সবাই চেনে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর নামে। অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কে উন্নতি সাধনের উদ্দেশ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই প্রকল্প শুরু করে চীন। আর সেই প্রকল্পের আড়ালেই লুকিয়ে রয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরির পরিকল্পনা। ‘চাঞ্চল্যকর’ এই খবর ফাঁস করল মার্কিন সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস। চাঞ্চল্যকর, কারণ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর হলো চীনের স্বপ্নের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের অংশ। আর এই প্রকল্পকে এত দিন পুরোপুরি বাণিজ্যিক বলে দাবি করে আসছিল বেইজিং।
Advertisement
ভারতের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই এই করিডরের কাজ শুরু করে দিয়েছে বেইজিং আর ইসলামাবাদ। এই রাস্তা ও রেলপথের একটি অংশ যাচ্ছে পাক অধিকৃত কাশ্মিরের ভেতর দিয়ে। পাক অধিকৃত কাশ্মিরকে পাকিস্তানের অংশ বলে মেনে নেয় না ভারত। আপত্তি ছিল সেখানেই। অন্যদিকে চীন ও পাকিস্তানের দাবি ছিল, এই প্রকল্প পুরোপুরি বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে হচ্ছে। তাই ভারতের আপত্তির কোনো কারণ নেই।
ইউরোপ, এশিয়া আর আফ্রিকা জুড়ে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ নামে যে রাস্তা ও রেলপথ বানানোর প্রকল্প চীন শুরু করেছে, ইসলামাবাদকে তার অংশীদার করে নিতেই রাখা হয়েছে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর। চীন থেকে এই রাস্তা ইসলামাবাদ ও পেশোয়ার হয়ে সরাসরি পৌঁছবে গ্বাদর সমুদ্রবন্দর। এই রাস্তা বানাতে পারলে নিশ্চিতভাবেই সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে বেইজিং। এর ফলে পশ্চিম চীনের সঙ্গে আরব সাগর যুক্ত হয়ে যাবে। অর্থাৎ ভারত মহাসাগরের ওপর নির্ভরতা কমবে চীনের।
নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, প্রকাশ্যে বাণিজ্যিক বোঝাপড়ার কথা বলা হলেও চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের পেছনে লুকিয়ে আছে যুদ্ধবিমান বানানোর গোপন বোঝাপড়া, যার অংশীদার চীন এবং পাকিস্তান। যে কারণে এই প্রকল্পে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করছে চীন, যার পরিমাণ এই মুহূর্তে প্রায় ৬,২০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর শুধু যুদ্ধবিমানই নয়, বানানো হবে আরও অনেক অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র এবং যন্ত্রাংশ। এমনটাই দাবি করা হয়েছে মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
Advertisement
সামরিক যন্ত্রাংশ বানাতে এই বছরের শুরুতেই পাকিস্তান বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন চীনা প্রতিনিধিরা। সেই বৈঠকে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের মধ্যেই একটি বিশেষ অর্থনেতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলেই চীনের সহায়তায় বানানো হবে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, অত্যাধুনিক রাডার যোগাযোগ ব্যবস্থার বিভিন্ন স্টেশন এবং অন্যান্য সামরিক যুদ্ধাস্ত্র। তবে ঠিক কী ধরনের যুদ্ধবিমান বানাতে যাচ্ছে চীন ও পাকিস্তান তা উল্লেখ করা হয়নি নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
চীনের পরিকল্পনা, পাকিস্তানকেই যুদ্ধবিমান বানানোর ঘাঁটি বানানো, যাতে পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলো থেকে সহজে বিমান বিক্রির বরাত পাওয়া যায়। শুধু যুদ্ধবিমানই নয়, পাকিস্তানের মাটিকে ব্যবহার করে অত্যাধুনিক উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সামরিক ডুবোজাহাজ তৈরির পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করে ফেলেছে চীন। সে ক্ষেত্রে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের প্রান্তিক বন্দর গ্বাদরকেই সামরিক ডুবোজাহাজের জ্বালানি ভরার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করবে বেইজিং।
অসামরিক প্রকল্পের আড়ালে চীনের এই সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার খবর ফাঁস হওয়ায় সারা দুনিয়ার সঙ্গে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রও। কারণ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর দু’টি দেশের মধ্যে হলেও মূল প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এ জড়িয়ে আছে ইউরোপ-এশিয়া-আফ্রিকা, এই তিনটি মহাদেশ। দীর্ঘ দিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই রাস্তা ও রেলপথ বানানোর নামে লুকিয়ে আছে চীনের সামরিক পরিকল্পনা। চীনকে নিয়ে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে, এই বার্তা বিভিন্ন সময়ই সারা দুনিয়াকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এনএফ/এমএস
Advertisement