৩২০ ফুট গভীর গর্ত, দূর থেকে দেখলে মনে হবে ‘ইঁদুরের গর্ত’। কিন্তু আসলে ইঁদুরের গর্ত নয়। এমন অসংখ্য গর্ত আছে সেখানে। এমনই একটি গর্তে আটকা পড়েছে ১৩ জন মানুষ। দুদিন ধরে অর্থাৎ গতকাল শুক্রবার থেকে তাদের উদ্ধারে চলছে ব্যাপক অভিযান।
Advertisement
ঘটনাটি খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ মেঘালয়ের গুয়াহাটির পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে। অনেক দূর থেকে দেখলে মনে হবে একের পর এক ইঁদুরের গর্ত যেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কিন্তু কাছে গেলে বোঝা যায় সেগুলো ইঁদুরের গর্ত নয়। স্থানীয় গ্রামবাসীদের খোঁড়া গর্ত, যেখান দিয়ে প্রবেশ করে তারা অবৈধভাবে কয়লা উত্তোলন করে। গত ছয়দিন আগে এমন একটি গর্ত থেকে অবৈধভাবে কয়লা উত্তোলন করতে যান ওই ১৩ গ্রামবাসী। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেননি।
গত বৃহস্পতিবার তাদের নিখোঁজ হওয়ার খবর পৌঁছে জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন, রাজ্য দুর্যোগ প্রশমন ও নাগরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কাছে। শুক্রবার সকাল থেকে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শুরু করেন উদ্ধার তৎপরতা। তবে স্থানীয় প্রশাসন (পুলিশ) নিখোঁজ ১৩ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন। কারণ ৩২০ ফুট গভীর ওই গর্তে বেশিক্ষণ টিকে থাকার কথা নয় কারো।
এনডিআরএফের প্রায় ১০০ উদ্ধারকর্মী ও ডুবুরিরা নৌকার সাহায্যে পানিতে প্লাবিত ওই কয়লা খনিতে অভিযান চালাচ্ছেন। কর্দমাক্ত পানি ও খনির বর্জ্যের কারণে উদ্ধারকারীদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
Advertisement
কয়লা খনির কোনো নকশা না থাকা এবং এর ভেতরে একাধিক চেম্বার থাকায় ঠিক কোন স্থানে নিখোঁজ ১৩ গ্রামবাসী আটকা পড়েছেন তাও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেননি এনডিআরএফের উদ্ধাকর্মীরা। পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড়ে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ওই ১৩ জনের নিখোঁজের বিষয়টি তারা গত বৃহস্পতিবার সকালে জানতে পারেন। তারা জানান, স্থানীয়ভাবে খনন করা ওই কয়লা খনিগুলো অত্যন্ত পুরনো ও পরিত্যক্ত। স্থানীয় গ্রামবাসী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগুলো খনন করে কয়লা উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অত্যন্ত সংকীর্ণ ও আনুভূমিক হওয়ায় স্থানীয়ভাবে এগুলোকে ইঁদুরের গর্ত বলে অভিহিত করা হয়।
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা গণমাধ্যমকে জানান, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো নিখোঁজ ওই ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা। এজন্য সম্ভাব্য সব স্থানে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তাদের উদ্ধারে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানি, খনিগুলো অবৈধ এবং সেখান থেকে অবৈধভাবে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা অবশ্যই কার্যকর ব্যবস্থা নেব। ইতোমধ্যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে আগে উদ্ধার তৎপরতা সম্পন্ন হোক। এভাবে কয়লা উত্তোলন সমর্থনযোগ্য নয়। যারা এজন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, ওই ১৩ গ্রামবাসী কয়লা উত্তোলনের জন্য খনিতে প্রবেশের কিছু সময় পর পানিতে ভরে যায় এর মুখ। খনির প্রায় ৭০ ফুট গভীরে প্রবেশ করে পানি। পরে তারা স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দেন। প্রসঙ্গত, পরিবেশ আদালত ২০১৪ সাল থেকে এসব খনি অবৈধ বলে ঘোষণা করে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও এসব খনি থেকে কয়লা উত্তোলন বন্ধ হয়নি। খনির পাশেই নদী৷ সেই নদী থেকেই পানি প্রবেশ করে খনির ভেতরে।
Advertisement
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, নিখোঁজ ১৩ জনের মধ্যে তিনজন মেঘালয়ের লুমথারির বাসিন্দা। বাকি ১০ জনের অধিকাংশই পশ্চিম গারো পাহাড়ের অধিবাসী। একজন আসামের।
২০১২ সালে মেঘালয়ের এমনই একটি খনিতে আটকা পড়ে প্রাণ হারান ১৫ গ্রামবাসী।
এমএআর/এমকেএইচ