পাখির মিষ্টি মধুর ডাক ছাড়া একটি দিনও যেন কল্পনা করতে পারে না ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আশুরহাট গ্রামের মানুষেরা। গ্রামবাসীর সকালের ঘুম ভাঙে পাখির ডাক আর ডানা ঝাপটানোর শব্দে। পাখির প্রতি পরম ভালোবাসা থেকে নিজ গ্রামকে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলেছেন তারা।
Advertisement
সরেজমিনে জানা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম আশুরহাট। গ্রামটির মধ্যপাড়ায় পুরনো আমলের তিনটি বিশালাকার দীঘি রয়েছে। দীঘি তিনটির চার পাড়ে রয়েছে বড় বড় শিমুল, কড়াই, মেহগনি ও জামগাছসহ ঘন বন-জঙ্গল। ২০১০ সাল থেকে গ্রামটির দীঘিগুলোর পাড়ের গাছে শামুকখৈল ও পানকৌড়ি পাখি বাসা বাঁধতে শুরু করে। প্রথম দিকে আসা-যাওয়া করতে থাকলেও গত পাঁচ বছর থেকে এখানে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। এ দু’বছর তারা নিয়মিত বাচ্চা দিচ্ছে। খুব ভোরে এরা খাদ্যের সন্ধানে দলবেঁধে উড়ে যায়। সন্ধ্যার আগেই আবার নীড়ে ফিরতে শুরু করে। রাতভর চলে ওদের ডানা ঝাপটানো। সকাল হলেই আবার উড়ে যায়।
> আরও পড়ুন- নতুন প্রজাতির ৬ পাখির সন্ধান
গ্রামবাসী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দিনের বেলায় পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও রাতের আঁধারে শিকারীদের হাত থেকে পাখিদের রক্ষার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দরকার।’
Advertisement
শৈলকুপা উপজেলার নিত্যনন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বিশ্বাস জানান, এখানে পাখির সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। নিজেদের গ্রামকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করে স্থানীয়রা দিনে-রাতে এদেরকে পাহারা দিয়ে আসছে। তার পরেও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকেই পাখি শিকার করতে আসে। এ নিয়ে শিকারীদের সাথে গ্রামবাসীর প্রায়ই গোলযোগ হয়ে থাকে। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পাখি দেখতে আসে। গ্রামটি এখন আশুরহাটের বদলে ‘পাখির গ্রাম’ বলে পরিচিত হয়ে গেছে।
> আরও পড়ুন- শিকারি পাখি মাছরাঙা
পাখিপ্রেমিক নাজের উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘গত বছর উপজেলা প্রশাসন পাখি রক্ষার জন্য দুটি সাইনবোর্ড দিয়েছে। দিনের বেলা পাহারা দেওয়ার জন্য দু’জন গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিলুপ্ত প্রজাতির এই পাখি রক্ষার জন্য সরকারকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’
জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, গত ৭-৮ বছর গ্রামটিতে হাজার হাজার পাখি বাসা বেঁধেছে। এখানে তারা বংশ বৃদ্ধি করে চলেছে। গ্রামটির নাম এখন ‘পাখির গ্রাম’ বলে দেশ-বিদেশে পরিচিত হয়ে উঠেছে। আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি পাখিদের রক্ষা করার জন্য।
Advertisement
এসইউ/জেআইএম