প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার পরপরই মানুষের দ্বারে দ্বারে খবরের কাগজ পৌঁছে দেন তিনি। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে পত্রিকা বিলি করাই তার কাজ। যে মানুষ সারাক্ষণ খবর নিয়ে ব্যস্ত, সে মানুষটির খবর ক’জন রাখেন? যার কথা বলছিলাম, তিনি চাঁদপুরের প্রবীণ হকার রাখাল চন্দ্র দাস। তার সংগ্রামী জীবনের গল্প শোনাচ্ছেন রিফাত কান্তি সেন-
Advertisement
শুরু থেকেই সংগ্রাম: বয়স সত্তরের কোটায় পৌঁছেছে। চেহারায় বয়সের ছাপ। স্বাধীনতার পর চাঁদপুর এসেছিলেন। এর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে ফিরে এসে দেখেন তার বাস্তুভিটা নেই। বাধ্য হয়ে ঠাঁই নেন চাঁদপুর শহরে। ভাঙা এক ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টে চলে তার সংসার।
নানা রকম কাজ: শুরু থেকে এ পর্যন্ত নানা রকম কাজ করেছেন। কখনো আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে, কখনো আবার হরেক মাল বিক্রি করেছেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কর্মক্ষমতাও লোপ পেতে শুরু করে। তাই বেছে নেন পত্রিকা বিলির কাজ। গত আট বছর ধরে মানুষের বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ পৌঁছে দেন পরম যত্নে।
> আরও পড়ুন- বাদাম বিক্রির টাকায় ভাইকে পড়াচ্ছেন মোজাহার
Advertisement
পত্রিকা বিক্রি: এজেন্টদের কাছ থেকে পত্রিকা কিনে পাঠকের কাছে বিক্রি করাই এখন তার প্রতিদিনের কাজ। যে টাকা উপার্জন হয়, তা দিয়ে কোনমতে টেনেটুনে সংসার চলে। বয়স বেড়ে যাওয়ায় ভারী কাজও করতে পারেন না। কোন সাহায্য-সহযোগিতাও পান না। বাসা ভাড়া দিতে বেশ কষ্ট হয়। তার ওপর ক’দিন আগে অগ্নিকাণ্ডে ঘরের কিছু মালামাল পুড়ে যায়।
অপ্রকাশিত গল্প: কাগজে অনেক মানুষের গল্প ছাপা হয়। শুধু তার মতো খবরের পেছনের মানুষগুলোর খবর ছাপা হয় না। প্রতিদিন কত খবর পৌঁছে দেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। সবাইকে খুশি করেন তিনি। খবর পৌঁছান সঠিক সময়ে। কিন্তু নিজের জীবনের খবরটাই তিনি ভুলে যান।
সবার পরিচিত: এলাকার নামিদামি লোকেরা তাকে এক নামেই চেনেন। পত্রিকা বিলি করতে গিয়ে কত লোকের সাথেই তো পরিচয় হয় তার। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে নিজের জীবনের অসহায়ত্বের কথা কখনো বলা হয়ে ওঠে না। তাই হয়তো নামিদামি লোকেরা তার কষ্টের কথা জানতেও পারেন না।
> আরও পড়ুন- অবসরে নারিকেল-চাল ভাজা বিক্রি করেন শরীফুল
Advertisement
অভাব ফুরায় না: মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে ফিরে ভিটেমাটি হারিয়ে দিশেহারা হন রাখাল। সংসারের অবস্থা তখন থেকেই নাজুক। কখনো কখনো খেয়ে-না খেয়ে দিন পার করেছেন। সেই সব স্মৃতি এখনো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। অভাবের সেই অভিশাপ যেন এখনো শেষ হয় না।
মানবিক দাবি: রাখালের ঘরটি বসবাসের অনোপযোগী। তার দাবি, সরকার তো কতজনকেই ঘর-বাড়ি দেন। তাকেও যদি একটি ঘর দিতেন। তাহলে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতেন। তিনি এবং তার ছেলে যে টাকা উপার্জন করেন, তাতে সংসারই চলে না। কিভাবে বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ যোগাবেন! তাই বিত্তশালীদের কাছে মানবিক আবেদন জানিয়েছেন।
এসইউ/এমকেএইচ