মানুষের তৈরি যেসব সামগ্রী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় তার অন্যতম সিমেন্ট। পানির পরেই এই জিনিসটি ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশি। কংক্রিটের প্রধান উপাদান এই সিমেন্ট আমাদের চারপাশের পরিবেশ তৈরিতে রেখেছে বড় ভূমিকা, কিন্তু আমরা কি জানি যে এটি প্রচুর পরিমাণে কার্বনও নির্গমন করে থাকে। যুক্তরাজ্যের এক গবেষণা সংস্থা চ্যাটাম হাউস বলছে, সারা বিশ্বে যতো কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয় তার ৮ শতাংশের উৎস এই সিমেন্ট।
Advertisement
বলা হচ্ছে, সিমেন্ট তৈরির শিল্পকে যদি একটি দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাহলে এই খাতটি হবে কার্বন নির্গমনের বিবেচনায় তৃতীয় একটি দেশ যা সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনের জন্যে দায়ী। প্রথম দুটো দেশ হচ্ছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।
বিমান চলাচলের জন্যে ব্যবহৃত জ্বালানী থেকে যতো কার্বন নির্গত হয় (২.৫%) তারচেয়েও অনেক বেশি নির্গত হয় এই বাড়িঘর নির্মাণে ব্যবহৃত এই সামগ্রীটি থেকে। শুধু তাই নয়, কৃষি খাত থেকে নির্গত কার্বনের (১২%) পরিমাণের চেয়েও এটি খুব বেশি পিছিয়ে নেই।
যেসব দেশ সিমেন্ট উৎপাদন করে তার শীর্ষে রয়েছে চীন, তারপরই ভারত। এরপরেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, তুরস্ক ও মিসর।
Advertisement
এই সিমেন্ট শিল্পের নেতারাও পোল্যান্ডে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। প্যারিস চুক্তি অনুসারে নির্গত কার্বনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে সিমেন্টের উৎপাদন কমপক্ষে ১৬ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে।
চ্যাটাম হাউসের গবেষণায় বলা হচ্ছে, সারা বিশ্বে ভবনের সংখ্যা আগামী ৪০ বছরে দ্বিগুণ হবে এবং তার ফলে সিমেন্টের উৎপাদনও ২০৩০ সালের মধ্যে এক চতুর্থাংশ বৃদ্ধি পাবে। অনেকেরই হয়তো ধারণা যে এই সিমেন্ট একটি আধুনিক সামগ্রী যা সাম্প্রতিককালে খুব বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, এর ব্যবহার চলে আসছে গত কয়েক হাজার বছর ধরে।
ধারণা করা হয়, আট হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে কংক্রিটের ব্যবহার শুরু হয়। সিরিয়া ও জর্ডানের ব্যবসায়ীরা জড়িত ছিলেন কংক্রিট বাণিজ্যের সাথে। পরে এই কংক্রিটের ব্যবহারে দক্ষ হয়ে ওঠে রোমানরা। ১১৩ থেকে ১২৫ খৃস্টাব্দে তারা নির্মাণ করে প্যানথিওন।
এখন প্রশ্ন হলো কার্বন নির্গমনের জন্যে কিভাবে দায়ী এই সিমেন্ট। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সিমেন্ট তৈরির সময় যে রাসায়নিক প্রক্রিয়া ঘটে সেসময় প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয়। সিমেন্টের প্রধান উপাদান হচ্ছে ক্লিংকার। এই ক্লিংকার উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় নির্গত হয় সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড।
Advertisement
সিমেন্ট উৎপাদন করতে গিয়ে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় চুনাপাথর এবং মাটি। এগুলোকে প্রথমে চূর্ণ করা হয়। তারপর এর সাথে মেশানো হয় লোহার আকরিক অথবা ছাই। তারপর এই মিশ্রণকে ঢোকানো হয় বিশালাকৃতির একটি সিলিন্ডারের ভেতরে। সেখানে ১,৪৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মিশ্রণটিকে গলানো হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ক্ল্যাসিনেশন। এসময় উপাদানগুলি ভেঙে ক্যালসিয়াম অক্সাইড ও কার্বন ডাই অক্সাইডে পরিণত হয়।
তখন তৈরি হয় ক্লিংকার নামের নতুন একটি উপাদান। এগুলো দেখতে মার্বেল বলের মতো, ধূসর রঙের। তারপর ক্লিংকারগুলোকে ঠাণ্ডা করা হয়। এর সাথে মেশানো হয় জিপসাম এবং চুনাপাথর। তখনই তৈরি হয়ে যায় সিমেন্ট।
এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হওয়ার কারণে বিজ্ঞানীরা এখন বিকল্প পদ্ধতিতে সিমেন্ট উৎপাদনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
এনএফ/জেআইএম