বিশেষ প্রতিবেদন

আ.লীগের অস্বস্তি আ.লীগ, বিএনপির চ্যালেঞ্জ নতুন মুখ

টানা ১০ বছর পর আবারও লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত। একটি বাদে বাকি ১৫ আসনে পুরনোদের ওপর আস্থা রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

Advertisement

অন্যদিকে, বিএনপির প্রার্থী তালিকায় এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। জেলার ১৬ আসনের আটটিতে নতুন মুখ নিয়ে এসেছে দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিজ্ঞতা ও মাঠের রাজনীতিতে চট্টগ্রামের ১৬ আসনেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটপ্রার্থীরা এগিয়ে। সে অনুপাতে অর্ধেক আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের থাকছে নতুন প্রার্থী। তবে নতুন বলেই ভোটের মাঠে তারা পিছিয়ে পড়বেন- এমনটি ভাবার সুযোগ নেই।

অনুষ্ঠিত গত পাঁচ সংসদ নির্বাচনের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক চারটির (১৯৯১-২০০৮) ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, চট্টগ্রামে আনুপাতিক হারে বিএনপির ভোট বেশি। সব মিলিয়ে এবার চট্টগ্রামে দুই জোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত মিলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার মনে করেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ আসনেই আওয়ামী জোটের সংসদ সদস্যরা দুই মেয়াদে আছেন। এলাকার জনগণ ও প্রশাসনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও বেশি। সেই সুবিধা নিতে দলটি তাদের প্রার্থী তালিকায় তেমন কোনো পরিবর্তন আনেনি। তবে এর সুফলের পাশাপাশি অসুবিধাও আছে। ওই সব সংসদ সদস্যের ভালো-খারাপ সবই ভোটারদের জানা। সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

Advertisement

‘অন্যদিকে, বিএনপি ১০ বছর পর নির্বাচনে এসেছে। তাই তাদের প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন থাকবে- এটা স্বাভাবিক। তবে রাজনীতি আর ভোটের মাঠে অভিজ্ঞতার আলাদা মূল্যায়ন আছে। একেবারে আনকোরা এসব প্রার্থী মাত্র ১৯ দিনে (৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন) কীভাবে ভোটারদের কাছে নিজেদের অবস্থান তৈরি করবেন তা দেখার বিষয়। সেদিক বিবেচনায় তারা হয়তো কিছুটা পিছিয়ে। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রার্থীর চাইতে প্রতীকই যে বড়’- বলেন এ বিশ্লেষক।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের আসন ভিত্তিক প্রার্থী পরিচিতি, ভোটের প্রস্তুতি, দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, ভোটের মাঠে প্রার্থীদের সর্বশেষ অবস্থান ও সম্ভাবনা এবং প্রার্থীদের নিয়ে ভোটাররা কী ভাবছেন- এসব নিয়ে জাগো নিউজ’র চার পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন ‘অভিজ্ঞতায় এগিয়ে আ.লীগ, ভোটের হিসাবে বিএনপি’- এর প্রথমটিতে আজ থাকছে ‘চট্টগ্রাম-১, ২, ৩ ও ৪’ আসনের আদ্যোপান্ত।

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসন

মিরসরাই আসনে আওয়ামী লীগের অটো চয়েস হিসেবেই প্রার্থী হয়েছেন পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। মুক্তিযোদ্ধা এ আওয়ামী লীগ নেতা শুধু চট্টগ্রাম নয় বাংলাদেশের অন্যতম প্রবীণ রাজনীতিবিদ। ভোটের মাঠে তার অভিজ্ঞতা যে কারও চাইতে বেশি। সে হিসাবে অনেকটাই নতুন বিএনপিপ্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন।

Advertisement

মিরসরাই আসনে বিএনপি বরাবর শক্ত অবস্থানে থাকলেও গত দুই মেয়াদে (২০১৪ সালে বিনা ভোটে নির্বাচিত) এ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা উন্নয়ন কাজের ওপর ভিত্তি করে এবারও মোশাররফ হোসেনের মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হাতে নেয়ায় গত দশ বছরে এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের ভোট বেড়েছে, দাবি দলটির নেতাদের।

