রাজনীতি

বাঁশখালীতে জামায়াতের জহিরুল, বিদ্রোহী না স্বতন্ত্র?

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সারাদেশে ২০ দলীয় জোটের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছে। কিন্তু ব্যতিক্রম যেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন। এখানে ধানের শীষের বিরুদ্ধেই প্রার্থী দিয়েছে দলটি।

Advertisement

২০ দলীয় জোটের প্রার্থী বিএনপি নেতা জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা মাওলানা জহিরুল ইসলাম।

আরও পড়ুন >> বিরোধ ভুলে প্রচারে আ.লীগ, আতঙ্ক কাটেনি বিএনপিতে

বিএনপি নেতারা বলছেন, ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে দলগুলোর আসন বণ্টনে জামায়াতকে শেষ পর্যন্ত ২২টি আসন দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া চাঁপাইনবাগঞ্জ-৩ (সদর) আসনটি বিএনপি ও জামায়াতপ্রার্থীর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে জামায়াতের কোনো প্রার্থী নেই।

Advertisement

কিন্তু চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন জামায়াত নেতা মাওলানা জহিরুল ইসলাম। আপেল প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন তিনি। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে তার প্রচার-প্রচারণাও চলছে বেশ জোরেশোরে। এ বিষয়ে জামায়াতের শীর্ষ কোনো নেতার বক্তব্য পাওয়া না গেলেও প্রার্থী নিজেই বলছেন, দলের সমর্থনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

এ কারণে বাঁশখালীসহ চট্টগ্রামের সাধারণ ভোটারদের প্রশ্ন, ‘জামায়াতের জহিরুল, বিদ্রোহী না সতন্ত্র?’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে ২০ দলীয় জোটের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। জামায়াতের পক্ষেও আসনটি দাবি করা হয়েছিল। সেজন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. জহিরুল ইসলাম।

আরও পড়ুন >> ধানের শীষে নতুন মুখ, নির্ভার নৌকার মাঝিরা

Advertisement

কিন্তু শেষ পর্যন্ত জোট থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। জহিরুলের ওই ঘোষণায় জাফরুল বিপাকে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে জাফরুল জামায়াতের জহিরুল ও আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হচ্ছেন। মাঠে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী থাকায় একটু হলেও সুবিধা পাবেন নৌকার প্রার্থী সংসদ সদস্য মোস্তাফিজ।

জামায়াতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, এবারের সংসদ নির্বাচনে বাঁশখালী উপজেলা জামায়াতের আমির জহিরুল ইসলাম জোটের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। তাই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এজন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগও করেন তিনি। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একজন এবং বিএনপির দুজন প্রার্থীকে হারিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জহিরুল ইসলাম। সে আত্মবিশ্বাস থেকেই তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। তার পক্ষে জামায়াতেরও সমর্থন আছে।

এ বিষয়ে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বাঁশখালীতে আমি জোটের প্রার্থী। মোবাইলে এ বিষয়ে বেশিকিছু বলা সম্ভব নয়। জানতে হলে সরাসরি দেখা করে কথা বলেন।’

তবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইফুদ্দীন সালাম মিঠু জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে জামায়াতের সঙ্গে আলোচন চলছে। আশা করি, আগামী দু-একদিনের মধ্যে বাঁশখালী আসন নিয়ে আমরা একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারব।’

এদিকে জামায়াত নেতা মাওলানা জহিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন আছে। এর আগে আমি উপজেলা নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে ধানের শীষ ও নৌকার বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছি।’

সারাদেশে জামায়াত বিএনপির প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে কিন্তু বাঁশখালীতে আপনি সে প্রতীকের বিরুদ্ধে লড়ছেন, এমনটা কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামে জামায়াতের অবস্থান সবসময় ভালো। তাই অন্তত তিনটি আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু জোটের পক্ষ থেকে আমাদের (জামায়াত) মাত্র ২৫টি আসন দিয়ে সেখান থেকেও তিনটি ফিরিয়ে নিয়েছে। এমনটা হবে তা তো আমরা ভাবিনি। বেশকিছু ভালো আসন ছেড়ে দিয়েও যখন কাঙ্ক্ষিত আসন পাইনি, তাই সারাদেশে তিনটি (চট্টগ্রাম-১৪, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ ও পাবনা-১) আসনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার সীদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত।'

আরও পড়ুন >> আ.লীগের অস্বস্তি আ.লীগ, বিএনপির চ্যালেঞ্জ নতুন মুখ

স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, বাঁশখালীর নির্বাচনী মেরুকরণ দেখতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে জামায়াত ও বিএনপি পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাঠে থাকলে ফলাফল নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের দিকে যাবে।

আবু আজাদ/এমএআর/এমএস