ভ্রমণ

গুমোট গরমে অামস্টারডাম ভ্রমণ

নেদারল্যান্ডসের রাজধানী অামস্টারডাম ইউরোপের অন্যতম উষ্ণতম শহর। আমস্টারডামকে ভাসমান শহরও বলা হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে এ শহরের তাপমাত্রা সাধারণত ২০-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। শহরটি ঘুরে বিস্তারিত জানাচ্ছেন মোহাম্মদ মাহাভি-

Advertisement

এ বছর ইউরোপ ভ্রমণে গিয়ে অভিজ্ঞতাটা ছিলো অন্যরকম। বরাবরের সব হিসাব-নিকাশ ঝেরে ফেলে এবারে গ্রীষ্মের গরমে কাবু হয়েছে সবাই। জুলাইয়ের শেষভাগে ইউরোপের নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড যাওয়ার সৌভাগ্য হয়। কিন্তু এবার গরম ছিলো ভয়াবহ। কারণ ভূমধ্যসাগরসংলগ্ন স্পেন থেকে গ্রিস পর্যন্ত ইউরোপের ১০টি উষ্ণতম শহরের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সাধারণত ২০-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। তাই তাদের বাসাগুলোতে গরম নিবারণের জন্য বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেই। এয়ার কুলার বা ফ্যানের মত জিনিস নিয়ে তারা মাথা ঘামান না। এ বছর গ্রীষ্মে তা বেড়ে ৩৩-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।

এই গরমে তাই অামস্টারডামের মানুষ গরম থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছে পার্কে অথবা ঘুরে বেরিয়েছে রাস্তায়। শুধু দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলোতেই নয়; উত্তর ইউরোপের ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও মধ্য ইউরোপের জার্মানি, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড— সব জায়গায় প্রচণ্ড গরম। এসব দেশে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গত ৮০ বছর যাবৎ দুই মেরুর বরফ উল্লেখযোগ্য হারে গলছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সমুদ্রের পানির উচ্চতা। এমন পাল্টে যাওয়া আবহাওয়ার পেছনে বিশ্ব উষ্ণায়নই দায়ী কি-না তা নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে এটা যে অন্যতম কারণ তা নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ নেই।

> আরও পড়ুন- বিশালতায় মন কাড়ে অক্সফোর্ড 

Advertisement

আমস্টারডামকে ‘ভাসমান শহর’ বলা হয়ে থাকে। পুরো শহরে রয়েছে ১৬৫টি খাল। এ কারণেই একে ভাসমান শহর বলা হয়। এই খালের পাড়ে বসলে যে কারোর মন ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু খাল পাড়ের গরম ছিলো আরো বেশি। জলীয় বাষ্পের কারণে এখানকার গরম ছিলো ভ্যাপসা প্রকৃতির।

এছাড়াও এতে রয়েছে ৯০টি ছোট, বড় দ্বীপ আর প্রায় ১ হাজার ২শ’র কাছাকাছি সেতু। মূলত মাছ ধরার একটি ছোট গ্রাম থেকে আজ ইউরোপের একটি উন্নত শহর হচ্ছে আমস্টারডাম। হঠাৎ বৃষ্টির শহরে এবার ছিলো তীব্র তাপদাহ আর আকাশে ছিলো না মেঘ। স্থবির বাতাস আর গুমোট গরমে এবারে যারা আমস্টারডাম গিয়েছিলো, তাদের এক অর্থে দুর্ভাগা বলতেই হবে।

আমস্টারডামের সাইকেল প্রিয় মানুষগুলো সুযোগ পেলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এই গরমেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গরমের মধ্যে তাদের শহরের মধ্যে থাকা বিশাল পার্কে তারা বেরিয়ে পড়েছে সময় কাটাতে। কারণ এখানকার গড় তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়নি কখনোই, কিন্তু এবার অবস্থা ছিল উল্টা। গড় তাপমাত্রা কম থাকার কারণে তারা বাসায় এয়ার কুলিংয়ের মত তেমন কোন ব্যবস্থা রাখে না। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত গরমে খোলা পার্কই ভরসা।

> আরও পড়ুন- মুসলিম ঐতিহ্যের সন্ধানে মক্কা জাদুঘর 

Advertisement

‘সাইকেলের শহর’ আমস্টারডামে সাধারণত সন্ধ্যার পর সাইকেল নিয়ে ঘুরতে দেখা যাওয়া মানুষের পরিমাণ কম। কিন্তু গরমের কারণে এবার অনেক সাইকেলের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে সন্ধ্যা নামতেই। তবে হঠাৎ বৃষ্টির জন্য আমস্টারডামের একটা ‘কুখ্যাতি’ নাকি আছে পর্যটক মহলে। কিন্তু এবার বৃষ্টির মেঘ তো দূরে থাক। সামান্য ছায়া দেওয়ার মত মেঘ পাওয়াই ছিলো দুষ্কর।

সন্ধ্যার অনেক পর পর্যন্ত নীলাভ আকাশ থাকে ইউরোপের অনেক দেশে। এই সময়কে ‘টোয়ালাইট’ বলা হয়ে থাকে। সূর্যাস্তের পরে এ সময় থেকেই সবকিছু ঠান্ডা হতে থাকে। কিন্তু এবার তার কোন বালাই ছিলো না। আমস্টারডাম সেন্ট্রাল স্টেশনের ক্যানালের পাড়ে মধ্যরাত পর্যন্ত বসে থেকেও সামান্য মেঘ বা বাতাসের দেখা পাওয়া যায়ানি। যেখানে মেঘ ছাড়াই নাকি বৃষ্টি দেখা যায় অন্য সময়।

এসইউ/আরআইপি