খেলাধুলা

ফ্লোরিডা কি ঘুরে আসবে ঢাকায়?

একটা সময় ছিল, যখন একবার পিছিয়ে পড়লে আর সামনে এগুতে পারতো না টাইগাররা। কোন টুর্নামেন্ট বা সিরিজে শুরুতে ব্যাকফুটে চলে গেলে এক সময় রীতিমত অন্ধকারে তলিয়ে যেত বাংলাদেশ। ব্যর্থতার ষোলকলা হতো পূর্ণ। কিন্তু সময়ের প্রবাহতায় বদলেছে দৃশ্যপট। পথ চলতে চলতে এখন ঘুরে দাঁড়াতে শিখেছে টাইগাররা। পিছিয়ে পড়েও প্রাণপন লড়ে কঠিন সংগ্রাম করে আবার কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়-তাও ভালোই শিখেছেন মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহরা।

Advertisement

২০১৫ সালে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার মত পারক্রমশালী ও কঠিন প্রতিপক্ষর বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে শুরুতে পিছিয়েও শেষ পর্যন্ত সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দেখানো দিয়েই শুরু টাইগারদের ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা। তারই ধারাবাহিকতায় এই তো তিন মাস আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে শুরুতে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত দারুণ লড়ে ২-১ ‘এ সিরিজ জিতে হাসিমুখে দেশে ফিরে সাকিব আল হাসানের দল।

এবার ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ঠিক পিছিয়ে পড়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়ে এনেছে সাকিব বাহিনী। এখন টাইগারদের সামনে আবার ঠিক একই ব্যবধানে (২-১) সিরিজ বিজয়ের হাতছানি। এজন্য দরকার আগামী ২২ ডিসেম্বর শনিবার শেরে বাংলায় শেষ ম্যাচে জয়। কাল জিততে পারলেই সিরিজ হয়ে যাবে সাকিবদের।

এ ম্যাচের আগে তাই ঘুরে ফিরে একটি কথাই উঠছে, এবার ফ্লোরিডার স্মৃতি কি ফিরে আসবে ঢাকায়? সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, লিট, সৌম্য, মোস্তাফিজ ও মিরাজরা কি ঢাকাকে ফ্লোরিডায় রূপান্তরিত করতে পারবেন? শেষ পর্যন্ত কি হবে, তা সময়ই বলে দিবে। তবে লক্ষ্য কিন্তু তেমনই। এখন অবধি দৃশ্যপট ও চালচিত্রে মিল বা সাদৃশ্য আছে।

Advertisement

এবার গত ১৭ ডিসেম্বর সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে নিজেদের খুঁজে পায়নি টাইগাররা। ৮ উইকেটে হেরেছে। ৮ উইকেটে হারটাই সব নয়। হারের ধরণ ছিল যাচ্ছেতাই। টাইগারদের পারফরমেন্সও ছিল শ্রীহীন, অনুজ্জ্বল। অধিনায়ক সাকিব ৬১ (৪৩ বলে) ছাড়া আর কারো ব্যাট কথা বলেনি। মাহমুদউল্লাহ (১২) আর আরিফুল (১৭) শুধু দুই অংকে পৌঁছুতে সক্ষম হন। ব্যাটিং ব্যর্থতায় মাত্র ১২৯ রানেই থামে টাইগাররা। এরপর শাই হোপ, এভিন লুইস, নিকোলাস পুরান ও কিমো পলের ব্যাটিং তান্ডবে জবাবে ক্যারিবীয়রা ১০.৫ ওভারে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।

একইভাবে তিন মাস আগে (৩১ জুলাই) ক্যারিবীয় দ্বীপ সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ক্যারিবীয়দের দাপুটে নৈপুণ্যের সাথে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ৭ উইকেটে হার মেনেছিল সাকিবের দল। দুই ওপেনার তামিম-সৌম্য ফিরে যান ০ রানে। লিটন (২৪), সাকিব (১৯), মুশফিক (১৬), মাহমুদউল্লাহ (৩৫), আরিফুল (১৫) ও মিরাজ (১১) কারো ব্যাটই কথা বলেনি। বাংলাদেশ করতে পারে মাত্র ১৪৩। লাঞ্চের সময় শুরু হয় বৃষ্টি। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১১ ওভারে ৯১ রানের লক্ষ্য মাত্রা বেঁধে দেয়া হয়। ক্যারিবীয়রা ৯.১ ওভারে মানে ১১ বল আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। ডাকওয়ার্থ লুইস ম্যাথডে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হয় ৭ উইকেটে জয়ী।

তার পরে কাল যেমন দারুণভাবে জ্বলে উঠেছে সাকিবের দল, কাকতালীয়ভাবে ফ্লোরিডায় দ্বিতীয় ম্যাচেও ঠিক একই ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কৃতিত্ব আছে টাইগারদের ।

