গর্ভবতী মায়ের সুচিকিৎসা ও শিশু মৃত্যুহার কমাতে মা ও শিশুর পাশে রয়েছে মিডওয়াইফ। নিরাপদ মাতৃসেবা নিশ্চিত করতে একজন মাকে গর্ভাবস্থা থেকে ডেলিভারি পরবর্তী চার সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়। বর্তমানে বেশিরভাগ উপজেলায় কাজ করছে; আগামীতে প্রতিটি মায়ের কাছে এ সেবা পৌঁছে দেয়া হবে।
Advertisement
রাজাধানীর একটি হোটেলে মিডওয়াইফদের অংশগ্রহণে শনিবার দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটি (বিএমএস)। সারাদেশ থেকে ৩৬ জন মিডওয়াইফ এ প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাকিলা মতিন মৃদুলা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএমএস’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হালিমা আক্তার, সেক্রেটারি জেসমিন আক্তার, কোষাধ্যক্ষ রেহেনা খানম। সভাপতিত্ব করেন বিএমএস’র সভাপতি মমতাজ বেগম।
অনুষ্ঠান সার্বিক পরিচালনা করেন বিএমএসের প্রজেক্ট ম্যানেজার শারমিন জয়া এবং ফাইন্যান্স কো-অডিনেটর এরশাদুল হক।
Advertisement
শারমিন শবনম জয়া বলেন, ‘একজন মায়ের নরমাল ডেলিভারি করাতে কখন কখন ১৮ ঘণ্টা সময় লাগে। আবার কখনও কম সময় লাগে। অসচেতনতার কারণে রোগীরা এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে চান না। তবে সময় কম বা বেশি লাগার বিষয়টা মায়ের শারীরিক অবস্থানসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মিডওয়াইফরা একজন মাকে ডেলিভারির আগে থেকে পর্যবেক্ষণে রাখেন এবং প্রতিনিয়ত রিপোর্ট করে থাকেন। সেই রিপোর্টেই প্রমাণ করে মায়ের নরমাল ডেলিভারি হবে না অপারেশন করাতে হবে। এ সেবা প্রতিটি মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে মাতৃ মৃত্যুহার অনেকাংশে কমে আসবে।’
শারমিন আরও বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিবন্ধিত মিডওয়াইফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে কাজ করছেন। এরা তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। কর্মরত এসব মিডওয়াইফরা সফলতার সঙ্গে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের পরিচর্যা করে থাকেন। সেই সঙ্গে মায়ের নরমাল ডেলিভারি করানোর মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান প্রতিরোধ করেন। বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী একজন মা ও শিশু, গর্ভধারণের পর থেকে শুরু করে সন্তান প্রসব পরবর্তী ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত একজন মিডওয়াইফের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে থেকে মিডওয়াইফারি সেবা গ্রহণ করবেন।’
বাংলাদেশে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিটি মায়ের পাশে থাকবেন একজন মিডওয়াইফ বাংলাদেশ মিডওয়াইফেরি সার্ভিসকে শক্তিশালী এবং মিডওয়াইফদের সমাজে গ্রহণযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে বিএমএস তার কর্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
Advertisement
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ পেশাটি শত বছর পুরোনো হলেও বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে প্রথমবারের মতো মিডওয়াইফেরি পেশাটি ২০১০ সালে স্বীকৃতি ও পরিচিতি লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিএমএস মিডওয়াইফদের প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বংলাদেশে বর্তমানে ৫৪টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে সরকারি ৩৮টি এবং বেসরকারি ১৬টি। এ সব প্রতিষ্ঠানে তিন বছর মেয়াদি মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে। বছরের প্রথম ভাগে নির্ধারিত সময়ে এইচএসসি পাস ছাত্রীরা এ ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির আবেদন করতে পারেন। তিন বছরের এ ডিপ্লোমা প্রোগ্রামের মাধ্যমে দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা মিডওয়াইফারির ছাত্রীদের মা ও শিশু স্বাস্থ্য, যৌন প্রজনন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, নরমাল ডেলিভারি, জেনডার ভিত্তিক সহিংসতা, অ্যাডভোকেসি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে পাঠ্য বইসহ ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসে দক্ষ করে তোলা হয়।
ইউএনএফপিএর অর্থায়নে বিএমএস-আরসিএম (রয়েল কলেজ অব মিডওয়াইফ) ইউকে এর যুগ্ম প্রকল্প।
এসআই/এনডিএস/জেআইএম