>>>মামলার বাদী জানেন না সম্পূরক চার্জশিটের বিষয়ে>>>২৯ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৫ জন বিমান কর্মকর্তা>>>৯ গুরুত্বপূর্ণ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ>>>এই মামলায় তাড়াহুড়ো কেন প্রশ্ন রাষ্ট্রপক্ষের
Advertisement
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাতটি টয়লেট থেকে ১০৬ কেজি স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশ বিমানের ১৫ কর্মকর্তাসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রায় দুই বছর তদন্ত করে চার জনকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিটটি দেওয়া হয়েছে। আগের চার্জশিটে ৯ জন গুরুত্বপূর্ণ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও সম্পূরক চার্জশিটে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। চার্জশিটের বিষয় কোনো কিছুই জানেন না মামলার বাদী। এছাড়াও ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরকে চার্জশিটের বিষয় অবহিত করেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা।
সম্প্রতি পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক মুজিবুর রহমান ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে এই সম্পূরক চার্জশিটটি দাখিল করেন। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম (এসিএমএম) আমিনুল ইসলাম চার্জশিটটি দেখিলাম বলে স্বাক্ষর করেন।
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু জাগো নিউজকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ আসামি বাদ পড়ায় মামলাটি পুনঃতদন্তে পাঠানো হয়েছিল। সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করার বিষয়ে আমার সাথে কোনো পরামর্শ করেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা। এছাড়াও ৯ গুরুত্বপূর্ণ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আগের তদন্তকারী সংস্থা ডিবি প্রমাণ করলেও পিবিআই অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।
Advertisement
পিপি আরও বলেন, এই মামলায় এতো তাড়াহুড়ো কেন? আমরা আবার এই মামলার বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।
মামলার বাদী তৎকালীন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মফিজউল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলার সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের বিষয়ে আমার সাথে কোনো পরামর্শ করেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মজিবুর রহমানকে এ বিষয়ে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা স্বর্ণ চোরাচালানের কথা জানতেন। তারা স্বর্ণগুলো বাইরে আনার জন্য বিমানবন্দরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করেছিলেন। পরস্পরের যোগসাজশে দুবাই থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে ৯০৪ পিস স্বর্ণবার যার ওজন প্রায় ১০৬ কেজি (বাজার মূল্য ৪৭৪৪১০১০৬ টাকা) বাংলাদেশে আনায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-বি এর ১ (বি) ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন। প্রকাশ্য ও গোপনীয় তদন্তে এবং দালিলিক সাক্ষ্য প্রমাণে আসামিরা যে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত তা প্রমাণিত হয়েছে। মামলার বাদীকে ফলাফল অবহিত করা হলো।
Advertisement
চার্জশিটভুক্ত ১৫ বিমান কর্মকরতা হলেন- হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৎকালীন কর্মরত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এয়ারক্র্যাফট মেকানিক অ্যাসিস্ট্যান্ট আনিস উদ্দিন ভূঁইয়া, এসি মেকানিক নিয়াজ মাহামুদ, ইমরালুন ইসলাম, শেখ হারুন আর রশীদ, মতিন মিয়া, শেখ আব্দুল্লাহ আল মাকসুদ, এসি মেকানিক অ্যাসিস্ট্যান্ট আলমগীর হেসেন, জুনিয়র ইন্সপেকশন অফিসার শাহজাহান সিরাজ, এস এম এ আ. হালিম, জুনিয়র টেকনেশিয়ান সিরাজুল ইসলাম, ইয়াহিয়া আহম্মদ, এয়ারক্র্যাফট মেকানিক মিলন খন্দকার, মুজিবুর রহমান, মাসুদুর রহমান ও বিমানকর্মী আবু জাফর।
এছাড়াও ঘটনার সঙ্গে জড়িত জনৈক ইকরামুল হক পারভেজ, নজরুল ইসলাম, একেএম শামসুদ্দিন মুকুল, কামরুল ইসলাম, রিয়াজ উদ্দিন, ওমর ফারুক, আব্বাস আলী শেখ, জাহাঙ্গীর আলম ও নবী দেওয়ান খান, আবু আহম্মেদ, আলী উল ইসলাম ভূঁইয়া পলাশ, শাহিন শেখ, উজ্জ্বল ঘোষ ও বিশ্বনাথ ঘোষ বাবু।
এদের মধ্যে আবু আহম্মেদ,আলী উল ইসলাম ভূঁইয়া পলাশ, শাহিন শেখ, উজ্জ্বল ঘোষ ও বিশ্বনাথ ঘোষ বাবুকে নতুন করে সম্পূরক চার্জশিটে যুক্ত করা হয়েছে।
আসামি আবু জাফর, রিয়াজ উদ্দিন, শেখ হারুন অর রশীদ, মতিন মিয়া, শেখ আবদুল্লা আল মাকসুদ, সিরাজুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, ইয়াহিয়া আহম্মদ ও আবু আহম্মেদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনা প্রমাণ করার কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পূর্ববর্তী তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন বিধায় তাদের নাম এই সম্পূরক চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা সম্পূরক চার্জশিটে উল্লেখ করেন।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ১১ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তারা হলেন- মিজানুর রহমান, আবুল হোসেন, অসীম কুমার সিংহ, আব্দুল কাদের, আনিসুর রহমান, বাবুল পোদ্দার, হান্নান ভূঁইয়া, জাহিদুর রহমান, এ জেড মো.সালেহ, ইদ্দিস ও আলী হোসেন।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাতটি টয়লেট থেকে ১০৬ কেজি স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশ বিমানের দশ কর্মকর্তাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
এর আগে ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি ডিবি পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এ কে এম মাহবুবুর রহমান বিমানকর্মীসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর গুরুত্বপূর্ণ আসামি বাদ পরায় মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল দুবাই থেকে আসা একটি ফ্লাইটের সাতটি টয়লেট থেকে ১০৬ কেজি স্বর্ণের চালান উদ্ধার করে শাহজালাল বিমানবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তারা। উদ্ধার করা স্বর্ণের মূল্য ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এটি শাহজালালে আটক স্বর্ণের চালানের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। ওই ঘটনায় গোয়েন্দা ও তদন্ত শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মফিজউল্লাহ বাদী হয়ে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
জেএ/এসএইচএস/পিআর