শীতের সকালে আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে ওঠাটা সহজ কাজ নয়। ভোরের পর যে স্নিগ্ধ আবহাওয়া, সে শীতল বাতাসে ঘুমটাও হয় বেশ। কিন্তু আজ (শুক্রবার) সিলেটবাসীর এই আরামের ঘুম বিসর্জন দিতেও যেনো গায়ে লাগেনি। ভোরের আলো ফুটতেই গরম কাপড় গায়ে চাপিয়ে চলে এসেছেন লাক্কাতুরায় অবস্থিত সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
Advertisement
কেউ এসেই দাঁড়িয়ে গিয়েছেন টিকেট কেনার লাইনে, কেউবা আবার সারিবদ্ধ হয়েছেন স্টেডিয়ামে ঢোকার প্রবেশপথে। বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটি শুরু হলো বেলা বারোটায়। জানা ছিল, স্টেডিয়ামে দর্শকদের জন্য প্রবেশদ্বার খোলা হবে ঠিক দশটায়। কিন্তু এরও ঘণ্টাখানেক আগেই কুয়াশামাখা সকালের তোয়াক্কা না করে সিলেটের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকরা ভিড় জমিয়েছেন লাক্কাতুরায়।
নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও আমেজটা তুঙ্গে থাকলেও, একদম কমেনি বাংলাদেশের খেলার আবেদন। বৃহস্পতিবার কাকডাকা ভোরেই টিকিট কেনার জন্য বিশাল লাইন দেখা গিয়েছে লাক্কাতুরার প্রধান গেইটের সামনে। তা থেকেই ধারণা পাওয়া গিয়েছিল, শুক্রবার লোকে লোকারণ্য হতে চলেছে সিলেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
শুক্রবার সময় হাতে নিয়ে ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাদুয়েক আগে এসে দেখা গেল সেই অনুমানেরই প্রতিফলন। স্টেডিয়ামের প্রধান গেইটের সামনে প্রায় তিন হাজার মানুষের ঢল। তাদের প্রত্যেকেই জানেন এতো বেশি টিকিট বাকি নেই ম্যাচের, তবু কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণের আশায় দাঁড়িয়ে আছেন হাজার তিনেক মানুষের লাইনে। এর অবশ্য বিশেষ কারণও রয়েছে।
Advertisement
দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের বড় একটা অংশের ধারণা, আজকের এই ম্যাচটিই দেশের মাটিতে মাশরাফি বিন মর্তুজার শেষ ম্যাচ। ধারণাটি অমূলক নয় মোটেও। যদি ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের পরই অবসর নিয়ে নেন মাশরাফি, তবে আর দেশের মাটিতে খেলা হবে না তার। তাই নিজেদের প্রিয় তারকার খেলা শেষবারের মতো দেখতে ঢল নেমেছে স্টেডিয়ামের।
কথা হলো তেমনই একজনের সঙ্গে। যার নাম আশরাফ, কিন্তু নিজেকে মাশরাফ বা মাশরাফি পরিচয় দিতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। লাইনের ধাক্কাধাক্কির মধ্যেও সাংবাদিক পরিচয় দেয়ায় কথা বলেন দু'লাইনে, 'আসলে মাশরাফি ভাইকে আবার দেখতে পাবো কি-না তার তো নিশ্চয়তা নেই। তাই ভাইকে আরও একবার নিজের চোখের সামনে দেখে নিতে চাই।'
বোঝা গেলো, মাশরাফির খেলা আগেও অনেকবার দেখেছেন তিনি। এবার এসেছেন 'যদি' এটিই হয় দেশের মাটিতে অধিনায়কের শেষ ওয়ানডে- সে শঙ্কা মাথায় নিয়ে। এমন আরও হাজার হাজার মানুষ ভোর থেকেই দাঁড়িয়ে আছেন লাইনে, একটি টিকিটের খোঁজে। কিছুক্ষণ বাইরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকতে দেখা গেলো বিভিন্ন গ্যালারির সামনেও একই লম্বা লাইন। বিভিন্ন নিরাপত্তা স্তর পেরিয়ে গ্যালারিতে ঢুকতে পারাই যেনো লাইনে দাঁড়ানো মানুষের চূড়ান্ত সফলতা।
এসএএস/এমএমআর/পিআর
Advertisement