২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সম্মুখে অনুষ্ঠিত দলের প্রতিবাদ সভায় গ্রেনেড ছুঁড়ে যে নারকীয় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করা হয়েছিল সেটিকে ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেই কেবল তুলনা করা যেতে পারে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু, তাঁর আপনজন এবং রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠদের হত্যার মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ-বিরোধী ধারায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ফিরিয়ে নেওয়া, সে জন্য তাঁর সকল সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীকে হত্যা করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর আরোহন ও অবস্থানকে নিরাপদ রাখা। সে কারণে তারা ৩ নভেম্বর জেলখানায় বন্দি ৪ জাতীয় নেতাকেও নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। বলা চলে সেই পরিকলল্পনা বাস্তবায়নে তারা অনেকটাই সফল হয়েছে। তাদের সাফল্য মানেই কিন্তু ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারা ব্যর্থ হওয়া, কম করে হলেও দুর্বল করে দেওয়া।আমরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের যে ধরনের দুর্বলতা এখন দেখছি তার মূলেই রয়েছে ১৯৭৫ -এর ১৫ আগস্ট- পরবর্তী রাষ্ট্র ক্ষমতার দীর্ঘ শাসন এবং সেই ধারার আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী তৈরি করা। অন্যদিকে ২০০৪ সালের ২১-আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের মূল লক্ষ্য ছিল ১৫ আগস্টে ভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকা-এবং রাজনীতির হালধরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এক সঙ্গে শেষ করে দেওয়া, সেটি করা সম্ভব হলেই কেবল ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোট সরকারের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার অবস্থানটি নিষ্কণ্টক এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ চিরদিনের জন্যে দূর করে দেওয়া সম্ভব হবে। ১৯৭৫-এর হত্যাকাণ্ড সংঘটনের মাধ্যমে এতোদিন যে ধারণাটি প্রচার ও পোষণ করা হয়েছিল যে, আওয়ামী লীগ আর কোনো কালে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না, সেই সম্ভাবনার ভিত্তি এবং দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সেটি ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে প্রমাণিত হয়নি, বরং আওয়ামী লীগ ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতায় আসীন হতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করে বিচারটি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছিল। ভারতের সঙ্গে বিরোধিতার পরিবর্তে সহযোগিতার নীতি অনুসরণ করে গঙ্গার পানি চুক্তি করাতে সক্ষম হয় সরকার, ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে অর্থনীতিতে গতিবেগ সৃষ্টি হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পাদনের ফলে দেশের এক দশমাংশ ভূখণ্ডে দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত-রক্তপাত ও প্রাণহানির অবসান ঘটে, সেখানে শান্তির সুবাতাস বাইতে শুরু করে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কল্যাণবাদী ধারার প্রচলন ঘটে, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকে, মানুষ বাস্তবিকই উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে থাকে।