বিনোদন

বিশ্বসুন্দরী হওয়ারও কিছু কৌশল আছে : ঐশী

অনেকটা সমালোচনা মাথায় নিয়েই পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর চীন দেশে। সেখানে লড়েছেন বিশ্বের ১১৭টি দেশের সেরা সুন্দরীদের সাথে। সেখান থেকে নিজেকে নিয়ে যান তিনি সেরা ৩০ জনের তালিকায়।

Advertisement

এই ৩০ জন নিয়েই অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার ফাইনাল। প্রথম বাংলাদেশি মেয়ে হিসেবে ফাইনালে নিজের নাম লিখিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। নজর কাড়েন দেশবাসীর। সবকিছু ভুলে গিয়ে ঐশীও দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানালেন তাকে সাপোর্ট করার জন্য।

আজ শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে এফডিসিতে অন্তর শোবিজের আয়োজনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ঐশী। তিনি কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গেও। লিখেছেন লিমন আহমেদ-

জাগো নিউজ : প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার ফাইনালে যখন নিজেকে দেখলেন, তখনকার অনুভূতি কী?ঐশী : এটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। অনেক এলোমেলো একটা অবস্থায় আমি চীনে গিয়েছিলাম। ডেঙ্গুতেও আক্রান্ত ছিলাম। সুস্থ হয়ে মূল আসরে যেতে পারবো কী না সেই টেনশানও ছিলো। এমন অবস্থায় আসলে এত প্রত্যাশা ছিলো না।

Advertisement

নিজের নাম যখন শুনলাম সেরা ৩০ জনের তালিকায় টিকে গেছি, আনন্দে আত্মহারা হয়েগিছলাম। বিশ্বাসই হচ্ছিলো না। প্রস্তুতির অভাবে কিছুটা হতাশা ছিলো আমার। সেটা ওভারকাম করে যেটুকু পেয়েছি সেটুকু আমার কাছে জীবনের সেরা পাওয়া। এখন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।

জাগো নিউজ : প্রস্তুতিতে তুলনামূলক পিছিয়ে থেকেও অচেনা একটা পরিবেশে, অচেনা সব মানুষদের ভিড়ে কীভাবে সেই হতাশা ওভারকাম করলেন?ঐশী : মানিয়ে নিয়ে। আমি খুব দ্রুত ওখানে মানিয়ে নিতে পেরেছি। সবার সঙ্গে মিশতে পেরেছি। আমাকে সবাই খুব পছন্দ করতো। আদর করতো। হতাশা নিয়ে যাত্রা করলেও চীনে গিয়ে সবকিছুই কেমন যেন বদলে যেতে লাগলো। নিজের মধ্যে একটা অদ্ভূত আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাচ্ছিলাম। সেই আত্মবিশ্বসটাই আমাকে অনেকের চেয়ে এগিয়ে দিয়েছে বলে আমি মনে করি।

শুধু আমি মনে করি না, অনেক প্রতিযোগী ও আয়োজকদের অনেকেই আমাকে আত্মবিশ্বাসের জন্য খুব প্রশংসা করতো। আমাকে তারা ‘ন্যাচারাল বিউটি’ বলতো। এটা আমাকে পরে আরও সাহস যুগিয়েছিলো। সেজন্যই হেড টু হেড প্রতিযোগিতায় ভালো করতে পেরেছিলাম। জিতে গিয়ে ফাইনালিস্টদের তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছিলাম।

জাগো নিউজ : দেশ ফেরার পর নিজের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের প্রতিক্রিয়া কেমন দেখছেন?ঐশ্বী : সবাই খুব খুশি। আমাকে উৎসাহিত করছেন সামনে আরও ভালো কিছু যেন করতে পারি। আসলে আমি জীবনে অনেক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। আমার পরিবার জানে আমি হেরে যাওয়াটা মেনে নিতে পারি না। তাই বাবা-মা সবাই টেনশান করছিলেন মিস ওয়ার্ল্ড থেকে হেরে গেলে সেটা মানিয়ে নিতে পারবো কী না।

Advertisement

কারণ চীনে তো আর কেউ ছিলেন না আমার সঙ্গে। তবে তারা টের পেয়েছেন যে ছোট্ট সেই ঐশী আর নেই। তার মধ্যে ম্যাচুরিটি এসেছে।

জাগো নিউজ : সারাদেশের মানুষ এখন একনামে আপনাকে চেনে। কাছের মানুষদের মধ্যে আপনার এই খ্যাতির প্রভাবে কোনো পরিবর্তন এসেছে?ঐশী : আমার চোখে এখন পর্যন্ত তা ধরা পড়েনি। সবাই আগের মতোই আছে। যোগাযোগ করছে, প্রশংসা করছে। তাছাড়া, খ্যাতির কারণে আমার নিজেরও তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যেমন ছিলাম তেমনই আছি।

জাগো নিউজ : আপনার গ্রামের বাড়ি বরিশালের পিরোজপুরে। আপনাকে নিয়ে সেখানেও বেশ উৎসাহ আর আনন্দ বয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন না?ঐশী : অবশ্যই। সবাই আমার জন্য দোয়া করেছেন এটাই আমার পাওয়া। আমি অবশ্যই বরিশালে যাবো। কিছু ঝামেলা আছে, ভার্সিটিতে ভর্তিরও চেষ্টা করছি। এগুলো মিটিয়ে তারপরই যাবো।

