একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রার্থিতার বিষয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্টের একক বেঞ্চ। প্রার্থী হিসেবে টিকে থাকা নিয়ে এখনও আশান্বিত তার আইনজীবীরা। যদিও খালেদার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা একেবারে নেই বলে দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীরা। হাইকোর্টে নির্বাচনের প্রার্থিতা-সংক্রান্ত আবেদন খারিজ হলেও এ আদেশের বিরুদ্ধে এখনও আপিল করেননি খালেদার আইনজীবীরা। নির্বাচনের আগে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে কি-না সেটাও এখন দেখার বিষয়।
Advertisement
এর আগে দুর্নীতির অভিযোগে দণ্ডিত হওয়ার কারণে ইসি থেকে খালেদা জিয়ার তিন আসনেই প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার পর তার আইনজীবীরা হাইকোর্টে আসেন। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দেন।
বিভক্ত আদেশের পর নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি তৃতীয় বেঞ্চ গঠন করেন। এরই মাঝে একক বেঞ্চে মামলাটি শুনানি করতে গেলে তারা বিচারকের প্রতি অনাস্থা দেখায়, অনাস্থা দেখানোর পর একই বেঞ্চ গত ১৭ ডিসেম্বর খালেদার আবেদন খারিজ করেন। এখনও আশঙ্কার মধ্যে খালেদার প্রার্থিতা এবং আইনি লড়াই আপিল হচ্ছে কিনা। এখন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া তো দূরে থাক, আইনি বিষয়ে নিষ্পত্তি কী হচ্ছে সেটাও আলোচনায়।
বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী এবং খালেদার আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে খালেদার মামলায় লড়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত নেতাদের মতো নির্বাচন করতে পারবে না এ আশঙ্কা থেকেই বিএনপির আইনজীবীরা হাইকোর্টের একক বেঞ্চে মামলাটি শুনানি না করে টালবাহানা করেছেন।
Advertisement
খালেদার আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে বিভক্ত আদেশ দেয়া বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি যিনি থাকেন তার চেয়ে জ্যেষ্ঠ কোনো বিচারপতিকে দিয়ে একক বেঞ্চ গঠন করা। বিভক্ত আদেশ দেয়া বেঞ্চের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সিনিয়র বিচারপতি। কিন্তু বিচারপতি জে বি এম হাসানকে দিয়ে একক বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের কনিষ্ঠ। যে কারণে আমরা অনাস্থা জানিয়েছি।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, এটা স্পষ্ট, একজন সাধারণ নিরক্ষর মানুষও বলবে যে, খালেদার আবেদনটি রিজেক্ট হবে, সেটি তারাও (বিএনপি) জানে। বিএনপির অন্য নেতাদের আবেদন কেন রিজেক্ট হয়েছে, খালেদারটাও রিজেক্ট হবে বুঝতে পেরেছে। বুঝতে পেরেই তারা হাইকোর্টের শুনানিতে টালবাহানা করছে। ইতোমধ্যে যারা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা নির্বাচন করতে পারছেন না। খালেদাও পারবেন না।’
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হবে কি-না, এ বিষয়ে খালেদার আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল বলে জাগো নিউজকে বলেন, সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে আলোচনা করে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা এ বিষয়ে তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। যদি যথা সময়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত (স্টে) করেন তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এটাই হলো বাস্তবতা।
Advertisement
অন্যদিকে, দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, দণ্ড নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সাংবিধানিক কোনো সুযোগ নেই। সংবিধানের ৬৬(২)-ঘ-অনুযায়ী প্রার্থিতা পাবেন না।
তিনি আরও বলেন, আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত (স্টে) করলে হবে না, বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড থেকে খালাস দিলে তবেই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এটাই বাস্তবতা।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৭ বছর মোট ১৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যেই সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তিনটি আসনে প্রার্থী হন তিনি। এগুলো হলো ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও ৭। তবে, তার প্রার্থিতা রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতিল করে দেন। পরে নির্বাচন কমিশনও সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। এরপর হাইকোর্টে রিট করেন তিনি।
এফএইচ/জেএইচ/এমকেএইচ