১৯৯৮ সালে শত বছরের ইতিহাসের ভয়াবহ বন্যা এবং বন্যাউত্তর পরিস্থিতি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করা হয়। এসব অভিজ্ঞতা আওয়ামী লীগ বিরোধী দুই দশকের অপপ্রচারের অসারতা মানুষের কাছে তুলে ধরে। একই সঙ্গে আওয়ামী ভীতি, ভারতজুজুর অবাবস্তবতাও মানুষের কাছে উপস্থাপিত হতে থাকে। আওয়ামী লীগ মানেই দুর্ভিক্ষ- আওয়ামী বিরোধী বিভিন্ন মহলের এমন অপপ্রচারও ভোঁতা হয়ে পড়ে। এসব নিতান্তই অপপ্রচার বলে প্রমাণিত হয়। একইভাবে বাংলাদেশ ভারতের করদরাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার আশাঙ্কা এবং প্রচারণা একেবারেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও প্রমাণিত হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মানুষের ধর্মকর্মের স্বাধীনতা থাকবে না, বিসমিল্লাহ চলে যাবে, মসজিদে উলুধ্বনি দেওয়া হবে এমন সব স্থূল এবং আজগুবি প্রচার-প্রচারণা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হলো। বরং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিদেশ-নির্ভরশীলতা অনেকখানি কমিয়ে বাংলাদেশকে স্বনির্ভর হওয়ার পথে অনেক বেশি এগিয়ে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ ১৯৭৫-পরবর্তী এবং ১৯৯৬-পূর্ববর্তী যে কোনো শাসনামল থেকে অনেক বেশি স্থিতিশীল, আদর্শবাদী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনামুখি একটি রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার উদাহরণ সৃষ্টি করে। এটি আধুনিক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তদেরও অনেক বেশি আশাবাদী করে তোলে, সাধারণ মানুষের মধ্যেও আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা স্থাপনের অনেক বেশি বাস্তবতা তৈরি করে। বলা চলে ১৯৯৬-২০০১ সময়ের শেখ হাসিনার শাসন ছিল দীর্ঘদিনের অপপ্রচারকে মিথ্যা প্রমাণিত করার শাসন। শেখ হাসিনা বেশ সতকর্তার সঙ্গে সেই সময় রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন, তাকে নানা প্রতিকূলতাকে ভেঙে ভেঙেই পথ চলতে হয়েছে, মানুষের মনে জায়গা করে নিতে হয়েছে। তিনি তাতে সফল হন।এ বিষয়টি বিএনপি, জামায়াতসহ আওয়ামী-বিরোধী সকল শক্তিই বুঝতে পেরেছিল। তারা এটিও বুঝতে পেরেছিল যে- জিয়াউর রহমান ১৯৭৬-এর দিকে বলে ছিলেন যে, তিনি রাজনীতিবিদদের জন্যে রাজনীতি কঠিন করে দেবেন, সেটি তিনি আসলে বলে ছিলেন মাটি ও মানুষের ভেতর থেকে গড়ে ওঠা রাজনীতিবিদদের এবং আদর্শবাদী রাজনীতিকে তছনছ করে দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে। তিনি তার পরিকল্পনা মতো রাজনীতিকে আদর্শহীন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী খাতে প্রবাহিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে জিয়াউর রহমানের পরিকল্পনা মোতাবেক আওয়ামী রাজনীতিকে চিরকালের জন্যে কঠিন ও জটিল করে দিতে পারেন নি।১৯৯৬-২০০১ সময়ের শেখ হাসিনার শাসন সেটিকে ব্যর্থ করে দিতে পেরেছিল। ফলে জিয়াউর রহমানের অনুসারি এবং তাদের মিত্ররা এতে নিজেদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির বিপদ দেখতে ও বুঝতে পেরেছিল। জনগণের কাছে তাদের এতো দিনকার অপপ্রচারের অসারতা যতো বেশি উন্মোচিত হওয়ার পরিবেশ এভাবে থেকে যাবে ততো বেশি তাদের রাজনীতিই দিন দিন কঠিন হয়ে উঠবে-এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত হয়ে যায়। সে কারণেই ১৯৯৯ সালে ৪ দলীয় জোট গঠিত হয়। সেই জোটে জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোটসহ ডানপন্থী চিন্তাধারার সকলেই বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়, ২০০১-এর ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে কব্জা করার জন্য নতুন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হয়। সেই ষড়যন্ত্রের কৌশলের রাজনীতি ধরতে পারেনি আওয়ামী লীগ, বুদ্ধিবৃত্তিক মহলও।