৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচন। একটি নির্বাচনী আবহের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা শ্রদ্ধা ভালোবাসায় পালিত হল মহান বিজয় দিবস। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ায় এবারের বিজয় দিবসে যোগ হয়েছিল ভিন্নমাত্রা। জাতি অনেকটা অভিশাপমুক্ত হয়ে দেশমাতৃকার জন্য প্রাণদানকারী বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। পাশাপাশি দেশের সর্বস্তরের মানুষ শপথ নিয়েছে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার। যে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে সেই পাকিস্তানকে ‘না’ বলার প্রতিধ্বনিও উচ্চারিত হয়েছে এবারের বিজয় দিবসে। বলা যায় নতুন চেতনায় ও শপথে সামনের দিকে এগিয়ে চলার অঙ্গীকারই ছিল এবারের বিজয় দিবসের মূল প্রতিপাদ্য।
Advertisement
ঢাকার অদূরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ সকাল থেকেই বিজয় আনন্দে মুখরিত। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পরপরই সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় স্মৃতিসৌধ চত্বর। সর্ব সাধারণের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে ওঠে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে আমরা আসলে ইতিহাসের কাছেই ফিরে যাই। স্মরণ করি কী সীমাহীন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি একটি দেশ, একটি পতাকা। এবারের বিজয় দিবসে তাই অন্যতম চাওয়া ছিল ইতিহাসের কাছে ফেরা। যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা লাভের ৪৭ বছরে অর্থনৈতিক, সামাজিক নানা সূচকেই বাংলাদেশ এগিয়েছে অনেকদূর। আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে। বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার আয়। মাথা পিছু আয় বেড়েছে। শিক্ষা স্বাস্থ্যখাতেও এসেছে কাঙ্খিত উন্নয়ন। শিশুমৃত্যু-মাতৃমৃত্যুহার কমেছে। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুরে মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। হচ্ছে মেট্রোরেল। মহাকাশে পৌঁছে গেছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। এসবই অর্থনীতিক সক্ষমতার পরিচয় বাহক।
তবে মনে রাখা প্রয়োজন একটি দেশের উন্নতি কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়। সামগ্রিক উন্নতি বলতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রের উন্নয়নকেও বুঝায়। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত একটি দেশের দায় রয়েছে ইতিহাসের কাছে ফিরে যাওয়ার। মুক্তিযোদ্ধাদের দেশমাতৃকার প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের কথা প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে পারাটাও সমানভাবে জরুরি। এর মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যায়। সৃষ্টি হয় দেশাত্মবোধ। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণও জরুরি।
Advertisement
দুঃখজনক হচ্ছে, এই ৪৭ বছরেও সরকারিভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য পৃথক কোনো জাদুঘর নির্মাণ করা হয়নি। অথচ প্রতিটি জেলায়ই এ ধরনের জাদুঘর হতে পারে। বধ্যভূমিগুলোও সংরক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। যত দিন যাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো হারিয়ে যাবে। কাজেই এ ব্যাপারে ত্বরিৎ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। পাঠ্যপুস্তকেও বাংলাদেশ বিষয়ক কোর্স চালু করতে হবে। এভাবে ইতিহাসের কাছে ফিরে গিয়েই শহীদদের প্রতি আমাদের দায় শোধ করতে হবে। বাংলাদেশের এগিয়ে চলার জন্যও সেটি হবে অন্যতম পাথেয়।
এইচআর/জেআইএম