গ্রহাণু ‘বেন্নু’তে পানির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গ্রহাণুর পৃষ্ঠদেশ কী দিয়ে গড়া, তা জানতে ‘ওসিরিস-রেক্স’ নামে একটি মহাকাশযানকে ‘বেন্নু’-তে পাঠিয়েছে নাসা। গত ৩ ডিসেম্বর সেই মহাকাশযান ঢুকে পড়ে বেন্নুর কক্ষপথে।
Advertisement
‘ওসিরিস-রেক্স’-এর মধ্যে রয়েছে দু’টি সর্বাধুনিক স্পেকট্রোমিটার। একটি ‘ওসিরিস-রেক্স ভিসিবল অ্যান্ড ইনফ্রারেড স্পেকট্রোমিটার’। অন্যটি- ‘ওসিরিস-রেক্স থার্মাল এমিসন স্পেকট্রোমিটার’। ওই দুই স্পেকট্রোমিটারের পাঠনো তথ্য বিশ্লেষণ করে বেন্নুর মধ্যে হাইড্রক্সিল আয়নের উপস্থিতির কথা জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। পানি ভাঙলে তৈরি হয় হাইড্রোজেন ও হাইড্রক্সিল আয়ন। তাই বেন্নুতে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রিক্সল আয়ন থাকায় পানির অস্তিত্বই প্রমাণিত হলো।
১৯৯৯ সালে আবিষ্কৃত হয় এই গ্রহাণু। এটি পৃথিবী আর চাঁদের মাঝামাঝি জায়গায় ভেঙে যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ২১৩৫ সালে এই মহাজাগতিক ঘটনা ঘটার কথা।
অর্থাৎ আজ থেকে ১৫০ বছর পর এই গ্রহাণুটিই ছুটে এসে পৃথিবীকে ধাক্কা মারতে পারে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা তাতে হবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। মৃত্যু হবে বহু মানুষের।
Advertisement
নাসার গবেষক দান্তে লরেট জানিয়েছিলেন, ২১৩৫ সালে মধ্যে এই গ্রহাণুর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও তিনি মনে করেন ততদিনে বিজ্ঞান অনেকটাই এগিয়ে যাবে, ফলে ওই গ্রহাণুর পথ ঘুরিয়ে দেয়া সম্ভব হবে।
আগামী দু’বছর ধরে বেন্নুকে প্রদক্ষিণ করতে করতে নাসার মহাকাশযানটি উড়ে যাবে গ্রহাণুর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু এবং বিষূবরেখা ও তার লাগোয়া এলাকাগুলির উপর দিয়ে। তারপর সেখান থেকে মাটি তুলে আনতে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় বেন্নুতে নামবে ওসিরিস-রেক্স। সেই মাটি নিয়ে নাসার মহাকাশযান পৃথিবীতে ফিরবে পাঁচ বছর পর।
উল্লেখ্য, গ্রহাণু বা অ্যাস্টেরয়েড হলো প্রধানত পাথর দ্বারা গঠিত বস্তু, যা তার তারাকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে। আমাদের সৌরজগতে গ্রহাণুগুলো ক্ষুদ্র গ্রহ। এরা ছোট আকারের গ্রহ যেমন বুধের চেয়েও ছোট। বেশিরভাগ গ্রহাণুই মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত গ্রহাণু বেল্টে থেকে নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তন করে। ধারণা করা হয়, গ্রহাণুগুলো ভ্রূণগ্রহীয় চাকতির অবশিষ্টাংশ। বলা হয়, গ্রহাণু বেল্টের অঞ্চলে সৌরজগতের গঠনের প্রাথমিক সময় যেসব ভ্রূণগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল তাদের অবশিষ্টাংশ বৃহস্পতির আবেশ দ্বারা সৃষ্ট মহাকর্ষীয় অক্ষ বিচলনের কারণে গ্রহের সঙ্গে মিলিত হবার সুযোগ পায়নি। আর এই অবশিষ্টাংশই গ্রহাণু বেল্টের উৎপত্তির কারণ। কিছু গ্রহাণুর চাঁদও রয়েছে।
জেডএ/জেআইএম
Advertisement