বিশেষ প্রতিবেদন

আহত অভিনেতাকে নিয়ে অসহায় স্ত্রী-সন্তান

কয়েক মাস হলো চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারি না। মেয়েটার স্কুলের বেতন দিতে পারছি না। সময় মতো বাসা ভাড়া দিতে পারি না। ঠিকমতো বাজারও করতে পারি না।

Advertisement

সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেছে আমার। একটি দুর্ঘটনা আমার সুখের সংসারটাকে দুর্বিষহ করে তুলছে। অথচ কিছুদিন আগেও সবকিছু ঠিক ছিল। স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান লিটন সকালে উঠেই কাজে চলে যেতেন। মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মহিমাও নিয়মিত স্কুলে যেত। কিন্তু এখন সে স্কুলে যেতে চায় না। সে প্রতিনিয়ত সংসারের করুণ দশা দেখতে দেখতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে লেখাপড়ার প্রতি।

চার মাস হলো আমার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঘরে বসা। প্রতিদিন তার পায়ের ক্ষত স্থান ড্রেসিং, দামি দামি ইনজেকশন ও ওষুধসহ প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ সংসারে আয় নেই এক টাকাও। এমন কোনো আত্মীয় বাদ নেই যার কাছে টাকা ধার নেয়া এবং সাহায্য নেয়া বাকি নেই। ডাক্তা বলেছেন, দ্রুত পায়ের প্লাস্টিক সার্জারি না করলে গোড়ালি পর্যন্ত পা কেটে ফেলতে হবে। পা কেটে ফেললে আমাদের হয়তো পথে বসতে হবে। কারণ, আমার স্বামী একজন মঞ্চ অভিনেতা। ১৯৮৫ সালে নাট্য সংগঠন মেঘদূতের মাধ্যমে মঞ্চ নাটকের সঙ্গে জড়িত। গাইবান্ধা থিয়েটার থেকে একের পর এক সফল মঞ্চ নাটক, পথনাটক করেছেন তিনি।

উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো- শ্যামল ভাদুড়ী, মনোজমিত্রের, বাঁশ, ধস, নৈশভোজ, মেশিন, বাজদর্শন নরক গোলজার ও গরুরু গপপোসহ অসখ্য নাটক তিনি করেছেন। এছাড়া রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার শিল্পকলা একাডেমিতে অনেক মঞ্চ নাটক করেছেন। সেখানকার সবাই তাকে চেনেন। তিনি রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ে অনুবাদক হিসেবে কাজ করতেন। এসব থেকে যা আয় হতো তাই দিয়ে ভালো চলতাম আমরা।

Advertisement

স্বামীর চিকিৎসার সহযোগিতার জন্য গণমাধ্যমে একটি মানবিক সংবাদের আকুতি নিয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজের কার্যালয়ে এসেছিলেন মঞ্চ অভিনেতা মোস্তাফিজুর রহমান লিটনের স্ত্রী নাহিন সুলতানা। সেখানেই জাগো নিউজের এই প্রতিবেদকের কাছে এভাবে সংসারের বর্তমান অবস্থার বর্ণনা করেন তিনি।

নাহিন সুলতানা বলেন, সারাদেশে যখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন চলছিল। এ সময় আমার স্বামী দৈনিক বাংলা মোড়ে রাস্তা পাড় হচ্ছিলেন। বিপরীত দিক থেকে ছাত্রছাত্রীদের ভয়ে একটি বাস দ্রুতগতিতে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় লিটনের (স্বামী) পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়।

তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে দ্রুত অপারেশন করে তার পায়ের পাতার অর্ধেকটা কেটে ফেলে দেয়। সেখানে ২০ দিন ভর্তি থাকার পর তাকে শাহবাগে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কারণ তখনও তার ডায়াবেটিস কমছিল না। সেখান থেকে তিনদিনের মাথায় তাকে এলিফ্যান্ট রোডের জেনারেল মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার আরেকটি অপারেশন করা হয়।

তিনি বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার চিকিৎসার জন্য। ডাক্তার বলেছেন, পুরোপুরি সুস্থ করতে তার পায়ের প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে এজন্য দুই লাখ টাকা খরচ হবে। অথচ আমার কাছে কোনো টাকা নেই। তাই স্বামীর প্রেসক্রিপশনসহ বের হয়েছি সংবাদপত্রে সহযোগিতার নিউজ করানোর জন্য। যদি কেউ এগিয়ে আসেন এই ভেবে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী সুস্থ হয়ে উঠলে আবারও কাজে ফিরতে পারবেন। স্কুল যাওয়া শুরু করবে মেয়ে মহিমা। হয়তো সংসারে সুখ ফিরে আসবে। অথচ তার আয় বন্ধ হয়ে গেলে শেষ হয়ে যাবে একটি পরিবারের স্বপ্ন।

স্বামীসহ নাহিন সুলতানা বর্তমানে রাজধানীর কদমতলি থানার শনির আখড়া এলাকার পলাশপুর পূর্ব দনিয়ায় একটি টিন শেড বাসায় ভাড়া থাকেন। বর্তমানে তিনি এলাকার ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের টিউশনি করে সংসার চালাচ্ছেন।

মঞ্চ অভিনেতা মোস্তাফিজুর রহমান লিটনের সঙ্গে কথা বলতে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৯৬৮৮৫২৭৮৭ (বিকাশ) নম্বরে। এছাড়া সহযোগিতা করতে পারবেন মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, সঞ্চয়ী হিসাব নং ১০৫.১৫১.২৪৮৭৩, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মতিঝিল বৈদেশিক বাণিজ্য শাখায়।

এমএএস/এমএস