সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ দিনগুলোতে মানুষের মধ্যে একটা প্রবণতা দেখা যেত, তা হলো দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা। খাবারের স্বল্পতা, খাবার যোগাড় করতে দিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ানো, অর্থনৈতিক দুর্দশা এই সবকিছু নিয়ে তখন রুশরা কৌতুক করতো। এই উপহাস দুঃখ ভোলার মাধ্যম হয়ে উঠেছিল।
Advertisement
উপহাস দিয়ে রাশিয়ার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার একটি নমুনা সম্প্রতিও দেখা গেছে। যুক্তরাজ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে একজন সাবেক গুপ্তচর হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনলে এ প্রচেষ্টা দেখা যায়। যুক্তরাজ্য বলছিল, এই ঘটনায় রুশদের যুক্ত থাকার ‘অতি সম্ভাবনা’ রয়েছে।
এই দুটি শব্দই এখন রাশিয়াতে একটি কৌতুকের বিষয় হয়ে উঠেছে। সবকিছুতেই রাশিয়া দোষের ভাগীদার হচ্ছে বলে উল্লেখ করে দেশটির সরকারি কর্মকর্তা এমনকি গণমাধ্যমও এই শব্দ দুটি হাস্যরসের উৎস হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। কড়া নিন্দার পাশাপাশি ব্যঙ্গ করে হেসে উড়িয়ে দেয়ার কিছু কৌশলও ব্যবহার করছে রাশিয়া।
গুপ্তচর হত্যাচেষ্টার জন্য যে দু’জন রুশকে দায়ী করা হয় তাদের খোঁজ মিলেছিল ‘দ্য ইনসাইডার’ নামের একটি তদন্তকারী ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে। সেটির প্রধান রোমান দোব্রকতভ বলছেন, কোনো ঘটনার গুরুত্ব কমাতে হাসিঠাট্টা খুব ভালো কাজে দেয়। রোমান দোব্রকতভ মনে করেন, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়কে হালকা করে ফেলার জন্য রুশরা উপহাসকে এখন রীতিমতো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তার মতে উপহাস মানুষের মনে ঘটনার গুরুত্ব নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে। ধীরে ধীরে তাদের মত পাল্টাতে থাকে। এমন কৌশলের অংশ হিসেবে আজকাল ব্যাপকহারে ইন্টারনেটকে কাজে লাগাচ্ছে রাশিয়া।
Advertisement
১৯৯০ এর দশকে নাগরিক দুর্দশা নিয়ে প্রচুর ব্যঙ্গাত্মক টেলিভিশন অনুষ্ঠান জনপ্রিয় ছিল রাশিয়াতে। কিন্তু ২০০০ সালে ভ্লাদিমির পুতিন যখন ক্ষমতায় এলেন তখন এমন ব্যঙ্গাত্মক অনুষ্ঠান রাতারাতি বন্ধ করে দেয়া হল। তিনি এসব বিষয়বস্তু নিয়ে হাস্যরস করার বিষয়টি যেনও ঠিক বুঝলেন না। ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতায় আসার পর শুরুতেই তার ক্ষোভের মুখে পড়েছিলো একটি ব্যঙ্গাত্মক পাপেট শো ‘কুকলী’। তিনি ক্ষমতায় আসার পর ব্যঙ্গাত্মক অনুষ্ঠানগুলো থেকে ধীরে ধীরে যেন রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়বস্তু গায়েব হতে থাকলো। এর বদলে তাতে যুক্ত হল বিদেশি শত্রুদের নিয়ে ঠাট্টা আর পুতিনের গুণগান।
এনএফ/জেআইএম