একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিন আসনে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা নিয়ে দায়ের করা রিট শুনানিতে তৃতীয় বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আইনজীবীদের করা আবেদনের শুনানির জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
আরও পড়ুন >> ফের অনাস্থা খালেদার আইনজীবীর, লিখিত চায় হাইকোর্ট
সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসানের একক বেঞ্চে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের লিখিত আবেদনের বিষয়ে অবগত করার পর আদালত এদিন নির্ধারণ করেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। তাদের সঙ্গে ছিলেন, ব্যারিস্টার মীর মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল জানান, আমরা আদালতের কাছে লিখিত আবেদন করে সময় চাই। আদালত প্রথমে আজ বেলা ২টায় এবং পরে (২টার পর) আগামীকাল মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেন।
Advertisement
গত ১৩ ডিসেম্বর মৌখিকভাবে এ আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। গত ১২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার রিটের বিভক্ত আদেশটি সমাধানের জন্য বিচারপতি জে বি এম হাসানের বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
গত ৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিলের শুনানির পর সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও ৭ আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে পরের দিন ৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ওই রিটের শুনানি শেষে দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দেন আদালত।
১১ ডিসেম্বর বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহম্মেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ খালেদা জিয়ার রিট আবেদনের বিষয়ে বিভক্ত আদেশ দেন। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রুলসহ মনোনয়নপত্র গ্রহণের আদেশ দিলেও বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. ইকবাল কবির তা নাকচ করেন।
আদালতে ওইদিন খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
Advertisement
হাইকোর্টের দেয়া ওই বিভক্ত আদেশের কপি এবং সংশ্লিষ্ট নথি ওইদিন (১১ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু আদেশের কপি সংক্ষিপ্ত হওয়ায় প্রধান বিচারপতির কার্যালয় থেকে পরের দিন ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তা ফেরত পাঠানো হয়। পরে পূর্ণাঙ্গ কপি পাঠানো পর প্রধান বিচারপতি তৃতীয় বেঞ্চ নির্ধারণ করেন।
মামলার সব নথি (১২ ডিসেম্বর) বুধবার বিকেলেই প্রধান বিচারপতির নির্ধারিত করে দেয়া একক বেঞ্চে পাঠানো হয়। ১৩ ডিসেম্বর দুপুর ২টার পর শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন বেঞ্চ। দুপুর ২টায় ওই বেঞ্চে শুনানি হয়। শুরুতেই খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, এ আদালতের প্রতি তাদের আস্থা নেই। তিনি ওইদিন শুনানি না করার অনুরোধ জানান। এরপরই বিচারক শুনানির জন্য ১৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।’
বিচারপতির প্রতি অনাস্থার বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আজ সাংবাদিকদের জানান, আমরা আগের গ্রাইন্ডেই অনাস্থার বিষয়ে অটল রয়েছি। আমরা বলেছি, আমাদের এ আদালতের প্রতি আস্থা নেই।
তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্টের বিধান হলো, একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি যদি কোনো মামলার শুনানি করেন তবে জুনিয়র কোনো বিচারপতি ওই মামলায় আর শুনানি করতে পারবেন না। সেজন্য এ আদালতের প্রতি অনাস্থা জানানো হয়েছে।
খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও ৭ আসন থেকে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে তিন আসনের মনোনয়নপত্রই বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এর বিরুদ্ধে করা আপিলও গত ৮ ডিসেম্বর নামঞ্জুর করে ইসি। পরে ইসির সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পৃথক তিনটি রিট করেন খালেদা জিয়া। ওই রিটের ওপরই ঝুলে আছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার ভোটভাগ্য।
দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির দুই মামলায় মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এফএইচ/এমএআর/পিআর