আইন-আদালত

রিট খারিজ, নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না খালেদা জিয়া

তিন আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে যে আবেদন তার আইনজীবীরা করেছিলেন, তাও খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

Advertisement

মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসানের একক বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের সুযোগ থাকল না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, তারা এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবেন।

এর আগে মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসানের কোর্টে অনাস্থা জানিয়ে লিখিত আবেদন দাখিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এরপর আদালত তাদের এই অনাস্থা আবেদন খারিজের আদেশ দেন এবং প্রার্থিতা চেয়ে খালেদা জিয়ার রিটের ওপর শুনানি করতে বলেন।

এ পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল আদালতকে বলেন, আমরা এই কোর্টের ওপর অনাস্থা জানিয়েছি। আপনি আমাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এখন আমরা এই আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে যাবো। তা সত্ত্বেও রিটের শুনানি করতে বলছেন কেন?

Advertisement

এরপর আদালত নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে খালেদা জিয়ার রিট আবেদনের বিরুদ্ধে শুনানি করতে বললেন। এরপর মাহবুবে আলম শুনানি শুরু করতে থাকলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত বর্জন করে বেরিয়ে আসেন।

খালেদা জিয়ার মনোনয়নের বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে বিভক্ত আদেশ হওয়ার পর গত সপ্তাহে এই একক বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বে একক বেঞ্চে গত বৃহস্পতিবার শুনানি শুরু হলে খালেদার আইনজীবীরা বলেছিলেন, ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে এ বেঞ্চের ওপর তাদের আস্থা নেই। এরপর আদালত শুনানি মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি রেখেছিলেন।

মঙ্গলবার আবার বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চে উঠলে লিখিতভাবে অনাস্থা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। আদালত ওই অনাস্থার আবেদন খারিজ করে রিট আবেদনের ওপর শুনানি শুরু করতে বললে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, মীর হেলাল, অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন ও ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমানসহ অন্যান্য আইনজীবীরা আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।

এরপর আদালত নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মাহবুবে আলম এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজুর বক্তব্য শুনে খালেদা জিয়ার আবেদন তিনটি খারিজ করে দেন।

Advertisement

পরে খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদেশের কপি দেখে আলোচনা করে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবো। অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, রিট খারিজের ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের আর সুযোগ থাকল না।

দুটি দুর্নীতির মামলায় মোট ১৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তাকে ফেনী-১ এবং বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে প্রার্থী করেছিল বিএনপি।

কিন্তু নভেম্বরের শেষে হাইকোর্টে এক মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়।

এরপর ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে দুই বছরের বেশি সাজার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বাতিল করে দেয়া হয়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও বিফল হন। এরপর তারা রিট আবেদন নিয়ে আসেন হাইকোর্টে।

কিন্তু খালেদা জিয়ার প্রার্থীতা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা রিট আবেদনের ওপর গত ১১ ডিসেম্বর দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত এ আদেশ দেন। যার ফলে মামলাটির নথি প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। এরপর মামলাটি শুনতে বিচারপতি জে বি এম হাসানের একক বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি। কিন্তু এই আদালতের খালেদা জিয়ার আইনজীবী শুনানি করতে অনাস্থা প্রকাশ করলে আদালত তা লিখিতভাবে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

কিন্তু গত ১৭ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতকে জানান, এই কোর্টের ওপর তাদের অনাস্থা আবেদনপত্রটির এফিডেভিট করা সম্ভব হয়নি। তাই আবেদনপত্রটির এফিডেভিট করতে আদালতে তারা সময় প্রার্থনা করলে আবেদনের শুনানি আজ মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয়। এরপর মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) আবেদনটি খারিজ করেন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক নির্ধারিত হাইকোর্টের একক বেঞ্চ।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিলের শুনানির পর সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৩টি আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত দেন। শুনানিতে প্রার্থীতা বহালের পক্ষে মত দেন মাহবুব তালুকদার। এর বিপক্ষে মত দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৪ জন।

পরে প্রার্থিতা বাতিল করা রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্ত ও নির্বাচন কমিশনের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার পক্ষে গত ৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তিনটি রিট দায়ের করা হয়।

এফএইচ/এআর/এনএফ/জেএইচ/জেআইএম/এমএস