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, মিরসরাই সবসময় বিএনপির ঘাঁটি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে এখানে বিএনপি নির্বাচিত হয়েছে। তাই এবার মিরসরাই আসন উদ্ধার করবে দলটি। সে ক্ষেত্রে বিএনপির চ্যালেঞ্জ নতুন প্রার্থী নুরুল আমিন। সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা না থাকা এবং প্রতিপক্ষ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মতো ঝানু রাজনীতিবিদের সঙ্গে লড়তে হাবে তাকে। তার সমর্থকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে নতুন হলেও ভোটের মাঠে পুরনো নুরুল আমিন। এর আগে তিনি বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ভোটাররা বলছেন, মিরসরাইতে এবার সেই প্রার্থীই ভোট পাবেন, যিনি চলমান উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখবেন এবং উপজেলার রাজনীতিতে সহ-অবস্থানের নিশ্চয়তা দেবেন।

বিগত নির্বাচনে মিরসরাই আসনে ভোটের হিসাব

মিরসরাই আসনে এবার মোট ভোটার তিন লাখ ১৪ হাজার ৯৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৯ হাজার ৫১৯ জন এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৫৫ হাজার ৪৬৬ জন। গত পাঁচ নির্বাচনে ভোটের হিসাবে এখানে বরাবরই বিএনপি এগিয়ে।

১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিএনপিপ্রার্থী আলী জিন্নাহ ধানের শীষ প্রতীকে ৬৬ হাজার ৯৬৯ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নৌকা প্রতীকে পেয়েছিলেন ৪৮ হাজার ৩০ ভোট।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে এ আসনে বিএনপিপ্রার্থী হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ৬৬ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নৌকা প্রতীকে পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ৪৩ ভোট।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপিপ্রার্থী আলী জিন্নাহ ধানের শীষ প্রতীকে ৮৬ হাজার ৮৩৯ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নৌকা প্রতীকে পেয়েছিলেন ৮২ হাজার ৩৩৩ ভোট।

২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নৌকা প্রতীকে এক লাখ পাঁচ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপিপ্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীকে পান ৯৪ হাজার ৬৬৫ ভোট।

প্রতিযোগিতামূলক চারটি নির্বাচনের প্রতিটিতে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়েছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ভোটের ব্যবধানে। তাই এবারও এ আসনে খুব কম ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে- এমন ধারণা সর্বত্র। সব মিলিয়ে এ আসনে লড়াই হবে সমানে সমান।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন

ফটিকছড়ি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি। ১৯৯১ সালের পর ২০১৪ সালে দ্বিতীয় দফায় ফটিকছড়ি থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এ আসনে মাইজভান্ডারি তরিকার প্রায় লক্ষাধিক ভোটার থাকায় ভোটের মাঠে সবসময় এগিয়ে থাকেন তিনি।

তবে এবার নজিবুল বশরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন আরেক মাইজভান্ডারি সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ। ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকে নির্বাচন করছেন তিনি। এছাড়া ভান্ডারির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে এ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম।

অপরদিকে এ আসনে বিএনপির নতুন মুখ কর্নেল (অব.) মো. আজিম উল্লাহ বাহার। সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী, চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আকবর খন্দকারের মতো প্রার্থীকে হটিয়ে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আজিম উল্লাহ বাহার ২০১০ সালে অবসর নেয়ার পর বিএনপিতে যোগ দেন। ভোটের মাঠে নতুন এ প্রার্থী নিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তার সমর্থকদের দাবি, দলে যোগ দিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন আজিম উল্লাহ বাহার। বিএনপির তৃণমূল নেতারা বলছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে সারাদেশে বিএনপি যখন গো-হারা হেরেছিল, সেই নির্বাচনে ফটিকছড়ি থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনে দলটি। তাই এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।

তবে এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অস্বস্তির কারণ বিদ্রোহী প্রার্থী এ টি এম পেয়ারু। তিনি সম্ভাব্য প্রতীক আপেল নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন। এর আগে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে খোলা চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করেছেন পেয়ারু।

ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহিরী বলেন, ‘ফটিকছড়ির জনগণ যে প্রার্থীকে চান, তার পক্ষেই ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের অবস্থান। নজিবুল বশরের পক্ষে আমরা নেই। কারণ তিনি আমাদের ছাড়া নির্বাচন করবেন বলে দুই বছর আগে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাই তার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়।’

এছাড়া ভোটের মাঠের নতুন খেলোয়াড় সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারির উপস্থিতি অভিজ্ঞ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির পথ কিছুটা বন্ধুর করে তুলেছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।

ফটিকছড়ি আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৬৯ হাজার ১২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৮৭ হাজার ৭৯৭ জন এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৮১ হাজার ৩২৪ জন। আগের পাঁচ নির্বাচনের ভোটের হিসেবে এখানে বরাবরই এগিয়ে বিএনপি। প্রতিযোগিতামূলক চার নির্বাচনের (১৯৯১-২০০৮) তিনটিতেই জয় পেয়েছে বিএনপি।

 বিগত নির্বাচনে ফটিকছড়ি আসনে ভোটের হিসাব

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসন

সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগপ্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা আর বিএনপিপ্রার্থী মোস্তফা কামাল পাশা যেন সমানে সমান। এ আসনে আওয়ামী লীগপ্রার্থীর চাইতে অভিজ্ঞতায় এগিয়ে বিএনপির প্রার্থী। তবে ভোটের মাঠে পারিবারিক ঐতিহ্যে এগিয়ে মাহফুজুর রহমান মিতা। তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে টানা দুবার এমপি হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন মিতা।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, একসময় সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে প্রচার পাওয়া সন্দ্বীপ এখন উন্নয়নের জনপদ। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন জনপদে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে বর্তমান সরকার। গত পাঁচ বছরে সন্দ্বীপে ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। তাই মানুষ এবার আওয়ামী লীগকেই তাদের ভোট দেবে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কোন্দল ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলতে পারে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের। বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ওরফে শাহজাহান মাস্টার বিএ’র সঙ্গে মাহফুজুর রহমান মিতার দ্বন্দ্ব এখন ‘টক অব দ্য সন্দ্বীপ।’

অন্যদিকে, ভোটের মাঠে অভিজ্ঞ বিএনপিপ্রার্থী মোস্তফা কামাল পাশার সমর্থকরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে উন্নয়নের যে ফিরিস্তি তুলে ধরা হচ্ছে তার আড়ালে রয়েছে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের কান্না। তাই বিএনপি বা আওয়ামীবিরোধী শিবিরের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষকে বিজয়ী করবেন। এছাড়া ২০০৮ সালে সারাদেশে ভরাডুবির মাঝেও এ আসনে বিএনপি বিজয়ী হয়েছিল। এবারও ভোটাররা ভোট দিতে পারলে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত।

তবে ভোটাররা বলছেন, গত দশ বছরে সন্ত্রাস কমেছে, হয়েছে কিছু দৃশ্যমান উন্নয়নও। তবে বিরোধী পক্ষের জন্য এ দ্বীপ উপজেলা কখনোই নিরাপদ ছিল না। নির্বাচনের এক মাস আগেও বিএনপির অধিকাংশ নেতা এখানে সক্রিয় ছিলেন না। উপজেলা বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্বও দৃশ্যমান। তাই দাপটের সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগপ্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতার সঙ্গে বিএনপিপ্রার্থী আসলে কতটা পাল্লা দিতে পারবেন তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে মোট ভোটার দুই লাখ দুই হাজার ৬২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৪৭২ জন এবং মহিলা ভোটার এক লাখ দুই হাজার ২৫৩ জন। বিগত চার প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের (১৯৯১-২০০৮) ভোটের হিসাবে সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভোট প্রায় সমান।

বর্তমান এমপি মাহফুজুর রহমান মিতার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে টানা দুবার এমপি হয়েছিলেন। পরের দুবার ২০০১ ও ২০০৮ সালে এখানে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী মোস্তফা কামাল পাশা। এবার দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে ভোটের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি- এমনটি বলছেন স্থানীয় ভোটাররা।

