২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সংগঠিত গ্রেনেড হামলার কথা আগেই জানতেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর! মাওলানা তাজউদ্দিন ও মুফতি হান্নানসহ অনেককে জঙ্গি হিসেবে জেনেও সহযােগিতা করেছিলেন তিনি। মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দিতে এরকম তথ্য উঠে আসলেও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাবর। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড বোমা হামলা মামলার পরিকল্পনা হয় তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায়। ওই বৈঠকে হুজি নেতা মুফতি হান্নান, মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা আবদুস সালাম ও জান্দাল এবং আরও নেতাকর্মী অংশ নিয়েছিলেন। তাদের এরকম পরিকল্পনায় লুৎফুজ্জামান বাবর সব ধরনের প্রশাসনিক সহযোগিতা করেন। মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দি থেকে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার চার্জশিটে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে আসামি করা হয়। তবে মামলার চূড়ান্ত রায় না হওয়ায় এখনো সাজা দেয়া হয়নি কাউকে। তবে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বাবরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে সাজা ভোগ করছেন। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ের কেউ দেশে নেই। বর্তমা্নে বাবরের খোঁজখবর রাখছেন সাবেক এপিএস হায়দার আলী। বাবরের বরাত দিয়ে হায়দার আলী জানান, ‘তিনি (বাবর) গুরুতর অসুস্থ। হাসপাতাল থেকে কারাগারে যাওয়ার পরও তার হাই-পাওয়ারের অ্যান্টিবায়োটিক চলছে।’ বাবর হাঁপানি, ঘাড়ে-পিঠে ব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়াসহ প্রায় ১৩-১৪টি সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া তার দাঁতে ক্যানসারের মতো সমস্যায় ভুগছেন বলেও জানান হায়দার আলী।এদিকে এই ঘটনার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বাবর জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘কে না জানে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তারেক-বাবর ও অন্যরা জড়িত’। আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেতা বলেন, ‘একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ছাড়া তার মন্ত্রিসভার কোনো মন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট, হাওয়া ভবন থেকেই ২১ আগস্টের হামলার নির্দেশ এসেছে’।এছাড়া তৎকালীন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কমিশনার এসএম মিজানুর রহমান বলেছিলেন, বাবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িত থাকতে পারেন। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ দেয়া সাক্ষ্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। মিজানুর রহমান বলেন, গ্রেনেড হামলার দিন বাবর হামলার স্থল থেকে উদ্ধার করা দুইটি তাজা গ্রেনেড ধ্বংস করে দিতে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। `তড়িঘড়ি করে নেয়া এই সিদ্ধান্ত থেকেই প্রমাণ হয়, সাবেক এই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গ্রেনেড হামলার আলামত মুছে দিতে চেয়েছিলেন।`মামলার ৬৩ নম্বর সাক্ষী মিজানুর রহমান তার দুই ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষ্যে আরো বলেন, `২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতার (শেখ হাসিনা) ওই অনুষ্ঠানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো নির্দেশনা দেননি লুৎফুজ্জামান বাবর। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এটা তো অনেক আগের কথা। বিয়ষটি নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই বলেও তিনি জানান।এমএম/একে/পিআর
Advertisement