রাজনীতি

রবীন্দ্র-নজরুলের লেখার আওয়ামীবিরোধিতার ইঙ্গিত দেখছেন রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘অনেকে রসিকতা করে বলেন যে, নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথ বিএনপি করতেন। কারণ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তিনি একটি উপন্যাস লিখেছিলেন ‘নৌকা ডুবি’ আর কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি, তিনি কবিতা লিখেছিলেন,‘ আমরা শক্তি, আমরা বল, আমরা ছাত্রদল।'

Advertisement

তিনি বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কথাটা উঠে এসেছে জাতীয় কবির হাত দিয়ে। আর ‘নৌকা ডুবি’ উপন্যাসটা লিখেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অতএব বাঙালির এই কীর্তিমান দুই শ্রেষ্ঠ পুরুষ তাদের হাত দিয়ে আগেই আওয়ামী বিরোধী চিন্তা ফুটে উঠেছিল। যদিও এটা রসিকতা করে বলা হয়, তবুও কিন্তু এখানে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।

তিনি বলেন, ‘সারাদেশে জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ। এই অবৈধ সরকার আগামী নির্বাচনে নিশ্চিত ভরাডুবি আঁচ করতে পেরে হামলা গ্রেফতার বাড়িয়ে দিয়েছে। টিকে থাকার জন্য শেষ মরণকামড় দিচ্ছে এখন। গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, সব ডিআইজি ও এসপিকে ঢাকায় আজ তলব করেছেন আইজিপি। বিএনপি’র আড়াই লাখ নেতাকর্মীর একটি তালিকা করেছে পুলিশ। ডিআইজি এবং এসপিদের সঙ্গে বৈঠকের পর চিরুনি অভিযান চালিয়ে ওইসব নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নির্বাচনী মাঠ ফাঁকা করা হবে। মূলত শত বাধা বিপত্তি-গ্রেফতার-হামলা উপেক্ষা করে চারদিকে ধানের শীষের যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে থামিয়ে দিতেই এই অভিযানের পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ।’

Advertisement

সারাদেশে আওয়াজ উঠেছে নৌকা ডুবির আওয়াজ উঠেছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ৫ বছর ঢাকায় আরাম আয়েশে লুটপাট করে কাটিয়ে এখন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে চরম প্রতিকূলতায় পড়েছে নৌকার প্রার্থীরা। দিকে দিকে জনগণ তাদের বিরুদ্ধে ফুসে উঠতে শুরু করেছে। ভোট চাইতে গিয়ে ভোটারদের রোষের মুখে পড়ছে। দলীয় সন্ত্রাসী আর পেটোয়া বাহিনী দিয়ে সাধারণ জনগণকে আর দাবিয়ে রাখা যাবে না। সময় এখন জনগণের। এ কারণে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফিয়া ডনদের মতো বলছেন-‘আর ভাষণ নয়, অ্যাকশনে যেতে হবে’। অর্থাৎ এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি নিজেদের দুর্বিনীত ক্যাডারদের সহিংসতার পথ অবলম্বনের জন্য উসকানি দিলেন।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ পলায়নপর সরকার নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পরই চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছে ক্ষমতা এবার হাতছাড়া হয়ে যাবে। আমাদের কাছে প্রমাণসহ তথ্য আছে, গত ১০ ডিসেম্বর সোমবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কতিপয় নেতাদের নিয়ে একটি গোপন বৈঠক হয়েছে। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের মাঠে নামাতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়া। একটি পর্যায়ে তারা নিজেরাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর হামলা চালাবে। প্রয়োজনে বড় ধরনের নাশকতাও করতে পারে। পরে এসব হামলা ও নাশকতার দায়ভার চাপাবে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের ওপর। এসব ঘটনার মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝানোর চেষ্টা করবে যে, যারা এখনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর হামলা করতে পারে তারা ক্ষমতায় আসলে পরিস্থিতি কী হবে ? প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে টেলিফোনে বলছেন-বিএনপি’র ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা-মামলার সংবাদ যেন ছাপানো না হয়।’

তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়েই ৫৪টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শ হলো তাদের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা সহ্য না করা। ‘

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর হতে মামলার সংখ্যা ১৫৮টি ও গ্রেফতারের সংখ্যা ২৪১৫ জন এবং প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে মামলার সংখ্যা ১৫ এবং গ্রেফতারের সংখ্যা ৪২৫ জন।’

Advertisement

রিজভী বলেন, ‘পুলিশের প্রতি আমাদের অনুরোধ, নির্বাচনী হাওয়া কাদের অনুকূলে বইছে সেটি উপলদ্ধি করতে চেষ্টা করুন। আপনারা সরকারের কথা বিশ্বাস করে জনগণের প্রতিপক্ষ হবেন না। জনগণের পক্ষে দাঁড়ান। দুঃশাসনের অবসানের জন্য আপনারাও অবদান রাখুন।’

কেএইচ/জেডএ/এমকেএইচ