 বিগত নির্বাচনে সন্দ্বীপ আসনে ভোটের হিসাব

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসন

১৯৯১ সাল থেকে চার দফা প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে সীতাকুণ্ড আসনে দুবার বিএনপি এবং দুবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন। এ আসনে যে দলই জয়ী হয়েছে তারাই সরকার গঠন করেছে।

অনেক জল ঘোলার পর শেষপর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন আসলাম চৌধুরীর ভাই ইসহাক চৌধুরী। তবে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী ইসহাক বিএনপির প্রার্থী হওয়ায় এ আসনে ভোটের হিসাব পাল্টে গেছে- এমন ধারণা স্থানীয়দের। রাষ্ট্রদ্রোহ, ঋণ জালিয়াতিসহ অন্তত ৭০টি মামলা নিয়ে দীর্ঘদিন জেলে থাকা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী প্রার্থী হতে না পারায় এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন তার ভাই। এলাকায় তাদের পরিবারের আলাদা গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও হঠাৎ মাঠে নামা ইসহাক কতটুকু সুবিধা করতে পারবেন তা সময়ই বলে দেবে।

অন্যদিকে, বিএনপিপ্রার্থীর যোগ্যতা বা অযোগ্যতার চাইতে এ আসনে আওয়ামী লীগের মাথা ব্যাথার কারণ নিজেদের অন্তঃকোন্দল। সীতাকুণ্ড আসনের আওয়ামী লীগপ্রার্থী দিদারুল আলম। কিন্তু তার সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম আল-মামুনের কোন্দলের খবর গড়িয়েছে কেন্দ্র পর্যন্ত। এ কারণে মাঝে দিদারুল আলম এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন না, তার বদলে সাবেক মেয়র মনজুর আলমের মনোনয়ন পাবার খবর ডালপালা গজিয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

এদিকে দলীয় সিদ্ধান্তে মনোনয়ন না পেলেও এ আসনে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের হয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আল-মামুনের বাবা এ বি এম আবুল কাশেম। স্থানীয়দের আশঙ্কা দিদারুলের সঙ্গে মামুনের কোন্দলের প্রভাব একাদশ সংসদ নির্বাচনে পড়বে।

কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, গত পাঁচ বছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি সরকারি বরাদ্দের দিকে তাকিয়ে থাকেননি। টিআর-কাবিখা ও থোক বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে এলাকার উন্নয়নে। এছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা সীতাকুণ্ডে যে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল সে কারণে মানুষ তাদের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। জনগণ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে।

 

বিগত নির্বাচনে সীতাকুণ্ড আসনে ভোটের হিসাব

স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল, স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াতের আধিপত্য এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে অরাজক পরিস্থিতি এবারের নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে। তবে বর্তমানে এ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের দিদারুল আলম ২০১৮ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। এ কারণে নির্বাচনের মাঠে অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে তার। এছাড়া পারিবারিক ঐতিহ্যে মনোনয়ন পাওয়া দিদারুলের চাইতে রাজনীতির মাঠে বিএনপির প্রার্থী আসলাম চৌধুরীর ভাই ইসহাক চৌধুরীর অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতা আগামী নির্বাচনে ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করতে পারে।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৯৩ হাজার ২৩৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ সাত হাজার ৪৪৮ জন এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৮৫ হাজার ৭৮৯ জন। বিগত চার প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের (১৯৯১-২০০৮) ভোটের হিসাবে সীতাকুণ্ডে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোট প্রায় সমান। তাই লড়াইটা শেষপর্যন্ত নৌকা আর ধানের শীষের মধ্যেই হবে।

[জাগো নিউজ’র চার পর্বের বিশেষ আয়োজনে আগামীকাল থাকছে ‘চট্টগ্রাম-৫, ৬, ৭ ও ৮’ আসনের আদ্যোপান্ত নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ ‘অভিজ্ঞতায় এগিয়ে আওয়ামী লীগ, ভোটের হিসাবে বিএনপি, পর্ব-২)। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন জাগো নিউজে]

আবু আজাদ/এমএআর/আরআইপি