রাজনীতি

শামীম ওসমানের আসনে মাঠে নেই বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীকে কোণঠাসা করে ঐক্যফ্রন্ট থেকে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমি মনোনয়ন বাগিয়ে নিলেও নির্বাচনী মাঠে কাউকে কাছে পাচ্ছেন না। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বাড়ি বাড়ি দৌড়ঝাঁপ চালিয়েও এখন পর্যন্ত কোনো নেতার সাড়া পাননি কাসেমি। বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে না নামায় একা একাই চলছেন ঐক্যফ্রন্টের এ প্রার্থী।

Advertisement

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শাহ আলম। বিগত সময়ে এমপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর কাছে পরাজিত হন তিনি। পরাজিত হওয়ার পর ফতুল্লা থানা বিএনপি সভাপতির দায়িত্ব পান। এরপর থেকে দলকে সংগঠিত করতে নিরলস ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। আর দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশা নিয়ে শাহ আলম কেন্দ্রীয়ভাবে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে আসছিলেন। একই আসনে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন দলীয়ভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। তিনিও মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে শীর্ষ মহলে দৌড়ঝাঁপ চালান।

তফসিল ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে দলীয়ভাবে মনোনয়নের চিঠি দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শাহ আলমকে। আর গিয়াস উদ্দিন দলীয় মনোনয়নের চিঠি না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। হঠাৎ বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীদের বাদ দিয়ে ঐক্যফ্রন্ট থেকে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমিকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। একজন অপরিচিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ায় রাগে ক্ষোভে কাসেমির পক্ষে বিএনপির কেউ মাঠে নামছেন না বলে বিএনপির অনেক নেতাই জানিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মধ্যে ফতুল্লা থানা এলাকা বিএনপির ঘাঁটি হলেও নির্বাচনী মাঠ এখনো আওয়ামী লীগের দখলে। বিএনপি নেতাকর্মীরা কাসেমীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নামছেন না। শুধু রাস্তায় পোস্টার ও মাইকিং করা ছাড়া ধানের শীষের মাঠ শূন্য। দেখে মনে হচ্ছে না নৌকার প্রার্থী শামীম ওসমানের আসনে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী নির্বাচন করছেন।

Advertisement

বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তারা একজন দুর্বল প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে শামীম ওসমানের মতো প্রার্থীর সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য মাঠে নামতে রাজি নয়। লড়াই করতে গিয়ে কোনো নেতাকর্মী বিপদে পড়লে কাসেমির মতো ব্যক্তিকে কাছে পাবে না-এমন আশঙ্কায় নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারাও।

ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, মামলা-হামলার ভয়ে বেশির ভাগ নেতাকর্মী রাতে বাসায় থাকতে পারেন না। অনেকে আগে থেকেই এলাকা ছাড়া। তফসিল ঘোষণার পর তারা মনে করেছিলেন নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় অবস্থান করে দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করতে পারবেন।

শামীম ওসমানের আসনে নির্বাচন করতে মাঠে নেমে কতটুকু ভরসা পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যার কারণে কেউ মাঠে নামতে চাইছে না। এ ছাড়া নির্বাচন করতে অনেক হিসাব-নিকাশ থাকে সেটাও কাসেমির কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচনের আর মাত্র ৯ দিন বাকি। এখন পর্যন্ত কোনো থানা কিংবা ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে টানতে পারছেন না তিনি।

কাসেমির পক্ষে নির্বাচনে মাঠে নামবেন কিনা-জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রশ্ন করা হলে কেউ সাহস করে কথা বলতে রাজি হননি।

Advertisement

থানার একজন শীর্ষ নেতাকে ফোন করলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘ভাই কাসেমির পক্ষে নির্বাচন করব কিনা এ ধরনের প্রশ্ন কইরেন না। নির্বাচন করার পরিবেশ নাই। বিএনপির কোনো প্রার্থী দিলে ভয়কে উপেক্ষা করে নির্বাচনে মাঠে নামার চিন্তা-ভাবনা করতাম। কিন্তু শামীম ওসমানের সঙ্গে লড়াই করব কার পক্ষ নিয়ে তা ভাবার বিষয়।’ এরপর তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।

এদিকে নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমির ফতুল্লার মুসলিমনগরের বাড়িতে একাধিক সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। তাকে নিয়ে যেন কেউ ষড়যন্ত্র করতে না পারে সে জন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তিনি।

জানতে চাইলে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমি বলেন, ‘সারাদেশেই বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা হচ্ছে। আর আমার নির্বাচনী এলাকাও এর বাইরে নয়। নারায়ণগঞ্জেও হামলা মামলার ভয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে থাকতে পারছে না। যারা আমার সঙ্গে জনসংযোগে মাঠে নামছে তাদের তালিকা করে বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপির কোনো নেতাকর্মী পুলিশের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছে না। ভোটের সময় ঠিকই নেতাকর্মীরা ভোট দিয়ে বিপ্লব ঘটাবে।’

এনডিএস/জেআইএম