২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত হন মতলব উত্তরের আওয়ামী লীগ কর্মী ও কাঠমিস্ত্রি আতিক উল্লাহ। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে ঠিকই কিন্তু স্বামীর বিচারের জন্য নিরবে নিভৃতে কাঁদেন লাইলী বেগম। তার ইচ্ছে জীবিত অবস্থায় তিনি যেন স্বামী হত্যার বিচার দেখে যেতে চান।লাইলী বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ ৯ বছর দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করেছে তিনি। ৪ সন্তানকে নিয়ে মারাত্মক অভাব-অনটনে দিন কাটিয়েছেন খুপরি টিনের ঘরে। কিন্তু গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ লাখ টাকার ডিপোজিট করে দিয়েছে। যা থেকে প্রতি মাসে সাড়ে ১০ হাজার টাকা করে পাচ্ছেন। এখন সংসারে দরিদ্রতা ঘুচে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তৈরি হয়েছে খুপরি ঘর থেকে বিরাট টিনের ঘর। ঘরের আসবাবপত্রও তৈরি হয়েছে। লাইলী বেগম বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় গ্রেনেড হামলায় আতিক নিহত হওয়ার পর কেউই তার পরিবারের খোঁজ খবর রাখেনি। এমনকি আওয়ামী লীগের পক্ষে মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো মিলাদ বা স্মরণসভার আয়োজনও হতো না। দীর্ঘ ৯ বছর শাড়ির আঁচল দিয়ে বার বার অশ্রুসিক্ত নয়ন মুছেও শান্তি পায়নি স্বামী হারা লাইলী বেগম। এখনও পিতৃহারা ৪ সন্তানকে সেই বীভৎস দিনের প্রকাশিত পত্রিকার ছবি দেখিয়ে লোমহর্ষক হত্যার কথা বর্ণনা করেন লায়লা, বিচার চান খুনিদের। আর শুধু কাঁদেন। লাইলী বেগম আরো জানান, চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ৭নং মোহনপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের উত্তর পাঁচানী গ্রামের ছেলে আতিক পেশায় ছিলেন দিন মজুর কাঠমিস্ত্রি। এছাড়াও ঢাকায় ঢালাই শ্রমিকের কাজও করতেন তিনি। আর স্ত্রী লায়লা ৪ সন্তানকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। ২১ আগস্ট আতিক কাজকর্ম রেখে জনসভায় যোগ দিয়েছিল অন্যান্য নেতা-কর্মীদের মতো। কিন্তু ঘাতকদের গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আতিক। নিহত হওয়ার পর ঢাকা থেকে মতলব উত্তরে এনে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। এক মেয়ে, ৩ ছেলে ও আতিকের মাকে নিয়ে পরিবারের উপার্জনক্ষম তখন কেউ আর ছিল না। একখানা দোচালা খুপরি টিনের ঘর তাদের সম্বল ছিল। সন্তানদের লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করার চেষ্টায় লাইলী বেগম তখন থেকেই হিমশিম খাচ্ছিল। আতিক নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে প্রথমে ১ লাখ টাকা পেয়েছিল। ওই টাকায় গত ৯ বছরে তাদের এ ভাঙা-গড়ার সংসারকে সামাল দিতেই নিঃশেষ হয়ে যায়। অবশেষে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচারের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর তাকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে একটি ডিপোজিট করে দেয়। সে টাকা থেকে প্রতি মাসে সাড়ে ১০ হাজার টাকা করে পেয়ে সংসার চালাচ্ছেন বলে জাগো নিউজকে জানান তিনি। তিনি বলেন, এই টাকাতেও সন্তানদের পড়ালেখা করাতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরও কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এখন একটাই দাবি স্বামীর খুনিদের বিচার। ইকরাম চৌধুরী/এসএস/পিআর
Advertisement