শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সাবেক প্রধান নির্বাহী মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরীকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করলেন বিশিষ্টজনরা। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ীর স্মরণসভার আয়োজন করে ঢাকাস্থ নাটোর জেলা সমিতি এবং বৃহত্তর রাজশাহী সমিতি। সভায় সাবেক আইজিপি ড. এনামুল হক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, দেশ-বিদেশে প্রাণ’র পণ্য ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমজাদ খান চৌধুরী এই গ্রুপকে অনেক উপরে নিয়ে গেছেন। উত্তরবঙ্গকে অবহেলিত মনে হলেও উত্তরবঙ্গ থেকে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এই প্রাণ পুরুষের জন্ম হয়েছে। আমজাদ খান চৌধুরী বহু লোকের জীবন ধারণের সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি ব্যবসায় লাভ ক্ষতি দেখতেন না। লাভ ক্ষতি না দেখে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করে গেছেন। উত্তরবঙ্গের জন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন। এ জন্য তাকে ভুলবো না। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে অবহেলিত কথাটি যেন আর না থাকে সেজন্য সবাইকে নিজেদের অবস্থানের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব) মাহতাব উদ্দিন বলেন, আমজাদ খান চৌধুরীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর চাকরি জীবনে ২/৩ বছর কাজ করেছি। যুদ্ধের পর ক্যাম্পে ফিরে যাই। ১৯৭৪ সালে চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর ১৯৮৩ সালে আমজাদ খান চৌধুরী একসঙ্গে ব্যবসা করার অনুরোধ করেন। প্রথমে আমরা আবাসন খাতের ব্যবসা শুরু করি। এর দুই বছর পর কৃষিজাত পণ্যের ব্যবসায় মনোযোগী হই। তখন নরসিংদীতে আমরা এক বিঘা জমিতে বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করি। এসব পণ্য রাজধানীর শেরাটন হোটেলসহ বিভিন্ন হোটেলে সরবরাহ করতাম। পরবর্তীতে আমরা বাজারজাত করার চিন্তা করি। এ লক্ষ্যে ঘোড়াশালে ফ্যাক্টরি তৈরি করি। সেখান থেকেই মূলত আমাদের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে আমাদের ব্যবসা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পর শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি এটা করবেন এটা কল্পনাও করা যায়নি। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশের মানুষের জন্য তিনি অনেক কিছু করেছেন। বিশেষ করে কৃষকের জন্য তিনি অনেক করেছেন।অনুষ্ঠানে কর্ণেল (অব.) সাইফুর রশিদ বলেন, টাঙ্গাইলে একসঙ্গে আমরা কাজ করেছিলাম। মাসিক ডিনার পার্টিতে আমজাদ খান চৌধুরী তাঁর সহধর্মীনীকে নিয়ে অংশ নিতেন। তিনি একজন সফল মেজর জেনারেল। অবসর নেয়ার পর বিজনেস সেক্টরে তিনি যেভাবে কাজ করেছেন সেটা অতুলনীয়।সাবেক সচিব আব্দুর রশিদ সরকার বলেন, আমজাদ খান চৌধুরী সফল পুরুষ। তিনি কেবলমাত্র রাজশাহী বা নাটোরের নয়, তিনি পুরো দেশের। তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে দাঁড় করিয়েছেন।গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমজাদ আমার ছোট বেলার বন্ধু ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মিল ছিল। আমার বাবা ও আমজাদ খানের বাবা কলকাতায় চাকরি করতো। ৪৭ সালে দেশ বিভাজনের পর আমাদের দুই পরিবার একসঙ্গে ঢাকায় এসে একই এলাকায় বসবাস শুরু করে। পরবর্তীতে একই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছি। হঠাৎ করে আমজাদ খান সেনাবাহিনীতে চলে গেল। সেখান থেকে অবসর নিয়ে ব্যবসার চিন্তা করে। কিন্তু আমি বলেছিলাম পারবে কি-না? কিন্তু পেরেছে।তিনি আরো বলেন, আমজাদ খান দেশ গড়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। কিন্তু বাঙালি সব সময় তার কৃতি সন্তানকে স্মরণ রাখে না। স্মরণ রাখার দায়িত্ব তাঁর ছেলে আহসান খান চৌধুরীর। যে লোকটা আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন তাকে প্রতি বছরই স্মরণ করতে হবে।শিল্পের পাশাপাশি তাকে শিক্ষায় অবদান রাখতে হবে। চিকিৎসা সেবার উন্নয়নে কাজ করতে পারে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করতে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান খান চৌধুরীকে আহ্বান জানান তিনি।নাটোরের মহিলা সংসদ শাহিন মনোয়ারা হক বলেন, আমজাদ খান চৌধুরীর অত্যন্ত সফল। তিনি কৃষক ও কৃষির উন্নয়ণে কাজ করে গেছেন। তিনি সারাবিশ্বে এক পরিচিত নাম।সভায় কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের পথিকৃৎ মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এতে ঢাকাস্থ নাটোর জেলা সমিতি এবং বৃহত্তর রাজশাহী সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।এসআর/এমএম/আরএস/এএইচ/এমএস/এমএএস/এএ
Advertisement