জাতীয়

জাতীয় জাদুঘরে জনস্রোত

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন বীর বাঙালিরা। এজন্য কত যে জানা অজানা ত্যাগ-তিতিক্ষা, শ্রম, আর বিসর্জনের গল্প তা জাদুঘরে আসলেই বোঝা যায়। মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে জানাতেই বাচ্চাদের নিয়ে এখানে আসা।

Advertisement

মিরপুর থেকে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে জাতীয় জাদুঘরে ঘুরতে এসে ব্যাংক কর্মকর্তা রেজাউল করিম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আমার দুই সন্তানকে জানাতে চাই। আমার মতো হাজারো মানুষের ঢল এখানে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার সঠিক স্থান এখন জাতীয় জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ঘুরে এসে এখানে লাইনে দাঁড়িয়েছি।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ছুটির দিন হওয়ায় জাতীয় জাদুঘর এলাকায় উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রোববার দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হাজারো দর্শনার্থী।

বিজয় দিবসের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খোলা রাখা হয়েছে জাতীয় জাদুঘর। রোববার সকাল ১০টায় খোলা জাদুঘরের টিকিট কাউন্টারে সামনে আগতদের দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। ভাই-বোন, স্ত্রী সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন জাদুঘরে। দর্শনার্থীদের স্রোত সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিয়োজিত আনসার সদস্যদেরও। বাড্ডা এলাকা থেকে এসেছে এক ঝাঁক স্কুল শিক্ষার্থী।

Advertisement

শিক্ষার্থী মামুন মিয়া বলেন, ‘স্কুল বন্ধ। এখানে আজ শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের জন্য ফ্রিতে জাতীয় জাদুঘর দেখার সুযোগ মিলছে। এমন খবরেই আমরা বন্ধুরা এসেছি জাদুঘর দেখতে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সমৃদ্ধ জাদুঘর থেকে অনেক কিছুই শেখার সুযোগ রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ জাদুঘরটিতে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রাচীন যুগের বিভিন্ন সময়ের অস্ত্র, বাদ্যযন্ত্র, চীনামাটির হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প, পাণ্ডুলিপি, সমকালীন শিল্পকলাগুলো রয়েছে।

জাতীয় জাদুঘরের কিপার শিহাব শাহরিয়ার জানান, গতকাল দুপুরে জাতীয় জাদুঘর খুলে দেয়ার পর চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করা হয়। প্রচুর দর্শনার্থী এগুলো উপভোগ করে। আজ আরও দর্শনার্থীদের চাপ বেড়েছে।

জাতীয় জাদুঘরের টিকিট বিক্রেতা সহকারী রুহুল আমিন বলেন, সকাল ১০টায় খোলা হয়েছে জাতীয় জাদুঘর। দুপুর ১টা পর্যন্ত ১৮ শ’ টিকিট বিক্রি শেষ। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। আশা করছি প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম হবে এখানে।

Advertisement

তিনি বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও সিনিয়র সিটিজেনদের সৌজন্যে আজ বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে। জাদুঘরের গ্যালারীসমূহ পরিদর্শনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে সাধারণ দর্শনার্থীরা টিকিটের বিনিময়ে গ্যালারি পরিদর্শন করতে পারবেন।

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা নিদর্শন জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। প্রাচীন যুগ থেকে আজকের বাংলাদেশ যতগুলো সিঁড়ি পার করেছে তার সবকটির চিহ্ন ধরে রেখেছে জাতীয় জাদুঘর। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া এবং তা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও গবেষণা কাজে নিয়োজিত রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি।

প্রথমে ঢাকা জাদুঘর নামে আত্মপ্রকাশ করে আজকের জাতীয় জাদুঘর। ১৯১৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে এর উদ্বোধন করেন তদানিন্তন বাংলার গভর্নর লর্ড কার মাইকেল। ১৯৭০ পাকিস্তান সরকার ঢাকা জাদুঘর কমিটির পরিবর্তে ঢাকা জাদুঘর প্রযত্ন বোর্ড অধ্যাদেশ জারি করে একে সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় রূপ দেয়।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৩ সালে ঢাকা জাদুঘরকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করেন। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত।

জেইউ/এমআরএম/এমএস