দিনটি ছিল ৪ আগস্ট। ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ (১৭১ /৫) ১২ রানে (ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১৫৯/৯) জয়ী হয়। গতকাল ২০ ডিসেম্বর যেমন লিটন, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ জ্বলে উঠে দলকে ৩৬ রানের দারুণ জয় উপহার দিয়েছেন; তিন মাস আগে প্রায় একইভাবে ম্যাচ জয়ের রূপকার ছিলেন তামিম ইকবাল (৪৪ বলে ৭৪ রান করে ম্যাচ সেরা) ও সাকিব আল হাসান (৩৮ বলে ৬০)।

Advertisement

এবার মানে কাল শেরে বাংলায় সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ জুটির ৪২ বলে তোলা ৯১ রানের পার্টনারশিপে ২০০ ‘র ঘরে পৌঁছে বাংলাদেশ। একইভাবে ৪ আগস্টের ওই ম্যাচে চতুর্থ উইকেটে তামিম ও সাকিবের ৯০ রানের পার্টনারশিপ (৮.২ ওভারে ) বাংলাদেশকে ১৭০ ‘র ঘরে নিয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিন বাঁহাতি বোলার- পেসার মোস্তাফিজ (৩/৫০) আর স্পিনার সাকিব (২/১৯) ও নাজমুল অপুর (৩/২৮) সাড়াশি বোলিংয়ে ১২ রানের জয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

ঠিক পরদিন মানে ৫ আগস্ট শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ী হয় ডিএল ম্যাথডে ১৯ রানে। ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন লিটন দাস, ৩২ বলে ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়ে। এছাড়া অধিনায়ক সাকিব ২২ বলে ২৪ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অপরাজিত ৩২) অবদান রাখলে বাংলাদেশ পায় ১৮৪ রানের (৫ উইকেটে) লড়িয়ে পুঁজি।

এরপর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ১৭.১ ওভারে টার্গেট দাড়ায় ১৫৫। কিন্তু কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ (৩/৩১) আর সাকিবের (১/২২) মাপা ও কার্যকর বোলিংয়ের মুখে ক্যারিবীয়রা ১৭.১ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৫ রানের বেশি করতে পারেনি।

বৃহস্পতিবার শেরে বাংলায় একদম টিম পারফমেন্সের অনুপম প্রদর্শনীতে মাঠ মাতানো এবং ৩৬ রানের দারুণ জয়ে সিরিজ বিজয়ের পূর্বাভাস টাইগারদের। যারা বলেন, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ভালো না। কখন, কোথায় কি করতে হবে, ব্যাটিং-বোলিংয়ের শুরু ও শেষটায় কি কি করণীয়; এখনো বুঝে উঠতে পারেনি, ঠিকমত জানেনা-পারেনা। কাল তারা চুপ মেরে গেছেন। তাদের সবার মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছেন লিটন, সৌম্য, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহরা। একদম ছক বাঁধা ক্রিকেট। সাজানো গোছানো ব্যাটিং। তাও বলে কয়ে।

আগের দিন সৌম্য সরকার জানিয়ে দেন, ‘আমরা সিলেটের মত পাওয়ার প্লেতে আর বেশি উইকেট খোয়াতে চাই না। বড়জোর এক উইকেট হারাতে চাই।’ বাস্তবেও হয়েছে তাই। পাওয়ার প্লে‘র প্রথম ৬ ওভারে এক উইকেটে ৬১। পরের ১৪ ওভারে দেড়শো। যোগফল ২১১।

প্রথম উইকেটে তামিম-লিটন ওভার পিছু প্রায় ১০ রান করে তুলে ৪.১ ওভারেই ৪২ এনে দেন। তারপর সৌম্য আর লিটন দ্বিতীয় উইকেটে ঝড়ের গতিতে (৭ ওভারে ৬৮ রানের জুটি) আর শেষ অবধি সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর ৪২ বলে ৯১ রানের পার্টনারশিপ। তাতেই জয়ের পর্যাপ্ত পুঁজি। এরপর সাকিবের স্পিন ঘূর্ণিতে নিশ্চিত জয়। ‘চ্যাম্পিয়ন’ সাকিবের স্মরণীয় অলরাউন্ডিং নৈপুণ্য এবং টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ম্যাচটিতে এনেছে অন্যমাত্রা।

এমন উজ্জীবিত, উদ্দীপ্ত ও অতি কার্যকর টিম পারফরমেন্সের ম্যাচও শেষ পর্যন্ত সাকিবময় হয়ে আছে। অবশ্য চাঁদের গায়ে কলঙ্কের মত এমন অসাধারন ম্যাচেও সাইফউদ্দীন, আবু হায়দার রনি ও মোস্তাফিজের অতি সাধারণ মানের পেস বোলিং কালো দাগ হয়েই আছে। কাল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে এই পেস বোলারদের জ্বলে ওঠা খুব জরুরী।

ইতিহাস বলছে, ফ্লোরিডায় শেষ দুই ম্যাচেই বাঁহাতি কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ ভালো বোলিং করে জয়ে অবদান রেখেছিলেন। শনিবার শেষ ম্যাচে ফ্লোরিডার সেই মোস্তাফিজের দেখা মিলবে?

এআরবি/এমএমআর/এমকেএইচ