আজ মহান বিজয় দিবস। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দিন। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছিল একটি রাষ্ট্র। পেয়েছিল একটি স্বাধীন দেশ। লাল-সবুজের পতাকা। বস্তুত পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাঙালি পেয়েছিল তাদের বহুল কাঙ্খিত স্বাধীনতা। বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠেছিল বাংলাদেশ। আজকের দিনটি গৌরবের, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দিনও।
Advertisement
৪৭তম বিজয়ের বার্ষিকীতে আমরা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি সেইসব বীর শহীদদের যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে লাল-সবুজের পতাকা। স্মরণ করছি ৩০ লাখ শহীদকে, দুই লাখ মা-বোনকে যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।
মনে রাখা প্রয়োজন,আমাদের এই বিজয়ের পেছনে রয়েছে রক্তরাঙা এক দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন গতি পেয়েছিল। ছিষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনের পথ ধরে স্বাধীনতা সংগ্রাম এগিয়ে গেছে। একাত্তরে আসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার চূড়ান্ত ডাক। একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’- বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রকণ্ঠের আহ্বানে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অবশেষে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় আসে বাঙালির।
স্বাধীনতা লাভের পরও বাঙালি জাতির প্রতি ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতার ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করে। এমনকি স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে ওঠে রক্তখচিত লাল-সবুজের পতাকা। কিন্তু সত্যের অমোঘ লিখন খণ্ডানো যায় না। এক সময় যারা দেশবিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বলে দম্ভ করতো তাদের অনেকেরই বিচার চলছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে সাকা-মুজাহিদ-নিজামীদের। অন্যদেরও বিচার চলছে। এবারের বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে অনেকটাই অভিশাপমুক্ত হয়ে।
Advertisement
বস্তুত বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে একটি ন্যায়ানুগ সমাজ তথা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যই যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। বিজয় দিবসে এটিও আমাদের এক বড় প্রাপ্তি। স্বাধীনতার সুফল যখন ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে তখনই স্বাধীনতা আরো অর্থবহ হয়ে উঠবে। শোষণ-বঞ্চনাহীন, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়ই হোক এবারের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একটি অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। জেগে উঠুক দেশাত্ম বোধ। নতুন প্রজন্ম স্নাত হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারায়।
এইচআর/জেআইএম