খেলাধুলা

উইকেটের চরিত্র নিয়ে দ্বিধা-সংশয়ে স্বাগতিকরাই!

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যাপ্টেন রভম্যান পাওয়েল কথা বলবেন বেলা দেড়টায়। আর টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজার প্রেস কনফারেন্স হবে বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটায়।

Advertisement

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ক্যারিবীয় অধিনায়ক কথা বলে চলে গেলেন। কিন্তু দুপুর দুইটা পেরিয়ে আড়াইটায়ও দেখা মেলেনি বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফির। হঠাৎ মিডিয়া কমিটির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেয়া হলো, বাংলাদেশের প্রেস কনফারেন্স শুরু হতে দেরি হবে আরও। আপনারা বরং দুপুরের খাবার সেরে নিন।

তারপর বিকেল তিনটারও পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আজকের ম্যাচ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কথোপকথন পর্বে আসলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তাৎক্ষনিকভাবে স্বাগতিক অধিনায়কের প্রেস কনফারেন্স দেরিতে শুরু নিয়ে মিডিয়ায় তেমন কোন কথা ওঠেনি।

ভাবা হয়েছিল, হয়ত হোটেল থেকে মাঠে আসতেই দেরি হয়েছে কিংবা টিম হোটেল থেকে মাঠে পৌঁছাতে রাস্তায় জ্যামের কারণেই বুঝি বিলম্ব। কিন্তু পরে জানা গেল কারণ ভিন্ন। আসলে মাঠে প্র্যাকটিসে আসার আগে হোটেলে টিম মিটিংয়ে বসেছিল বালাদেশ। মাঠে আসার পর ড্রেসিং রুমেও হয়েছে আরেক প্রস্থ মিটিং। সে কারণেই অধিনায়ক মাশরাফির দেরিতে আসা।

Advertisement

কিন্তু কি কারণে দুই দফা টিম মিটিং? নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর-সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উইকেটের চরিত্র, গতিপ্রকৃতি নিয়ে রাজ্যের সংশয় স্বাগতিকদের। সেজন্যই মূলতঃ উইকেট নিয়েই দুই দফা মিটিংয়ে বসা।

মোদ্দা কথা, সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ,ক্যারিবীয় ফাস্টবোলিং; বিশেষ করে ওশানে থমাসের প্রচন্ড গতির চেয়েও টিম বাংলাদেশের চিন্তায় বাসা বেঁধেছে উইকেট ।

এখন যত চিন্তা উইকেট নিয়ে। কেমন হবে পিচের চরিত্র? স্লো-লো, না ফ্ল্যাট-নির্ভেজাল ব্যাটিং পিচ? নাকি স্পোর্টিং উইকেট? তা নিয়েই সংশয়।

সংশয় থাকবেই না কেন? এ মাঠে স্বাগতিকদের ট্র্যাক রেকর্ড যে খারাপ! এ বছর একটি করে টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট হয়েছে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। প্রথমটি ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি। ঐ ম্যাচে ৭৫ রানের বড় হার থেকেছে সঙ্গী। আর গত নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে ঘটেছে চরম ভরাডুবি (১৫১ রানের বড় ব্যবধানে হার)।

Advertisement

বলা যায়, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ৭৫ রানের হার ৫০ ওভারের ম্যাচে দেড়শো রানের ব্যবধানে হারের সমান। তারপরও ফেব্রুয়ারিতে লঙ্কানদের কাছে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের হারটা খুব বড় করে দেখা হচ্ছে না। কারণ তখন যে কোনো কারনেই হোক বাংলাদেশ টিম ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছিল।

ঘরের মাটিতে তিন জাতি টুর্নামেন্টের ফাইনালে লঙ্কানদের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের পর থেকেই হঠাৎ ছন্দপতন। এরপর টেস্ট সিরিজ পরাজয় এবং তারপর টি-টোয়েন্টি‘তেও নাকাল হওয়া। ধরেই নেয়া যায়-তখন পুরো দল ফর্ম হারিয়ে ফেলেছিল, তাই ২০ ওভারের ম্যাচে লঙ্কানদের কাছে অত বড় ব্যবধানে হার মানা।

তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে হারটাই চিন্তার খোরাক। ঐ টেস্টের আগে সিলেটের উইকেট সম্পর্কে ধারণা ছিল না স্বাগতিক ম্যানেজমেন্টের। স্পিন সহায় পিচ ভেবে নামা হলো তিন স্পিনার আর এক পেসার নিয়ে। কিন্তু মাঠে ঘটলো উল্টো ঘটনা। জিম্বাবুয়ান ফাস্টবোলার কাইল জারভিস পার্থক্য গড়ে দিলেন। জারভিসের বিধ্বংসী ফাষ্টবোলিংয়ের মুখে শোচনীয় পরাজয় ঘটলো।

ঐ টেস্টের পর কোচ স্টিভ রোডস অকপটে স্বীকার করেছিলেন, 'আমরা পিচের চরিত্র বুঝতে ভুল করেছি। উইকেট এমন হবে, তা ভাবিনি আমরা।'

সেই হারটা নিয়ে এখনও দুশ্চিন্তা কাটেনি। আর সে কারণেই আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে উইকেট নিয়ে যত চিন্তা।

নিয়ম ও রীতি মেনেই চুপ সিলেট স্টেডিয়ামের চিফ কিওরেটর সঞ্জিব আগারওয়াল। উইকেটের আচরণ ও গতি প্রকৃতি নিয়ে প্রেসের সাথে একটি কথাও বলেননি এ ভারতীয়। তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট কোনোভাবেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষের সেই পেস বোলিং ফ্রেন্ডলি উইকেট চাচ্ছে না।

সেবার টেস্টে সর্বনাশ ঘটিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ান কাইল জারভিস। আর এবার ওয়ানডে সিরিজে ইতিমধ্যেই মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্টবোলার থমাস। কাজেই উইকেটে সেই টেস্টের মত পেস ও বাউন্স থাকা মানেই বাড়তি চিন্তা।

তাই বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট খুব করে চেয়েছে, উইকেট নিজেদের উপযোগী করে তুলতে। মানে শেরে বাংলার মত স্লো ও লো ট্র্যাকে খেলতেই আগ্রহী স্বাগতিকরা।

গত মাসে টেস্টে বল উঠেছে বেশ। পেসারদের বল ভালো উচ্চতায় উঠেছে। তার কারণও আছে। সিলেটে পাহাড় ও টিলা বেশী। তাই মাটি এমনিতেই তুলনামূলক শক্ত। তাই পিচে বাউন্স বেশি। এবার ওয়ানডেতেও তেমন বাউন্স থাকলে থমাস-রোচদের খেলা কঠিন হবে। সেই চিন্তায় পিচের চরিত্র বদলানোর চেষ্টা।

যতদূর জানা গেছে, উইকেটের চরিত্র পাল্টাতে গিয়ে পিচ অনেকটাই স্লো হয়ে গেছে। এখন বল পড়ে থেমে আসার সম্ভাবনাই বেশি। বাউন্সও নাকি কমবে।

সেদিক চিন্তা করেই বোধ হয় কাল রাতে জাগো নিউজের সাথে আলাপে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু রুবেলের বদলে সাইফ উদ্দীন কিংবা বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল অপুকে খেলানোর কথা বলেছিলেন। নান্নুর শেষ কথা ছিল, শুক্রবার মাঠে গিয়ে উইকেটের চেহারা শেষবার দেখেই নাকি রুবেলের বিকল্প ঠিক করা হবে।

সন্ধ্যার পর শিশির পরে। কুয়াশাও থাকে প্রচুর। সেখানে এক স্পিনার বাড়তি খেলানোয় আছে ঝুঁকি। কিন্তু উইকেট স্লো হলে তিন পেসার খেলানোর স্বার্থকতাও থাকবে কম। তাই দ্বিধা-সংশয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট।

এআরবি/এমএমআর/পিআর