জাগো নিউজ : চীনে মজার কোনো অভিজ্ঞতা?ঐশী : অনেক অভিজ্ঞতা আছে। বলতে গেলে লিখে শেষ করতে পারবেন না। আমি আসলে পুরো জার্নিটাই খুব এনজয় করেছি। আমার অনেক ভালো কিছু বন্ধু হয়েছে। যে বিশ্বসুন্দরী হলো সেই ভেনেসাও আমাকে খুব পছন্দ করতো। অনেক মজার অভিজ্ঞতা আছে আমাদের। ও কথা দিয়েছে বাংলাদেশে আসবে।

তবে গত বছরের বিশ্বসুন্দরী ভারতের মানসী চিল্লারের সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতাগুলো সবচেয়ে মজার, সবচেয়ে আনন্দের। এই আসরে যতোজন প্রতিযোগীর সঙ্গে উনি মিশেছেন তাদের মধ্যে আমাকেই সবথেকে বেশি পছন্দ করতেন উনি।

আমি তাকে দিদি বলে ডাকতাম। একবার জানতে চাইলাম, ‘আমাকে কেন এত আদর করো দিদি? সবচেয়ে কোন বিষয়টা আমার ভালো লাগে তোমার?’ তিনি জবাবে বলেছিলেন, আমার আত্মবিশ্বাস, সবসময় স্বাভাবিক থাকার গুণটা তার খুব ভালো লাগে। আমি তার সাথে অনেক মজা করেছি। বিদায় নেয়ার সময় আবেগাক্রান্ত ছিলাম। হয়তো দেখা হবে আবার আমাদের।

জাগো নিউজ : যদি জানতে চাই এই আসরে আপনার বিশেষ প্রাপ্তি কী?ঐশী : শুধু মুকুটটাই জিতিনি। এছাড়া সবই বিশেষ প্রাপ্তি। এমন কিছু হবে জীবনে সেটাই তো ভাবিনি। তবুও হয়েছে। এই প্লাটফর্ম তৈরি করে দেয়ার জন্য অন্তর শোবিজের স্বপন স্যার ও নাসরিন ম্যামের কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ।

জাগো নিউজ : আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?ঐশী : আমি পড়াশোনাটা শুরু করতে চাই। ভালো রেজাল্ট করেছিলাম এইচএসসিতে। পাবলিক ভার্সিটিতে ভর্তির জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। তারমধ্যেই এতকিছু ঘটে গের। পাবলিক ভার্সিটিতে ভর্তির সময় শেষ। তাই ভালো কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চেষ্টা করবো। নিয়মিতভাবেই পড়াশোনাটা শেষ করতে চাই।

আর আপনারা জানেন, অটিজম ফাউন্ডেশন করার ঘোষণা দিয়েছিলাম আমি। সেটি নিয়েও কাজ করবো। বিশ্বসুন্দরীর মূল আসরে অটিজমদের নিয়ে আমার কাজের বিষয়টি কিন্তু বেশ আলোচিত ছিলো।

জাগো নিউজ : শোবিজে কাজ করবেন না? বা নাটক-সিনেমায় কোনো কাজ করার ইচ্ছে কী নেই?ঐশী : অবশ্যই আছে। ভালো কাজের প্রস্তাব পেলে ও আমার সময়-সুযোগে যদি এক হওয়া যায় তবে অবশ্যই কাজ করবো আমি।

জাগো নিউজ : অন্তর শোবিজের অনুমতি ছাড়া এসব কাজ করতে পারবেন? নাকি কোনো রকম চুক্তিভিত্তিক প্রতিবন্ধকতা আছে?ঐশী : না। ওরকম কিছু নেই। তবে অন্তর শোবিজ আমার আবিষ্কারক। স্বপন চৌধুরী ও তার স্ত্রী নাসরিন ম্যাম আমার অভিভাবক। তাদের পরামর্শ ছাড়া কাজ করবো না আমি। আমি নিজেকে আজীবন অন্তর শোবিজের সদস্য ভাবতে চাই। ভালো কাজ হলে সবাই চাইবে আমি সেটা করি। সুতারাং কোনো প্রতিবন্ধকতার সুযোগ নেই।

জাগো নিউজ : আগামীতে যারা বাংলাদেশ থেকে বিশ্বসুন্দরী হতে চাইবে তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?ঐশী : বিশ্বের সব সেরা সেরা সুন্দরীদের হারিয়ে এই মুকুট পড়তে হয়। অনেক কঠিন একটি লড়াই। তবে বিশ্বসুন্দরী হওয়ারও কিছু কৌশল আছে। খুব ভালো প্রস্তুতি দরকার। আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। ন্যাচারাল সৌন্দর্যের যত্ন নিতে হবে।

বাহ্যিক সৌন্দর্যের গুরুত্ব আছে অবশ্যই। কিন্তু এই আসরে মনের সৌন্দর্যটাই বেশি গুরুত্ব পায়। সেইসঙ্গে ‘বিউটি পারপাস’ একটি বিষয় আছে। যেখানে একটা মেয়েকে বিশেষ কিছু কারণে সুন্দর বলা হয়। যেমন সামাজিক কার্যক্রম, দায়িত্ববোধ, মানিবকতা ইত্যাদি। এগুলোর দিকে মনযোগী হতে হবে। এলএ/জেআইএম