খেলাধুলা

‘নো’ বল নিয়ে মাঠে তুলকালাম কাণ্ড

সুখ-দুঃখ যেমন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তেমনি আম্পয়ারিংও খেলার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আম্পায়ারের ভুলও তাই খেলার অংশ বলেই পরিগণিত হয়। কিন্তু সেই ভুল যখন বার বার হয় এবং খুব চোখে পড়ার মত করে ঘটে তখন সেটা অমার্জনীয় বলেই গণ্য হয়।

Advertisement

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তেমন ভুলের সমারোহ বাংলাদেশ আম্পায়ারদের। গত ম্যাচে গাজী সোহেল আর তানভির আহমেদ মিলে ওয়াইড এবং কট বিহাইন্ডের সিদ্ধান্ত ভুল করে সমালোচিত হয়েছিলেন।

ব্যাটের ভিতরের অংশে লেগে প্যাডে আঘাত হানার পরও দুজনে মিলে দুই দুইবার লেগবিফোর আউটের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। পরে রেফারেল সিস্টেমে গিয়ে দুটি সিদ্ধান্তই ভুল প্রমাণ হয়। আজ একই ভুল করেছেন তানভির আহমেদ।

বাংলাদেশ ইনিংসের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার ওশেন থমাসের বলে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে বসেন লিটন দাস। ফিল্ডার বল হাতে নিয়ে উল্লাসে ফেটে ওঠার সাথে সাথে আম্পায়ার তানভির মুখে ‘নো’ বলে আর ডান হাত প্রসারিত করে জানিয়ে দেন, নাহ আউট হবে না। এটা নো বল।

Advertisement

আম্পায়ার তানভিরের ভাষ্যমতে বোলার ওশেন থমাসের সামনের পা ডেলিভারির সময় পপিং ক্রিজের বাইরে গিয়েছিল বা ডেলিভারির আগে থমাসের সামনের পা পপিং ক্রিজ অতিক্রম করেছিল। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা গেল বোলার থমাসের সামনের পা মোটেই দাগ অতিক্রম করেনি। দাগের মধ্যেই ছিল। তা নিয়ম অনুযায়ী মোটেই নো বল নয়। একদম সিদ্ধ ডেলিভারি।

সে নো বল ডাকা নিয়ে রাজ্যের তুলকালাম! প্রসঙ্গত, ঠিক তার আগেও একবার থমাসের সামনের পা পপিং ক্রিজের বাইরে না থাকার পরও তানভির নো ডেকেছিলেন। দ্বিতীয় বার একই ভুল করায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটাররা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এক সময় অধিনায়ক মাঠের চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা ক্রিকেটারদের ডেকে পিচের পাশেই একটা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে বসেন।

তাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছিলো আম্পায়ারের ভুল নো বল ডাকার প্রতিবাদে বুঝি মাঠ ছাড়বে ক্যারিবীয়রা। এভাবেই চলতে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। এক পর্যায়ে মাঠের ঠিক বাইরে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের সামনে বসে থাকা চতুর্থ আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা সৈকতের কাছে গিয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন ক্যারিবীয় অধিনায়ক ব্রাথওয়েট।

আম্পায়ারের ডাকা নো বলের সিদ্ধান্ত যে ঠিক ছিলনা, তা বার বার বলতে থাকেন উইন্ডিজ ক্যাপ্টেন। টিভির পর্দায় তার শরিরী অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিলো ব্রাথওয়েট ফোর্থ আম্পায়ারকে বলছিলেন, এমন ভুল সিদ্ধান্ত দিলে খেলবো কি করে?

Advertisement

এমন সময় থার্ড আম্পায়ার গাজী সোহেল নেমে আসেন। এক পর্যায়ে ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো‘ও গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের তিন তলায় তার নিজের নির্দিষ্ট কক্ষ থেকে নেমে মাঠের ঠিক বাইরে ব্রাথওয়েটের কাছে চলে আসেন। তার সাথে কথা বার্তা বলার পর ক্ষান্ত হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। পরে আট মিনিট বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয় খেলা।

খেলার মাঠে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত নতুন নয়। বিশ্বকাপসহ বড় আসরে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশও আম্পায়ারের ভুল ও বাজে সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে। তা নিয়ে বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকরা আইসিসির ষড়যন্ত্র, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কারসাজি অনেক কথাই বলেছেন। তা নিয়ে অনেক জল ঘোলাও হয়েছে।

তবে গত ২০ ডিসেম্বর ও আজ শেরে বাংলায় বাংলাদেশের আম্পায়ারদের এই ভুল অমার্জনীয়। তাদের এই ভুলের খেসারতও দিতে হবে। আইসিসির প্যানেলে বাংলাদেশের আম্পায়ারদের খেলা পরিচালনার মান চরমভাবে প্রশ্ন বিদ্ধ হবে। আগামীতে তাদের ম্যাচ পাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এআরবি/এসএএস/এমএমআর/জেআইএম