নির্বাচনের আগে থেকে নানা ধরনের প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়, প্রচার-প্রচারণায় মাল মশলা দেওয়া হয়, পাশে নেওয়া হয়- গণমাধ্যম, প্রশাসনসহ অজানা অনেক শক্তিকে- যারা ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ের সুবিধাভোগী এবং রাজনৈতিক ধারার একনিষ্ঠ সমর্থক। কিন্তু এটিও বুঝতে পারে নি আওয়ামী লীগ ও সুশীল সমাজের বৃহত্তর অংশ। তারা সরলীকরণের বিশ্বাস থেকে নির্বাচনী গণতন্ত্রের হারজিতকে স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে নিয়েছিল। কিন্তু এমনটি কেবল তখনই কার্যকর ও ফলপ্রসূ হতে পারে যখন উভয়পক্ষের রাজনৈতিক অবস্থান থাকে গণতন্ত্রের। যদি প্রতিদ্বন্দ্বী এক পক্ষ কেবল গণতন্ত্রে বিশ্বাসী থাকে, অপরপক্ষ যদি মৌলিকভাবেই সাম্প্রসায়িক এবং গণতন্ত্র হত্যাকারী থাকে, বাংলাদেশকে একটি ভিন্ন মতাদর্শের রাষ্ট্রে পরিণত করতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী থাকে তাহলে সেই ‘নির্বাচনী গণতন্ত্র’ শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ নাৎসিবাদীদেরকেও ক্ষমতায় আরোহণ করতে, গণতন্ত্রকে হত্যা করতে ভূমিকা রাখে। ইতিহাসে এর ভূরি ভূরি প্রমাণ থাকার পরও ২০০১ সালের নির্বাচনকালে অনেকেই বিষয়গুলো সম্পর্কে সেভাবে সচেতন না থাকায় ১ অক্টোবর থেকেই দেশে অসাম্প্রদায়িক শক্তির ওপর যে দলন, নিপীড়ন, নিষ্পেষণ, হত্যা, খুন ও বিতাড়নের সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় তার গিলোটিনের নিচে মাথা কাটা হয়েছিল হাজার হাজার নেতাকর্মীকে, আহসান উল্লাহ মাস্টার, শাহ এ এমএস কিবরিয়া, মমতাজউদ্দীনের মতো নেতৃবৃন্দকে। গোপনে সেই গিলোটিনটিই পোঁতা হয়েছিল ২১ আগস্ট ২০০৪ রাজধানী বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পাশে- যেখানে এসব হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেটি অফিস থেকে খানিকটা দূরে করার অনুমতি দেওয়া হয় নি, অফিসের সম্মুখে ট্রাকের ওপর করার যে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তা ছিল একসঙ্গে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে আর্জেস গ্রেনেড নিক্ষেপের মাধ্যমে খতম করার গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা থেকে। কার্যত সেভাবেই জনসভা করতে দেওয়া হয় যাতে সেই সময়ের সরকারের মহল বিশেষের উদ্দেশ্য সহজে সফল করা সম্ভব হয়। আর্জেস গ্রেনেডের মাধ্যমে ২১ আগস্ট নৃশংস আক্রমণ পরিচালিত হয়েছিল সেটি সাধারণ কোনো সন্ত্রাসী বা বোমাবাজদের কাণ্ডকীর্তি নয় মোটেও। এটি তৎকালীন জোট সরকার এবং জোটের বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর গভীর পরিকল্পনার ষড়যন্ত্র-যেটির ব্যবহারে রাষ্ট্রযন্ত্রসহ সরকারের নানা বাহিনীর কিছু কিছু সহমতপোষণকারী শক্তি ও গোষ্ঠীর সহযোগিতা ও পরিকল্পনা নিহিত ছিল। আর্জেস গ্রেনেড তো যেখানে সেখানে কুড়িয়ে পাওয়া অস্ত্র নয়। এটি বিশেষ বাহিনীর যুদ্ধাস্ত্র হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। সেটির সরবরাহ, যোগদানদাতা, হামলায় অংশ নেওয়া প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের তৈরি করা, রেকি করা, নিরাপদে তাদের স্থান ত্যাগ করতে সহযোগিতা করা, অবিস্ফোরিত গ্রেনেড-আলামত হিসেবে না রেখে ধ্বংস করা, জজ মিয়া নাটক সাজানোসহ সেই সময়ের সকল কিছুই ছিল মূল হত্যাকাণ্ড থেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্য দিকে