মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা জয়নব মুগলের বয়স মাত্র ২ বছর। এ বয়েসেই সে ক্যান্সারের রোগী। কিন্তু সমস্যা হলো, তার রক্তের গ্রুপ এতই দুর্লভ যে তার চিকিৎসার জন্য রক্ত পেতে শুরু হয়েছে এক বিশ্বব্যাপী অভিযান। চলতি বছরের প্রথম দিকে জয়নবের দেহে নিউরোব্লাস্টোমা নামে এক রোগ ধরা পড়ে; যা খুবই বিরল এবং আগ্রাসী ধরনের ক্যান্সার।
Advertisement
জয়নবের রক্ত যে গ্রুপের তা অতিশয় দুর্লভ এবং বিরল। কারণ তার রক্তের লোহিতকণিকায় ইন্ডিয়ান বি নামের একটি অ্যান্টিজেন নেই। এ রক্ত পাওয়া যাবে শুধুমাত্র ভারতীয়, পাকিস্তানি বা ইরানিদের মধ্যে; যাদের রক্তের গ্রুপ 'ও' বা 'এ'।
কিন্তু এই ভারতীয়, পাকিস্তানি বা ইরানিদের মধ্যেও মাত্র ৪ শতাংশেরও কম লোক আছে যাদের রক্তে সেই 'ইন্ডিয়ান বি' অ্যান্টিজেনটি অনুপস্থিত। জয়নবের রক্তের গ্রুপ এতই বিরল যে তার সাথে রক্তদাতার রক্তের হুবহু মিল না হলে তার দেহ সেটাকে গ্রহণ করবে না।
এ পর্যন্ত ১ হাজার লোকের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে- কিন্তু জয়নবকে দেয়া যাবে এমন রক্তদাতা পাওয়া গেছে মাত্র তিনজন। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া গেছে মাত্র দু'জন দাতা; আর যুক্তরাজ্যে পাওয়া গেছে একজন।
Advertisement
চিকিৎসকরা বলছেন, জয়নবের যথাযথ চিকিৎসার জন্য ৭ থেকে ১০ জন দাতা প্রয়োজন। ওয়ানব্লাড নামে একটি প্রতিষ্ঠান জয়নব মুগলের জন্য এখন বিশ্বের নানা দেশে রক্তের অনুসন্ধানের নেতৃত্ব দিচ্ছে। ওয়ানব্লাডের ফ্রিডা ব্রাইট বলছেন, জয়নবের রক্ত এতই বিরল যে গত ২০ বছরে আমি প্রথম এরকম ঘটনা দেখলাম।
তিনি বলছেন, জয়নবের জন্য রক্ত পাওয়া গেলেও এতে কিন্তু তার রোগ সারবে না। তবে ক্যান্সার চিকিৎসার ধকল সহ্য করার ক্ষমতা তৈরি হবে। কেমোথেরাপির ফলে জয়নবের টিউমারের আকার ইতিমধ্যেই ছোট হয়ে আসছে, কিন্তু তার আরো হাড়ের মজ্জার প্রতিস্থাপন দরকার হবে।
জয়নবের বাবা রাহিল মুগল বলছেন, তার ক্যান্সার হয়েছে শুনে আমরা অনেক কেঁদেছি। তিনি এবং জয়নবের মা নিজেরা রক্ত দিতে চেয়েছিলেন -কিন্তু চিকিৎসকরা বলেছেন যে তাদের রক্ত জয়নবের শরীর গ্রহণ করবে না।
কিন্তু তার পর অন্য অনেকে রক্ত দেয়ার প্রস্তাব করেন এবং এভাবেই বিষয়টি ছড়িয়ে যায়। রাহিল মুগল বলছেন, দাতারা জয়নবের জন্য যা করছেন তা তাদের অভিভূত করেছে, এবং সেটা তারা কখনো ভুলবেন না। বিবিসি বাংলা।
Advertisement
এসআইএস/পিআর