একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে নরসিংদী-২ (পলাশ) নির্বাচনী এলাকা। প্রচার-প্রচারণা, মাইকিং আর পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পলাশ উপজেলার অলিগলি। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে পাল্লা দিয়ে চলছে মিটিং-মিছিল, গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক। সাতটি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ দলীয় নেতারা একাট্টা হয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রচারণায়য় নেমেছে জাতীয় পার্টিও। তবে প্রচারণা ও গণসংযোগ চালাতে বাধার মুখে পড়ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
Advertisement
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান প্রচারণায় নামলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। গণসংযোগ চালানোর সময় হামলার শিকারও হতে হচ্ছে।
তবে ভোটাররা বলছেন, এবারের নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেয়া হবে। নির্বাচন কমিশনারের কাছে ভোটারদের দাবি, তারা যেন সুষ্ঠু পরিবেশে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, চারটি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও নরসিংদী সদরের তিনটি ইউনিয়নের একাংশ নিয়ে গঠিত নরসিংদী-২ পলাশ উপজেলার নির্বাচনী এলাকা। এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ১৯ হাজার ৫৩৯। নারী ভোটার এক লাখ ১৪ হাজার ৮৩৪ জন। মোট কেন্দ্র সংখ্যা ৮৮টি।
Advertisement
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পযর্ন্ত এই আসনটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপির প্রার্থী ড. আবদুল মঈন খানের দখলে ছিল। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মঈন খানকে পরাজিত করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ। পরবর্তীতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন পান জাসদ (ইনু) প্রার্থী জায়েদুল কবির।
সে সময় সাবেক এমপি আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের ছোট ভাই ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আশরাফ খানের কাছে পরাজিত হন মহাজোট প্রার্থী। দুই দফায় দুই ভাই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজানো হয়। শক্তিশালী করা হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনকে। অপরদিকে ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় দুর্বল হয়ে পড়ে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আজম খান। হাতপাখা নিয়ে লড়ছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. আরিফুল ইসলাম।
বিএনপির প্রার্থী ড. আবদুল মঈন খান অভিযোগ করে বলেন, আমরা গণতান্তিক প্রক্রিয়ায় এই সরকারের পরিবর্তন চাই। মারামারি-কাটাকাটিতে আমারা বিশ্বাসী নই। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন পলাশ উপজেলাকে সন্ত্রাসের জনপদ তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দা, চাইনিজ কুড়াল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামালা করার প্রস্তুতি নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ডের কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে এর কোনো মিল নেই। সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা চলছে।
একই অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. আজম খান। তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। একটা অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা শেষ পযর্ন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবো এবং অনড় অবস্থায় থাকবো। কারণ আমরা ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে লাঙ্গল প্রতীক বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে।
অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ বলেন, বিএনপির লোকজনের কমন একটি অভিযোগ তাদের প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। বাস্তবে এটি সত্য নয়। বরং বিএনপির লোকজন পলাশের গুচ্ছ গ্রামে আমাদের একটি নির্বাচনী ক্যাম্পে হামালা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।
তিনি আরও বলেন, গত দশ বছরে পলাশ উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তা ঘাট, স্কুল-কলেজ ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সসহ সকল ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। যা এর আগে কোনো দিনও হয়নি। তাই আমরা আশাবাদী এবারের নির্বাচনে বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় হবে।
সঞ্জিত সাহা/আরএআর/পিআর