খেলাধুলা

আগের দিনের ‘নেটের ব্যাটিংটাই’ ম্যাচে করলেন টাইগাররা!

প্রথমে টেস্ট আর তার পরে ওয়ানডে সিরিজ হয়েছে। ওয়ানডে সিরিজ আর টি-টোয়েন্টির মাঝে বিরতি ছিল মোটে দু’দিন। তাই সে অর্থে টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং অনুশীলনটা হয়নি। তার আসলে সুযোগও ছিল না।

Advertisement

১৪ ডিসেম্বর সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডের পরদিন মানে ১৫ ডিসেম্বর ছিল ছুটি। তাই টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে সত্যিকার প্র্যাকটিস হয়েছে শুধু রোববার। মানে মোটে একদিন। তাই ওই সেশনের বড় অংশ জুড়ে চললো ‘বিগ ও পাওয়ার হিটিং’ প্র্যাকটিস।

রোববার প্র্যাকটিস সেশনে প্রচুর ‘বিগ হিট’ অনুশীলন করেছিলেন টাইগাররা। বোঝাই গেল চার ও ছক্কার হাঁকানোর কসরত। সবাই ইচ্ছেমত শরীরে যত জোর আছে, তা দিয়ে অল অফ, লং অন আর মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারলেন। তামিম, মুশফিক আর সৌম্যর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বিগ হিট পারফেক্ট হয়েছিল।

ওই তিনজন যেগুলো উইকেটের সামনে তুলে মেরেছেন তার বড় অংশ ম্যাচে ছক্কাই হতো। আর কিছু বিগ হিট হয়তো এক বা দুই ড্রপে সীমানা ওপারে আছড়ে পড়তো।

Advertisement

তামিম, মুশফিক আর সৌম্যর দেখাদেখি দুই পেসার সাইফউদ্দিন আর আবু হায়দার রনিও প্রচুর লফটেড শটস খেলেছিলেন। তার কোনটা পারফেক্ট হলো। আবার কোনটা ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে আকাশে উঠলো। নেটে সবার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ বোঝাই যাচ্ছিল, আসল লক্ষ্য ছিল ‘পাওয়ার হিটিং’। বাতাসে ভাসিয়ে চার ও ছক্কা হাঁকানোর অ্যাপ্রোচ ও কৌশল ঝালাই করে নেয়া।

খেলাটা মাত্র ২০ ওভারের। ১২০ বলে অন্তত গোটা বিশেক ডেলিভারিতে বিগ হিট হাঁকাতে পারলেই ব্যাস; স্কোরলাইন মোটা তাজা হয়ে যায়। টি-টোয়েন্টির আগেরদিন হাত খুলে ব্যাটিং প্র্যাকটিস তাই ঠিকই ছিল। ২০ ওভারের ফরম্যাটের আগের দিন নিশ্চয়ই গাণিতিক বা ব্যাকরণ মেনে ব্যাটিং প্র্যাকটিস হবে না। তা করলেও চলবেও না।

কাজেই প্র্যাকটিসের ধরন ও স্টাইল ঠিকই ছিল; কিন্তু আজ ম্যাচ ডে’তে এমন ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ ছিল একদমই অনাবশ্যক, অপ্রয়োজনীয়। বিস্ময়কর। টাইগারদের ব্যাট চালনা দেখে মনে হলো প্র্যাকটিসের সে বিগ হিট নেয়া, বলের লাইন ও লেন্থ না ঠাউরে ইচ্ছেমত চার ও ছক্কা হাঁকাতে যাওয়াটা প্রায় সবার মাথায় গেঁথে ছিল।

অধিনায়ক সাকিব আল হাসানই শুধু ছিলেন ব্যতিক্রম। এছাড়া তামিম, লিটন, সৌম্য, আরিফুল সবাই মনে হয় ‘ধনুর্ভঙ্গ পণ’ করেই নেমেছিলেন, মারার বল থাকুক বা নাই থাকুক, যেমন লেন্থের ডেলিভারিই পাই না কেন, আমরা উইকেটে গিয়েই শটস খেলবো। হাত খুলে মারবো। বিশেষ করে পুল খেলবো। মিড উইকেট ও লং অনের মাঝখান দিয়ে তুলে মারবো।

Advertisement

সেই চিন্তা ও অ্যাপ্রোচটাই হলো কাল। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যে ব্যাটিংটা করলেন, তা দেখে মনে হলো- ওয়েষ্ট ইন্ডিজ আগে ব্যাট করে ৫০-৭০ রানে অলআউট হয়ে গেছে। ওটা আর দেখে খেলার দরকার কি? এখন যেনতেনভাবে ইচ্ছেমত এদিক ওদিক তুলে মেরে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খেলা শেষ করে হোটেলে গিয়ে সন্ধ্যার ফ্লাইটে ঢাকা ফেরার তাড়া আছে।

চার থেকে পাঁচজন আউট হলেন উইকেটের গতি, বাউন্স ও লেন্থ না ঠাউরে পুল খেলতে গিয়ে। উইকেটে একটু ডাবল বাউন্স ছিল। শর্ট বলগুলো খানিক থেমে এসেছে। আর ওপরে গুড লেন্থ ও থ্রি কোয়ার্টার লেন্থ ডেলিভারিগুলো চমৎকার গতি ও স্থিতিশীল উচ্চতায় ব্যাটে এসেছে।

কিন্তু কঠিন সত্য হলো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবাই ওই শর্ট বলগুলোকেই বেছে নিলেন মারতে। তারা হয়ত ভাবলেন, ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলাররা খুব ওপরে বল করবেন কম, তাই শর্ট বল থেকেই যতটা সম্ভব চার ও ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা করি। আর কালতো বিগ হিট প্র্যাকটিস করেছি প্রচুর।

এই ভেবে মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ ছাড়া ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবাই উইকেটের সামনে নয় পাশে ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে সাইড শট বলে- সেই পুল, অফ সাইডের বল টেনে লেগ সাইডে তুলে মারা আর স্লগ সুইপ খেলতে গিয়েই আউট হলেন।

একই কথা ধ্বনিত হলো শর্টার ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ নীল ম্যাকেঞ্জির কণ্ঠে। তার ভাষ্যে, 'আগের দিন নেটে আমাদের ব্যাটসম্যানদের অনেকেই বাতাসে ভাসিয়ে বড় বড় শট খেলেছেন। তবে আজ জায়গা মতো সেটা কাজ হয়নি। একারণেই গোলমাল লেগে গিয়েছে ব্যাটিংয়ের সময়।'

এআরবি/আইএইচএস/এমকেএইচ