ্গে কিছু কঠিন কথাও বলতে হয়েছে। তার সঙ্গে কিছু ও মৃদু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর অবশেষে জট পাকানো সমস্যার সমাধান হয়। এরপর আমি আমার ক্রিকেটারদের বোঝাতে সক্ষম হই যে, আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি। এখান থেকে না খেলে মাঠ ছাড়া বা সিরিজ খুইয়ে ফিরে যাওয়া ভালো দেখায় না, ঠিকও হবে না।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘তাই সবাইকে বলি, সামর্থ্যের শেষবিন্দু দিয়ে লড়াই করতে। এর মধ্যে আমি ম্যাচ রেফারির কাছে পাঁচ মিনিট সময়ও চাই। যাতে করে ছেলেরা নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারে। পাশাপাশি মনোযোগ-মনোসংযোগটাও ফিরে পেতে পারে। ম্যাচ রেফারিকে ধন্যবাদ, তিনি আমার সে অনুরোধ রেখেছেন। ওই সময় পাওয়ায় আমারও সুবিধা হয়। আমি সহযোগী ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলার ফুরসত পাই। তাদের বোঝাতে সক্ষম হই যে, আমাদের লড়াই করতে হবে। সবাই উদ্দীপ্ত হয় এবং বলতে থাকে এ ম্যাচ জিততে হবে আমাদের। জয়ের জন্য লড়তেও হবে।’
এসএএস/পিআর