ক্রিকেট ব্যক্তির নয়, দলীয় খেলা, ১১ জনের খেলা। কিন্তু কঠিন সত্য হলো, বাংলাদেশ দল আসলে পাঁচ অভিজ্ঞ ও পরিণত পারফর্মার মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ কেন্দ্রীক। টাইগারদের যত সাফল্য, তা এই ‘পঞ্চ পান্ডবের’ হাত ধরেই। এর বাইরে যে কেউ কখনো ভাল খেলেননি বা খেলেন না- তা নয়।
Advertisement
অনেকেই পারফর্ম করেছেন, এখনো করেন। এই যেমন গতকাল (শুক্রবার) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলের সেরা বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ। আর ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন সৌম্য সরকার। শুক্রবার ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৮ উইকেটের অনায়াস জয়ে ঐ দুই তরুণের রয়েছে প্রচুর অবদান। এমন কিছু ম্যাচ অবশ্যই আছে, যেখানে তরুণরাও দলের সাফল্যে রেখেছেন অগ্রণী ভুমিকা।
২০১৫ সালে ক্যারিয়ার শুরু করা সৌম্য সরকার ব্যাট হাতে আর বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানও বল হাতে জ্বলে উঠে একাধিক সিরিজ বিজয়ে রেখেছিলেন বড় অবদান। কিন্তু এর স্থায়ীত্ব খুব কম। ঘুরিয়ে বললে ধারাবাহিকতা থাকেনি বেশী দিন। এক সময় নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে তাদের পারফর্ম্যান্স। তারপর সেই ‘থোর বরি খাড়া, আর খাড়া বরি থোর!’ মানে আবার ঘুরে ফিরে সেই ‘পঞ্চ পান্ডবের’ হাত ধরেই মাথা তুলে দাঁড়ানো।
বাকি ক্রিকেটারদের পারফর্ম্যান্স ও অবদানকে এতটুকু খাটো না করেই বলা। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা, বিশ্বস্ততা আর কার্যকরিতা- সবই মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহই। বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটে একসঙ্গে শতাধিক ম্যাচ খেলা এই ‘টপ ফাইভ’ই টিম বাংলাদেশের প্রাণ, প্রধান চালিকাশক্তি।
Advertisement
বাংলাদেশ সব ফরম্যাটে ৮০ ভাগেরও বেশী ম্যাচ জিতেছে ঘুরে ফিরে ঐ পাঁচজনের কারো না কারো হাত ধরে। ধরাবাহিকভাবে প্রায় একযুগ তারা অমন অসাধারণ পারফর্ম করে দলের সাফল্যে সর্বাধিক অবদান রেখেছেন বলেই ভক্ত ও সমর্থকদের প্রধান নির্ভরতা এ ‘পঞ্চ পান্ডব’। সবার মুখে তাই অকুন্ঠ প্রশংসা তাদের।
কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য বাংলাদেশের বর্তমান ইংলিশ কোচ স্টিভ রোডস ‘পঞ্চ পান্ডব’ অত বড় করে দেখতে নারাজ। বাংলাদেশ যে ঐ পাঁচ সিনিয়র ও পরিণত ক্রিকেটারের ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল, তারাই যে প্রধান চালিকাশক্তি- স্টিভ রোডস তা মানতে রাজি নন। শুরুতে মাশরাফি, সাকিব, তামিম ও মুশফিকের প্রশংসা করলেও সময়ের প্রবাহতায় বদলে গেছে স্টিভ রোডসের মানসিকতা ও কথাবার্তার ধরন।
এখন তার মনে হয় ‘পঞ্চ পান্ডব’ নিয়ে বেশীই মাতামাতি হয়। পাচ সিনিয়র ক্রিকেটারকে একটু বেশীই বড় করে দেখা হয় এবং বাংলাদেশ শুধু তাদের ওপরই নির্ভরশীল- সে কথাও ঠিক নয়।
আজ টিম হোটেলে মিডিয়ার সাথে আলাপে অনেক কথার ভীড়ে পাচ সিনিয়র ক্রিকেটার প্রসঙ্গ আসতেই স্টিভ রোডস বলে বসেন, ‘আমি বুঝি না কেন সবাই ‘বিগ ফাইভ’কে নিয়ে এত কথা বলে? তবে আমি অমন বলি না। আমি সেভাবে চিন্তাও করি না। আমার সবসময় মনে হয় আমরা একটি দল এবং আমাদের একটি স্কোয়াড আছে। সেই পাঁচজন ঐ স্কোয়াডেরই অংশ।’
Advertisement
এ বিষয়ে আরও অনেক কথাই বলেছেন স্টিভ রোডস। এক পর্যায়ে মিরাজ, সৌম্য, লিটন ও মোস্তাফিজের নাম ধরে কোচ স্টিভ রোডস বোঝানোর চেষ্টা করলেন, এই চার তরুণও উঠে আসছে, এসেছেও। তারাও এখন নিয়মিত পারফর্ম করছে এবং দলের সাফল্যে অবদান রাখছে। তাই তিনি শুধু পঞ্চপান্ডবকেই সব কৃতিত্ব দিতে নারাজ।
আর তাই তো স্টিভ রোডসের মুখে এমন কথা, ‘মিরাজ এখন অবিশ্বাস্য ফর্মে আছে। সে এখন অসাধারণ বোলিং করছে। সব ফরম্যাটেই মিরাজ দারুণ বোলিং করছে। বিশেষ করে গতকালকের ম্যাচেও তার বোলিং ছিল দুর্দান্ত।’
মিরাজকে একজন সম্ভাবনাময় তরুণ অলরাউন্ডারের প্রতিমূর্তি উল্লেখ করে স্টিভ রোডস বলেন, ‘মিরাজ ক্রমেই অলরাউন্ডার হয়ে উঠছে। এই তো এশিয়া কাপে দলের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যাট হাতে ইনিংসের সূচনাও করেছে। সৌম্য সরকার আবার ফর্মে ফিরে এসেছে। লিটন দাস একজন মারাত্মক উইলোবাজ। বড় ম্যাচে সে তার সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছে। এছাড়া আরও পারফর্মার আছে যারা ভাল খেলছে এবং দলের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আমি বুঝি না কেউ মোস্তাফিজুর রহমানের কথা বলছে না। একদিনের ক্রিকেটে সে যে কত ভাল বোলার এবং ডেথ ওভারে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার তা আমলেই আনা হচ্ছেনা। তাকে কি ঐ পাঁচে রাখা হয়েছে?’
এই বলে স্মিত হেসে বলেন, ‘আমার মনে হয় না কেউ তাকে টপ ফাইভে রাখেন।’ মিডিয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘মিডিয়াকে বুঝতে হবে আমাদের দলটি ১১ জনের এবং স্কোয়াডটি ১৫ থেকে ১৬ জনের। চার বা পাঁচ জনের নয়।’
স্টিভ রোডস সেভাবেই ভাবতে চান এবং সবাইকেও অমন ভাবে দেখার কথা বলেন। তার ভাষায় বিষয়টিকে সেভাবে তরুণদের ওপর থেকে যেমন চাপ কমবে এবং বড়দের ওপর থেকেও চাপ কমে যাবে। এ ইংলিশ কোচের শেষ কথা হলো, ‘আমাদের কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রিকেটারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পুরো দলের গভীরতা বাড়ানোর চিস্তা ও চেষ্টা করতে হবে। সেটাই আমাদের সামনে অগ্রসর হতে সাহায্য করবে।’
এআরবি/এসএএস/আরআইপি