থেমে থেমে ভারি বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হচ্ছে কক্সবাজারের কয়েক উপজেলার নিম্নাঞ্চল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে চকরিয়ার মাতামুহুরি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন জনপদে আবারো বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে আবারো পানিবন্দী হয়ে পড়ছে চকরিয়া-পেকুয়ার নিচু এলাকা। উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানিও। এ অবস্থায় উপজেলার কোণাখালী, ঢেমুশিয়া, বিএমচর ও পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের জনবসতি পানিতে আবারো নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে। এসব এলাকার বেশিরভাগ পরিবার পুনরায় আশ্রয় নিয়েছেন আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর। ঈদগাঁও নদীর পানিও ক্রমে বাড়ছে। অনেক স্থানে নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন আবার মেরামত সম্ভব হয়ে না ওঠায় সহজে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। প্লাবিত হচ্ছে ঈদগাঁও বাজার এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল। চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ভারি বর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে পৌরসভার বিভিন্ন জনপদে বিশেষ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। নদীর প্রবল স্রোতে পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা এলাকার পৌরশহর রক্ষাবাঁধ চরম হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলা ও পৌরসভা এলাকার গ্রামীণ জনবসতি, সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। উপজেলার কোণাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার ও বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান বদিউল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ভারি বর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে ঢলের পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ হয়ে লোকালয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি। এ অবস্থার কারণে ইউনিয়নের অনেক পরিবারের বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে এসব এলাকার লোকজন নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আঞ্চলিক মহাসড়কে পলিথিনের টাবু টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলার বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দিন চৌধুরীজিাগো নিউজকে জানান, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে ঢুকে ইউনিয়নের ডেইঙ্গাকাটা, রসুলাবাদ, গোবিন্দপুর, শান্তিবাজার এলাকার বেশিরভাগ এলাকা ডুবে গেছে। সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম জাগো নিউজকে জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় নীচু এলাকার বসতবাড়িতে হাঁটু সমান পানি ঢুকে পড়েছে। যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে ছিকলঘাট-কাকারা, মাঝেরপাড়ি-মানিকপুর সড়কে। লক্ষ্যারচর ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মানিক জাগো নিউজকে জানান, মাতামুহুরী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় তার ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া, রোস্তমআলী চৌধুরী পাড়ার শতশত পরিবার আতঙ্কে রয়েছে। একই সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর তীর এলাকায় বিদ্যুত বিভাগের ১ লাখ ৩২ হাজার ভোল্ডের একটি টাওয়ার। কৈয়ারবিল ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ উদ্দিন চৌধুরৗ জাগো নিউজকে জানান, কৈয়ারবিল ইউনিয়নে অধিকাংশ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। চিরিংগা ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তার ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা ফের পানিতে ডুবে গেছে। সওদাগরঘোনা রাবার ড্যাম সড়কের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ ইতোমধ্যে দুইদফা মাটি দিয়ে মেরামত করা হলেও এখন তা হুমকির মুখে রয়েছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ও নদীতে ঢলের পানি গতি বাড়লে যেকোনো মুহূর্তে বেড়িবাঁধটি ফের ভেঙে যেতে পারে। এতে পুরো ইউনিয়নের জনবসতি ও মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চকরিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র শহিদুল ইসলাম ফোরকান জাগো নিউজকে জানান, মাতামুহুরী নদীতে ঢলের পানি বেড়ে পাউবোর শহররক্ষা বাঁধের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের অংশ দিয়ে পানি ঢুকে পৌরসভার নামার চিরিংগা, কোচপাড়া, ভাঙ্গারমুখ, মাস্টারপাড়া, বাঁশঘাট, চেয়ারম্যান পাড়ার কমপক্ষে ৩ শতাধিক বসতবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এখানকার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে পৌরশহরের মার্কেট ও দোকানপাটের সামনে। ঈদগাঁও ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে জানান, বুধবার বিকেল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় ঈদগাঁও নদীতে আবারো ঢল নামছে। বৃহস্পতিবারও মাঝারি বৃষ্টিপাত চলমান থাকায় ক্রমে বাড়ছে নদীর পানি। সাম্প্রতিক বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত সম্ভব না হওয়ায় অতি সহজে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ভারি বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলায় ফের বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমজেড/পিআর
Advertisement