খেলাধুলা

সিলেটের অভিষেক ওয়ানডের সঙ্গে সিরিজও জিতলো বাংলাদেশ

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে আরও চার বছর আগে। টি-টোয়েন্টি, টেস্ট অনুষ্ঠিত হলেও এই স্টেডিয়ামের ভাগ্যে এতদিন ওয়ানডে ছিল না। অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের মধ্য দিয়ে ওয়ানডেতেও অভিষেক হয়ে গেলো স্টেডিয়ামটির। সেই অভিষেকেই ঐতিহাসিক জয় ধরা দিলো বাংলাদেশের হাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজের শেষ ম্যাচে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজটাও ২-১ ব্যবধানে জিতে নিলো টাইগাররা।

Advertisement

ঐতিহাসিক! কারণ, এই ম্যাচটি ছিল সিলেটের স্টেডিয়ামের প্রথম ওয়ানডে। এছাড়া এই মাঠে এর আগে দুটি ম্যাচ খেলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। একটি টি-টোয়েন্টি, একটি ওয়ানডে। কোনোটিতেই জয় পায়নি টাইগাররা। বরং, বড় ব্যবধানে হেরেছিল দুটিতেই। অবশেষে ওয়ানডে দিয়ে সিলেটেও নিজেদের বিজয় কেতন ওড়ালো বাংলাদেশ।

১৯৯ রানের লক্ষ্য এই লক্ষ্য পাড়ি দিতে শুধুমাত্র লিটন দাস আর সৌম্য সরকারের উইকেটই হারাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ৩৮.৩ ওভারেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় টাইগাররা। অর্থ্যাৎ ৬৯ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে বাংলাদেশ।

৮১ রানে অপরাজিত ছিলেন তামিম ইকবাল। ৮১ বলে ৮০ রান করে আউট হন সৌম্য সরকার। ১৬ রানে অপরাজিত থেকে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়নে মুশফিকুর রহীম। লিটন দাস করেন ২৩ রান। রোভম্যান পাওয়েলের বলকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে জয় উপহার দেন তামিম ইকবাল।

Advertisement

সময়মতই জ্বলে উঠলেন সৌম্য সরকার। অবশেষে রানের দেখা পেয়েছেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত তার ব্যাট হাসলেও সৌম্য সরকার জাতীয় দলে সুযোগ পেলেই কেন যেন চুপসে যান। রানের খাতা খোলার পরপরই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসতে হয়; কিন্তু সিলেটে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ঠিকই কথা বললো তার ব্যাট।

৬২ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করার পর ৮১ বলে খেললেন ৮০ রানের এক দুরন্ত ইনিংস। ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে মেরেছেন ৫টি ছক্কার মার। তার এই টর্নেডো ব্যাটিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গে গড়ে ওঠে অনবদ্য ১৩৬ রানের জুটি। যেটার ওপর ভর করে সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যেতে পারলো বাংলাদেশ।

৮০ বলে ৮০ রান করার পর ৮১তম বলে এসে কিমো পলের বলে বোল্ড হয়ে গেলেন সৌম্য। তার ব্যাট এবং প্যাডের ফাঁক গলে এসে স্ট্যাম্পে আঘাত হানে বল। সৌম্য যখন আউট হন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য। তবুও বলতে হবে, তার আউটটা ছিল বোলারের সাফল্য।

সৌম্য যখন আউট হন তখন বাংলাদেশের রান ছিল ১৭৬। জয়ের জন্য বাকি ২৩ রান অনায়াসেই তুলে নেন তামিম এবং মুশফিকুর রহীম। সৌম্য ঝড় তুলে আউট হয়ে গেলেও শান্ত এবং ধীরস্থির হয়ে ব্যাটিং করে যান তামিম ইকবাল। তিনি খেলেছেন ১০৪ বল। ৯টি বাউন্ডারি মারলেও কোনো ছক্কার মার ছিল না তার ব্যাটে। বাউন্ডারি মেরেই তিনি বাংলাদেশের রানকে নিয়ে যান ২০২ এর ঘরে।

Advertisement

জয়ের জন্য ১৯৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সূচনাটা ভালো করে দিয়ে গিয়েছিলেন ওপেনার লিটন দাস। তামিম ইকবালের সঙ্গে খেলে দিয়েছেন প্রথম ১০ ওভার। জুটি গড়েছিলেন ৪৫ রানের। যদিও নিজের ভুলে সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন।

আগের ম্যাচে ক্যারিবীয় পেসার ওশান থমাসের ইয়র্কার পায়ের গোড়ালিতে লাগিয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল লিটন দাসকে। ব্যাটিংটা করতেই পারেননি তিনি। যদিও ইনজুরিটা মারাত্মক ছিল না। যে কারণে সিরিজের শেষ ম্যাচেও খেলতে নামতে পারলেন তিনি।

শুধু মাঠে নামাই নয়, ক্যারিবীয়দের ছুড়ে দেয়া ১৯৯ রানের জবাব দিতে নেমে তামিম ইকবালের সঙ্গে উড়ন্ত সূচনা করেছিলেন লিটন দাস। ক্যারিবীয় বোলার কেমার রোচ, রস্টোন চেজ কিংবা কিমো পলদের ভালোই সামাল দিচ্ছিলেন লিটন-তামিম।

কিন্তু ছন্দপতনটা ঘটালেন লিটন নিজেই। কিমো পলের ১১তম ওভারের প্রথম বলটি সুইপ করতে গিয়েই ধরা খেলেন তিনি। বল ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় মিডঅনে। সেখানে ফিল্ডার দাঁড়ানো ছিল রোভম্যান পাওয়েল। সহজেই বলটি জমা পড়ে পাওয়েলের হাতে। ৩৩ বলে ২৩ রান করে ফিরে গেলেন লিটন দাস। ৫টি বাউন্ডারির মার ছিল তার ব্যাটে।

লিটনের আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন সৌম্য সরকার। জুটি বাধেন তামিমের সঙ্গে। দু’জনের ব্যাটে ১৩৬ রানের দারুণ একটি জুটি গড়ে তোলেন সৌম্য সরকার। ৩৬তম ওভারে এসে ভাঙে এই জুটি।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সাই হোপের অনবদ্য সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ১৯৮ রান। ১৩১ বলে ১০৮ রান করে অপরাজিত থাকেন সাই হোপ। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করে তিনিই বাংলাদেশের জয় কেড়ে নেন। এবারও তিনি সেঞ্চুরি করলেন।

হোপ ছাড়া ক্যারিবীয়দের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মারলন স্যামুয়েলস, মাত্র ১৯। ১২ রান করেন কিমো পল এবং ১০ রান করেন ড্যারেন ব্র্যাভো। বাকিরা দুই অংকের ঘরও স্পর্শ করতে পারেননি। ৪ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং ২টি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসা ও মাশরাফি বিন মর্তুজা। ১ উইকেট নেন সাইফুদ্দিন। ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

আইএইচএস/এমএস