সরিয়ে নেওয়া, অপরাধীদের চিহ্নিত করতে না দেওয়া এবং তাদের ধরার কোনো উদ্যোগ না নেওয়া। ২১ আগস্টের গ্রেনেড নিক্ষেপের মূল লক্ষ্যবস্তুই ছিল শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলা। সেভাবেই গ্রেনেড গুলো নিক্ষেপ করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে তিনি অক্ষত থাকেন এবং বেঁচে যান। তবে এর জন্যে ২৪ জন নেতাকর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। নারী নেত্রী আইভি রহমান, সাবেক মেয়র হানিফ এর মধ্যে অন্যতম। সর্বশেষ গাড়িতে উঠতে গিয়ে ঘাতকদের বুলেটে নিহত হন তাঁর দেহরক্ষী। আক্রমণকারী গোষ্ঠী কতোটা ঔদ্ধত্যের পরিচয় দিয়েছিল-তা আমরা পুরো সময়ের ঘটনার মধ্যে দেখতে পেয়েছি। আমরা দেখেছি কিভাবে আইভি রহমানসহ অসংখ্য নেতা কর্মী গ্রেনেডের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিলেন, গুলিস্তানের রাজপথ কিভাবে শত শত মানুষের রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল, কিভাবে মানুষের ক্ষত-বিক্ষত দেহ রাস্তার ওপর পড়েছিল। ২৪ জন নেতাকর্মী মারা গেলেন, অসংখ্য নেতাকর্মী চিরজীবনের জন্যে পঙ্গু হয়ে গেলেন, অনেকেই স্প্লিন্টার বহন করে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছেন। অথচ সেদিন ক্ষমতাসীন সরকার এসব আহত-নিহতদের উদ্ধার বা চিকিৎসায় এগিয়ে আসেনি, বাধা দেওয়া হয়েছিল, ঢাকা মেডিকেল থেকে চিকিৎসকদের একটি অংশ ডিউটি ছেড়ে চলে যায়। অধিকন্তু এই গ্রেনেড হামলার দায় শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের ওপর চাপানোর চেষ্টা হয়েছিল। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের মধ্যে আওয়ামী বিরোধিতার বিষ কতোটা গভীরে প্রোথিত ছিল তা এ ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো। মূলত ২০০১-০৬ সালের রাষ্ট্র ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ৪ দলীয় জোট আওয়ামী নিধনের যে মিশন হাতে নিয়েছিল তাতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ছিল পরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আওয়ামী লীগকে সমূলে উৎপাটিত করা, সেখানে বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শ বহনকারী জীবিত নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মতোই তাদের কাছে হত্যার লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়, শেখ হাসিনাকে শারীরিকভাবে উৎখাত করার এমন বর্বর হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত করতেও তাদের বিবেকে বাধেনি, ভয় হয় নি। তারা কতোখানি হীতাহীতজ্ঞান শূন্য এবং বেপরোয়া হয়ে পড়েছিল সেটিও গভীরভাবে ভাববার বিষয়। ২০০১ সাল পরবর্তী সময়ে ৪ দলীয় জোট সেভাবেই ১৯৭৫-এর হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাকাণ্ড উত্তর রাজনীতিকে নিষ্কণ্টক করতে সচেষ্ট ছিল। সেটি করার জন্যে পুরো সময়টি জুড়ে অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল, শেখ হাসিনাকে অনেকবারই হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ঘটনাটি ছিল প্রকাশ্য দিবালোকে, আড়ালে থেকে গেছে অনেক ব্যর্থ হত্যাকাণ্ডের কথা। সব উদ্যোগই ছিল বা হচ্ছে ১৯৭৫ এর হত্যাকাণ্ড-এর ধারাবাহিকতা হিসেবে একই অপরাজনীতি, একই ধরনের পশ্চাৎপদ বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতাকে হাতের মুঠোয় ধরে রাখার লক্ষ্য থেকে- বিষয়টি সবাইকে সেভাবেই বুঝতে হবে। তবেই ২১ আগস্ট নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না, দেশের রাজনীতিও অপশক্তির হাত থেকে মুক্ত হতে পারবে। এইচআর/পিআর
Advertisement