২১শে আগস্ট। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ১১ বছর। ২০০৪ সালের এইদিনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যায় গ্রেনেড হামলা চালায় সে সময়ের রাজনীতির কুশীলবেরা। পরবর্তীতে এর মূলহোতা দাবি করে জজ মিয়া নামের এক সিডি বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে এর ৩ বছর পর প্রমাণিত হয় সেটি ছিল তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকারের নেতাদের পরিকল্পনা।সেদিন গ্রেনেড হামলার প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৪ জন। আহত হয় শতাধিক নেতাকর্মী। এ ঘটনায় মতিঝিল থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেন। এরপর তদন্তের দায়ভার দেয়া হয় সিআইডির কাছে।এ ঘটনায় ২০০৫ সালে গ্রেফতার করা হয় জজ মিয়া নামে নোয়াখালীর সেনবাগের এক যুবককে। জজ মিয়া সে সময় গুলিস্তানে সিডির ব্যবসা করতেন। গ্রেনেড হামলার কয়েকমাস পর তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তাকে তুলে মালিবাগের কার্যালয়ে নিয়ে আসে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কার্যালয়ে এনে ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সাজানো জবানবন্দি দিতে বলা হয় তাকে। তার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়া তৎকালীন সিআইডির কর্মকর্তারা।নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবন বাঁচাতে সাজানো সাক্ষ্য দিতে রাজি হন তিনি। সিআইডির এক কর্মকর্তা তাকে একটি কাগজে জবানবন্দি লেখে দেন। সেটি মুখস্থ করিয়ে জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত বলে ১৬৪ ধারা আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ায় সিআইডি। এর বিনিময়ে তার পরিবারকে মাসিক হারে টাকাও দিত তারা।দীর্ঘ কয়েকবছর কারাভোগের পর একটি দৈনিক পত্রিকায় জজ মিয়ার পরিচয় নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তথ্য প্রমাণে বেড়িয়ে আসে এটি ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকারের সাজানো নাটক। এর রচয়িতা ছিলেন তৎকালীন পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।নানা নাটকীয়তার পর ২০০৮ সালের ১১ জুন আদালতে সিআইডি’র দাখিল করা চার্জশিটে ২২ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় জজ মিয়াকে। তবে এখন জজ মিয়া কোথায় থাকেন নিশ্চিত করে বলতে পারে না কেউ। এমনকি তার নিরাপত্তার স্বার্থেই তাকে সাংবাদিকদের কাছ থেকেও দূরে রাখা হয়েছে।এ বিষয়ে মামলার এক তদন্ত কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘যদিও জজ মিয়ার ঠিকানা আমার জানা নাই। তবে জানলেও আমরা তার অবস্থান সাংবাদিকদের জানাবো না।’তবে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, জজ মিয়া গাজীপুরে থাকেন। মাঝে মাঝে নোয়াখালীতে নিজ গ্রামে যান।জজ মিয়াকে অব্যহতির পর ২০১১ সালের আরো ৩০ জনসহ মোট ৫২ জন আসামির তালিকায় যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে সিআইডি। এর মধ্যে ছিল বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বখশ চৌধুরী এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির অবসরপ্রাপ্ত এএসপি আব্দুর রশিদ, অবসরপপ্রাপ্ত এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান।এই মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, বিচারকার্য তার নিজ গতিতে চলছে। তবে আসামিরা নানা অজুহাতে বিচারকার্যকে বিলম্বিত করতে চাচ্ছে।এআর/আরএস/এমআরআই
Advertisement