নৌকার দুর্গখ্যাত সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর ও সদরের ৫ ইউনিয়ন) আসনে এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠে সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেয়া হয়েছে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপাকে।
Advertisement
দলের নীতি নির্ধারকদের বিশ্বাস ছিল জনপ্রিয় এই শিল্পী নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করবেন। কিন্তু কাজীপুরের মেয়ে দাবি করা এই কণ্ঠশিল্পীকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত ভোটাররা চোখেই দেখেননি। তার পক্ষে টানানো হয়নি পোস্টার, ব্যানার কিংবা ফেস্টুনও।
গত কয়েকদিন তিনি সিরাজগঞ্জ শহরের হোসেনপুরে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বাসায় অবস্থান করলেও নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাননি। এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও ভোটারদের মাঝে চলছে নানা সমালোচনা। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রচারণায় নামতে মুখিয়ে থাকলেও গত ১১ দিনে খোদ প্রার্থীর দেখা না পেয়ে তারা তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
কাজীপুরে কনকচাঁপার বাড়ি না থাকায় কর্মী সমর্থকরা তাকে খুঁজেও পাচ্ছেন না। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা রিটার্নিং অফসারের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে না পেয়ে জীবননাশের আশঙ্কায় নিজ নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী বগুড়ায় আশ্রয় নেন এবং গত ১৭ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বগুড়া পর্যটন মোটেলে সংবাদ সম্মেলনও করেন।
Advertisement
কাজীপুর উপজেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা লাকী খাতুন জানান, এক মাসের মতো হয়ে গেল কনকচাঁপা এলাকায় আসেননি, ভোটও চাননি। আমাকে কাজীপুরের লোকজন কনকচাঁপা কোথায় জানতে চাইলে কোনো জবাব দিতে পারি না।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক’দিন আগে সিরাজগঞ্জ শহরে টুকু সাহেবের বাড়িতে আমাদের নিয়ে নির্বাচনী মিটিং করলেন কনকচাঁপা। গাড়ি ভাড়া করে নেতাকর্মীরা তার মিটিংয়ে এলেন। অথচ সেদিন অধিকাংশ কর্মীরা খাবারের প্যাকেট না পেয়ে রাগ করে চলে যান।
কাজীপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান বাবলু বলেন, আমাদের মতো আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে প্রার্থী যদি না বলে তাহলে কর্মীরা কিভাবে প্রচারণায় নামবে? কাজীপুরে তার কোনো ঠিকানা (বাড়ি) পর্যন্ত নেই, যেখানে গিয়ে নেতাকর্মীরা তার দেখা পাবে।
কাজীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম বলেন, ২০১৪ সালে কনকচাঁপাকে আমি দেখেছিলাম। আমি তার প্রোগ্রাম করে দিয়েছিলাম। এবার দলীয় মনোনয়ন পেলেও আমার সঙ্গে এখন পর্যন্ত উনি কোনো যোগাযোগ করেননি।
Advertisement
কাজীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা বলেন, আমি নিজেও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। দল আমাকে না দিয়ে কনকচাঁপাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো ক্ষোভ নেই। তিনি এলাকায় এলে আমরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করবো। শোনা যাচ্ছে ২২ ডিসেম্বরের আগে তিনি কাজীপুরে আসবেন না।
এ বিষয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী রুমানা মোর্শেদ কনক চাঁপা বলেন, আমি ১০ ডিসেম্বর থেকে কাজীপুরের পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ দিয়ে ঘুরছি। আওয়ামী লীগের হুমকি-ধামকির ভয়ে কাজীপুরে ঢুকতে পারছি না। হুমকির বিষয়গুলো আমি জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকাকে মোবাইলে এবং লিখিতভাবে অবগত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপর আস্থা না পেয়ে আমি জীবননাশের ভয়ে পার্শ্ববর্তী জেলায় আশ্রয় গ্রহণ করে সংবাদ সম্মেলন করেছি।
দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এমন প্রসঙ্গে কনক চাপা বলেন, আমি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেককেই ফোন দিয়েছি। দুই একজনকে ফোনে পাইনি। তাদের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করছি।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এফএ/আরআইপি