ক্যাম্পাস

নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ সত্ত্বেও শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করলেন ভিসি!

নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ সত্ত্বেও গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে দুজন শিক্ষকের নিয়োগ চূড়ান্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার নাসির উদ্দিন। গত ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নিয়ম ভেঙে হঠাৎ করে নিয়োগ কমিটির সভা ডেকে নিজেই দুজন শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপাচার্য। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য, বিষয় বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়টির সিন্ডিকেট বরাবর এই শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ দাবি করে অভিযোগ করেছেন। একই অভিযোগ করে গত ১৭ ডিসেম্বর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরও একটি চিঠি দেন বলে জানা গেছে। সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘গত ১৫ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নিয়োগ বোর্ডের দিন ধার্য করা হয়েছিল। প্রার্থীদের কয়েকজন প্রার্থীর অনার্স ও মাসটার্সের ফল ভালো থাকা সত্ত্বেও কম যোগ্যতা সম্পন্ন এবং জামাত-শিবিরের একাধিক প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন উপাচার্য। কিন্তু নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের প্রতিবাদের কারণে উপাচার্য সফল হননি। অন্যদিকে, এই বোর্ড বসার আগেই তার পছন্দের জামাত-শিবিরের একজন প্রার্থীকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর ওই শিক্ষককে খণ্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যা আইন পরিপন্থী।’

Advertisement

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘নিয়োগ বোর্ডের বিষয় বিশেষজ্ঞদের কাছে কোনো অফিসিয়াল চিঠি না দিয়েই ১৭ ডিসেম্বর নিয়োগ বোর্ড বসানো হয়েছে। ১৬ তারিখ বিকালে হঠাৎ ফোন করে বিষয় বিশেষজ্ঞদের জানানো হয়- ১৭ তারিখ সন্ধ্যায় নিয়োগ বোর্ড বসবে। কিন্তু অফিসিয়াল চিঠি ছাড়া এবং বোর্ড বসার মাত্র একদিন আগে ঢাকা ও সিলেটে অবস্থানরত দুজন বিষয় বিশেষজ্ঞকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বলা রীতিমতো অযৌক্তিক।’

তাছাড়া বোর্ড বসলেও বিষয় বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতেই শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত করার বিধি রয়েছে। অথচ আমাদের কোনো মতামত নেয়া হয়নি। এ ছাড়া নিয়োগ বোর্ড বসার আগে প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই বাছাইয়ের জন্য তাদের সিভি (জীবন বৃত্তান্ত) পাঠানো হয়নি।

চিঠিতে বর্তমান ভিসির শিক্ষক নিয়োগে এমন সেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়টি তোলা হবে বলে জানান তিনি।

Advertisement

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক জিনাত হুদা জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৭ তারিখ বোর্ড বসার মাত্র একদিন আগে আমাকে ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল গণিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বলা হয়, কোনো অফিসিয়াল চিঠি দেয়া হয়নি। আমরা সেখানে যেতে ব্যর্থ হই। কিন্তু আমাদের কাছে কোনো মতামতও নেয়া হয়নি। আমরা দুজন বিষয় বিশেষজ্ঞ বোর্ডে অনুপস্থিত ছিলাম। অথচ উপাচার্য অনিয়ম করেই দুজনকে নিয়োগ দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘এর আগেও উপাচার্য আরও কয়েকটি বিভাগের নিয়োগ অনিয়ম করে দিতে চেয়েছিলেন পরে একটি নিয়োগ বাতিল হয়েছিল সিন্ডিকেট মিটিংয়ে।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার নাসির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়নি। যোগ্য প্রার্থীদেরকেই নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কারো কারো পচ্ছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে না পারায় নানা অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এসব সত্য নয়, যোগ্য ও মেধাবীদের মধ্য থেকে দুইজনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।’

তবে এই নিয়োগ বোর্ডের অন্য সদস্য ও বিভাগটির চেয়ারম্যান মনজুর রশিদ বলেন, ‘বিষয় বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত না থাকেও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া এই নিয়োগটির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকলে সিন্ডিকেট সেটি দেখবে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই।’

Advertisement

এমএইচএম/এমবিআর/জেআইএম