খেলাধুলা

নেইমার ছাড়া ব্রাজিল জিতবে কি?

১৯৬২, পেলে ‘ইনজিওরড’,  ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতালেন গ্যারিঞ্চা ও আমারিল্দো। কিন্তু ব্রাজিল দলে এবার গ্যারিঞ্চা হওয়ার মতো কেউ আছেন কি? অন্যদিকে, ব্রাজিল আজ আগের চেয়ে অনেক বেশি মারকুটে; জার্মানি আগের চেয়ে কম আগ্রাসী।সব মিলিয়ে এই সেমিফাইনাল যদি ৯০ ছেড়ে ১২০ মিনিটের দিকে এগোয়, এমনকি পোনাল্টি শুটআউটে পৌঁছায়, তাহলে যেন কেউ আশ্চর্য না হন। অপরদিকে নেইমারের অনুপস্থিতি মানেই যে খেলাটা ‘ওয়াকওভার` হবে, এটা জার্মান দলের কেউই মনে করেন না: কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ তো নন-ই, তাঁর স্টার খেলোয়াড় বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার-ও নন।দলের ম্যানেজার অলিভার বিয়ারহোফ বলেছেন এবং শোয়াইনস্টাইগার বলেছেন যে, তাঁরা পূর্ণশক্তির ব্রাজিল দলের বিরুদ্ধে খেলতে – এবং জিততে পারলে খুশিই হতেন। কিন্তু নেইমার বাদ দিয়েও এই ব্রাজিল যে আর সে ব্রাজিল নেই, সেটা জার্মান তরফে সকলেই জানেন। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জেতার সময় ব্রাজিল সর্বসাকুল্যে ৩১টা ফাউল করেছে। শোয়াইনস্টাইগার বলেছেন: ‘‘আপনারা ভাবেন ব্রাজিলিয়ানরা সবাই ‘ম্যাজিশিয়ান`। কিন্তু ওদের দল বদলে গেছে, ওরা আজ অন্য ধরনের ফুটবল খেলে। গায়ের জোর দিয়ে খেলা আজ ওদের খেলার অঙ্গ এবং আমাদের সেজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।``জার্মান কোচ ইওগি ল্যোভ-ও বলেছেন: ‘‘ব্রাজিলের প্রথাগত ফুটবল শৈলীর আর বিশেষ কিছু বাকি নেই – ওদের সেই শৈল্পিক ফুটবল, যা আমরা সবাই চিনি। ব্রাজিলের প্লেয়ারদের টেকনিক খুব ভালো বৈকি। কিন্তু ওরা এই বিশ্বকাপে অন্য যে কোনো দলের চেয়ে বেশি গায়ের জোর দিয়ে খেলছে এবং বিপক্ষদলের আক্রমণ সেইভাবে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।`` তা নিয়ে ল্যোভের বিশেষ চিন্তিত না হবারই কথা, যেহেতু জার্মান ক্যাপ্টেন ফিলিপ লাম তাঁর অভ্যস্ত রাইট ব্যাক পজিশনে ফেরত গেছেন; গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ারের ফর্ম অনবদ্য ; ওদিকে বাদবাকি ব্যাক লাইনের জন্য ল্যোভ পের মের্টেসাকার, মাটস হুমেলস ও জেরোম বোয়াটেং-এর মধ্যে যে কোনো দু`জনকে বেছে নিতে পারেন।ব্রাজিলও মুষড়ে নেইওদিকে নেইমারের বিরহে যে ব্রাজিলিয়ান টিম একেবারে নুয়ে পড়েছে, এমন নয়। চেলসির উইলিয়ান – উচ্চতায় এক মিটার ৬৩ সেন্টিমিটার – নাকি নেইমারের জায়গা নিতে প্রস্তুত: ‘‘আমরা ও না থাকায় দুঃখিত, কিন্তু তার ফলে আমাদের স্বপ্ন সফল করার আরো বেশি প্রেরণা পাব।