একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় সরব হয়ে উঠেছে ঢাকা-৯ সংসদীয় আসন। তবে এ আসনে মাঠে নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ।
Advertisement
ঢাকা-৯ সংসদীয় আসনটি খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা থানাধীন নাসিরাবাদ, দক্ষিণগাঁও ও মাণ্ডা ইউনিয়ন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। আসনটিতে নারী-পুরুষ মিলে মোট ভোটার রয়েছেন চার লাখ ২৫ হাজার।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী এবং বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সহধর্মিনী।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকার রাস্তায় রাস্তায় ঝুলছে নৌকার পোস্টার। চলছে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও মতবিনিময় সভা। পাড়া-মহল্লা, অলিগলি সবখানেই নৌকার মিছিল-মিটিংয়ে সরগরম। নির্বাচনী ক্যাম্পে চলছে কর্মী ও সমর্থকদের আড্ডা। কিন্তু উল্টো চিত্র ধানের শীষের। রাস্তায় চোখে পড়েনি কোনো পোস্টার। নেই কোনো নির্বাচনী ক্যাম্পও।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক মামলা থাকায় গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মী এলাকায় নেই। আর যারা রয়েছেন তারাও ভয়ে মাঠে নামছে না। অন্যদিকে ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার ঝুলানো হয়েছে।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী রাসেল আহমেদ জানান, গত চার-পাঁচদিন ধরে প্রতিদিনই নির্বাচনী মিছিল-মিটিং হচ্ছে। নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেছে।শুধু আওয়ামী লীগের লোকজনই মিছিল করছে। এখন পর্যন্ত বিএনপির কোনো মিছিল বা পোস্টার দেখেননি।
মুগদার বাসিন্দা ইয়ামিন বলেন, এখন পর্যন্ত একপক্ষের (আওয়ামী লীগ) মিছিল-মিটিং দেখছি। তারা তো ক্ষমতায় আছে। তাই আগে নেমেছে। আর বিএনপির বেশিরভাগ নেতা বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে পলাতক, এলাকা ছাড়া। তারা যদি এলাকায় আসে তাহলে বুঝা যাবে। এখনো ১৫ থেকে ১৬ দিন বাকি, দেখা যাক কী হয়। তবে বিএনপি মাঠে না থাকলে নির্বাচন জমবে না।
এদিকে বুধবার (১২ ডিসেম্বর) নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে দুই দফা হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাস। আফরোজা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, ২০ থেকে ২৫ জনের মতো ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং মহিলা লীগের লোকজন আমাদের উপর হামলা চালায়। সেখানে প্রশাসনের লোক ছিল। তারপরও আমাদের উপর হামলা। ওদের (প্রশাসনের) সহায়তায় হামলা ঘটনা ঘটেছে।
Advertisement
নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রতিপক্ষ নানা কৌশল করছে, আগামীতেও করবে। তাদের দিকে না তাকিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। বিগত ১০ বছরে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। জনগণ আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট। তাই আগামীতেও নৌকার ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।
ঢাকা -৯ ও সিলেট-১ আসনকে ক্ষমতার প্রতীক উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী বলেন, দেশের এ দুটি আসনে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করে তারাই ক্ষমতায় আসে। আমাদের প্রত্যাশা আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিপুল ভোটে নৌকা জয়লাভ করবে। ঢাকা-৯ আসন নৌকার আসন হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে পারব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুগদা থানার বিএনপির এক নেতা বলেন, আমার বিরুদ্ধে ৭টা রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। আজকে কয়েক মাস যাবত এলাকা ছাড়া। এ অবস্থায় নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণায় কিভাবে করবে? তারপরও মাঠে নামলে হামলা করছে। তারা ক্ষমতায় আছে এ অবস্থায় নির্বাচন করা কঠিন।
মান্ডার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলম শামীন বলেন, সাবের ভাই যোগ্য লোক বলেই নেত্রী তাকে নৌকার প্রার্থী করেছেন। তিনি আমাদের এলাকায় অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছে। এলাকার যুবক থেকে মুরুব্বি সবাই তার পক্ষে কাজ করছে। নৌকার ভোট চাচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নৌকা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।
এসআই/আরএস/আরআইপি