ছয়টি গোল, দুটি লাল কার্ড, ম্যাচ ১২০ মিনিটের। সেখানেই শেষ নয়, স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের ভাগ্য গড়ালো টাইব্রেকারে। এরপর কী ফুটবলে আর কিছু থাকে? থাকে। যার নাম সাডেনডেথ। আরামবাগ ও ব্রাদার্সের ম্যাচ সে পর্যন্তও গড়ালো। তারপর শেষ হাসির পালা। গোলরক্ষক সুজন চৌধুরী সে হাসি ফোটালেন ব্রাদার্সের মুখে। গতবারের চ্যাম্পিয়ন আরামবাগকে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে সৈয়দ নাইমুদ্দিনের দল উঠলো সেমিফাইনালে।
Advertisement
‘মনোমুগ্ধকর’- এমন একটি শব্দই যায় এই ম্যাচের সাথে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি শূন্য; কিন্তু মাঠে এক ঝাঁক ফুটবলারের অসাধারণ নৈপুণ্য। যারা রাত জেগে ইউরোপিয়ান ফুটবল দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন, তারা এ ম্যাচ দেখলেও কম খুশি হতেন না। যদিও বাংলাদেশের ফুটবলে এমন সৌন্দর্য্যসম খেলা দেখার কেউ নেই, কেউ স্টেডিয়ামে আসেন না।
১২০ মিনিটের ম্যাচের প্রথম ৭৮ মিনিট লড়াই হলো ২২ জনের। পরের ৪০ মিনিট ২১ জনের এবং শেষ ২ মিনিট ২০ জনের। মিনিটে মিনিটে ম্যাচের গতিচিত্র বদলেছে, আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণ হয়েছে। গোলের পর পাল্টা গোল হয়েছে। সুন্দর আক্রমণ হয়েছে, দুর্ভাগ্যজনক কিছু মিসও হয়েছে। একটি ফুটবল ম্যাচ থেকে দর্শক যা দেখতে চায় তার সবই ছিল আরামবাগ ও ব্রাদার্সের কোয়ার্টার ফাইনালে। চলমান স্বাধীনতা কাপের তো বটেই, এ মৌসুমেরও অন্যতম সেরা ম্যাচের স্বীকৃতি পাবে আরামবাগ-ব্রাদার্স লড়াই।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের ম্যাচের স্কোর ৩-৩। অতিরিক্ত সময় কোনো গোল হলো না। প্রথম কোয়ার্টারে ভাগ্য গড়ালো টাইব্রেকারে। সেখানেও দুই দল সমান ৩-৩। তারপর সাডেনডেথ। ব্রাদার্সের খান মোহাম্মদ তারা লক্ষ্যভেদ করলেও পারেননি আরামবাগের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ম্যাথিউ। তার শট ঠেকিয়ে দিয়ে ব্রাদার্সকে ৪-৩ ব্যবধানের জয় এনে দেন গোলরক্ষক সুজন চৌধুরী। ম্যাচেও অসাধারণ কিছু সেভ করেছেন কমলা জার্সিধারী এ গোলরক্ষক।
Advertisement
১৪ মিনিটে রবিউলের গোলে এগিয়ে যায় আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। ঘানার পল এমিলের কাটব্যাক থেকে আরামবাগ অধিনায়ক ভলিতে বল জড়িয়ে দেন ব্রাদার্সের জালে। ৪৩ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান লিমা ম্যাচে ফেরান ব্রাদার্সকে। বাম দিক থেকে শফিকুলের ক্রস গোলমুখে উড়ে এলে ফ্লাইট মিস করেন আরামবাগের গোলরক্ষক হিমেল। লিমা লাফিয়ে বল-মাথায় সংযোগ ঘটিয়ে গোল করেন।
৫৩ মিনিটে দ্বিতীয়বার লিড নেয় গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। আবারও গোলদাতা দলের অধিনায়ক রবিউল। পল এমিলের ব্যাকহিল থেকে বক্সের বাইরে বল ধরে একটু সামনে বেড়েই জোরালো শটে গোল করেন অধিনায়ক। ৭৮ মিনিটে প্রথমবারের মতো লিড নেয় ব্রাদার্স। পানামার ফরোয়ার্ড দুর্দান্ত শটে গোল করেন।
কিন্তু গোল করেই লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে যেতে হয় তাকে। গোলের আনন্দে জার্সি খুলে দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। তিনি যেন ভুলেই গিয়েছিলেন আগে হলুদ কার্ড আছে। তার বোকামির খেসারত দিতে হয় দলকে।
একজন খেলোয়াড় কমে যাওয়ায় এগিয়ে থাকাটা ধরে রাখতে পারেনি নাইমুদ্দিনের শিষ্যরা। ৮৫ মিনিটে ম্যাচে সমতা আনেন আরামবাগের ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড পল এমিল। বাকি সময় আর গোল না হলে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
Advertisement
১১৮ মিনিটে লাল কার্ড পান আরামবাগের নিপু। তার বুট খুলে গেলে ব্রাদার্সের এক খেলোয়াড় বুট সরিয়ে দেন পা দিয়ে। নিপু তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলে রেফারি সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে তাকে বের করে দিলে শেষ দুই মিনিট দুই দলই ১০ জন নিয়ে খেলেন।
আরআই/আইএইচএস/পিআর