`` কোচ লুইজ ফেলিপে স্কোলারি বলেছেন: ‘‘আমরা প্লেয়ারদের বোঝানোর চেষ্টা করছি যে, এই বিপর্যয় একটা সুযোগও হতে পারে, সব কিছু অন্যভাবে করার সুযোগ। আর আমরা ঠিক তাই করব।``নেইমারের জায়গায় উইলিয়ান, আর দা সিলভার জায়গায় বায়ার্ন মিউনিখের দান্তে? মাইকন কি রাইট ব্যাক থাকছে? ফ্রেড কি আবার গোড়া থেকেই খেলবে? স্কোলারির সামনে নানা প্রশ্ন। বলতে কি, ফুটবলের সামনেও। তবে নতুন কোনো প্রশ্ন নয়। শিল্পের সঙ্গে রুটির বিরোধ তো চিরকাল। ‘জোগা বোনিতো`, বিউটিফুল গেম এক কথা, আর ম্যাচ জেতা, ট্রফি জেতা আরেক কথা। কিন্তু এবার ফুটবলের সামনে যে প্রশ্ন, অনেক ক্ষেত্রে একটি দেশের রাজনীতিকেও পঙ্গু করে দেবার ক্ষমতা রাখে।ফুটবল ও গুণ্ডামিফুটবলে কতটা গুণ্ডামি চলে? এ প্রশ্নের জবাব দৃশ্যত ফিফার কাছে নেই। ফিফা কখনো রেফারিদের বলে কড়া হতে; কখনো রেফারিদের বলে, অত চট করে হলুদ কার্ড দেখিও না। আর এই দোনামোনার সুযোগ নিয়ে একদল পেশাদারি ফুটবলার পেশাদারি গুণ্ডাদের মতো আচরণ শুরু করে।অবশ্য সেই গুণ্ডামি সাধারণত নেইমারের বিরুদ্ধে ফাউলের মতো মোটা দাগের হয় না, ফাউল করা হয় চুরি-ছ্যাঁচড়ামি-পকেটমারির মতো: হাত কি জামা ধরে টানা; জড়িয়ে ধরা; পিছন থেকে ঠেলা দিয়ে বিপক্ষের খেলোয়াড়ের ভারসাম্য নষ্ট করে দেওয়া; হেড দেবার প্রচেষ্টা হিসেবে বস্তুত কারুর মাথায় চড়ে বসা।এবারকার বিশ্বকাপে যে ফাউলটি ফাইন আর্টে পরিণত হয়েছে, সেটি হলো পা মাড়িয়ে দেওয়া; বুটের পয়েন্টটা দিয়ে পায়ে খোঁচা মারা; সন্তর্পণে লেঙ্গি মারা – বাঙালির প্রিয় ওই বস্তুটি যে একদিন বিশ্বের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়দের তুণের অস্ত্র হয়ে দাঁড়াবে, তা কে ভাবতে পেরেছিল? সেই সঙ্গে: বল গোললাইন পেরিয়েছে কি না, তা দেখার জন্য সাতটি ক্যামেরা আছে। কিন্তু ফাউল থেকে অফসাইড দেখছেন এখনও এক রক্তমাংসের রেফারি এবং তাঁর সাগরেদ দুই লাইন্সম্যান, যাঁরা মাঠময় কানামাছি ভোঁ-ভোঁ করে বেড়াচ্ছেন আর প্লেয়াররা অন্য প্লেয়ারদের কামড়ে দিলে – কিংবা হাঁটুর গুঁতোয় তাঁদের মেরুদণ্ডের হাড় সরিয়ে দিলে – সেই সব ছোটখাটো অপরাধ চোখে দেখেন না। এ যেন এক দারোগা আর দুই পাহারোলায় মিলে পাড়ায় পাড়ায় খুনোখুনি রোখার চেষ্টা।ও হ্যাঁ, সুয়ারেজের মরণ কামড় যিনি দেখেও দেখেননি, সেই রেফারিই আবার জার্মান-ব্রাজিল সেমিফাইনালে বাঁশি বাজাবেন কি না!সূত্র : ডয়চে ভেলে

Advertisement