টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়ানোর হুঙ্কার দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে মিরপুরে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে লড়াইটা সেভাবে করতে পারল না সফরকারী দল। ম্যাচটা হেসেখেলেই জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। ৮৯ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখে পাওয়া জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
Advertisement
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা কিছুটা ভোগাচ্ছিলেন। লক্ষ্য ছোট হলেও একটা সময় তাই অস্বস্তিতে ছিল বাংলাদেশ। তবে সেই অস্বস্তি দূর করতে বেশি সময় নেয়নি স্বাগতিকরা। দেখেশুনে খেলে সহজ জয়ই তুলে নিয়েছে তারা।
১৯৬ রানের লক্ষ্যে তামিম ইকবাল আর লিটন শুরুটা করেন বেশ সাবধানে। প্রথম ৭ ওভারে কোনো বাউন্ডারির দেখা পাননি দুই ব্যাটসম্যান। কেমার রোচের করা ইনিংসের সপ্তম ওভারের চতুর্থ বলেই অবশ্য জীবন পেয়ে যান লিটন। ফ্লিক করতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। আম্পায়ার বল চেক করে দেখেন ওভারস্টেপিং করেছেন রোচ। নো বলে বেঁচে যান লিটন।
রস্টন চেজের পরের ওভারে ভয়ংকর হয়ে উঠেন জীবন পাওয়া লিটন। সুইপে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। সঙ্গী চাপ কমিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ওভারেই বোকার মতো আউট হয়ে যান তামিম। আলগা ড্রাইভে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ১২ রান করে।
Advertisement
বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খুলেছিলেন নতুন ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস। পরের বলেই তাকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন ওসান থমাস। ৪২ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সেখান থেকে মুশফিক আর লিটনের প্রতিরোধ। তৃতীয় উইকেটে এই যুগল যোগ করেন ৪৭ রান। হাফসেঞ্চুরির খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন লিটন। কিন্তু ৪১ রানের মাথায় ভুল শট খেলে বসেন তিনি। কেমো পলের বলে ক্রস খেলতে গিয়ে হন বোল্ড।
লিটন ফেরার পর সাকিবকে নিয়ে আরেকটি জুটি মুশফিকের। ৫৭ রানের সে জুটিটি ভাঙেন রভম্যান পাওয়েল, ভয়ংকর হয়ে উঠা সাকিবকে ফিরিয়ে। ২৬ বলে ৪ বাউন্ডারিতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান।
আরও একবার দারুণ শুরু করেছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু ছয় নাম্বার পজিশনটা তার স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই পুরনো ফাঁদ পেতেছিল বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের জন্য। রস্টন চেজের ঘূর্ণিতে স্ট্যাম্পের ঠিক বাইরে পড়া বলে ব্যাট চালিয়ে এবারও স্লিপে ক্যাচ সৌম্য, ১৩ বলে ২ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় করেন ১৯ রান।
Advertisement
তবে বেশ কয়েকজন সঙ্গী হারালেও মুশফিকুর রহীম ক্যারিয়ারের ৩১তম হাফসেঞ্চুরিটা তুলে নিতে ভুল করেননি। এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে একেবারে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। ৭০ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫৫ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। মাহমুদউল্লাহ ছিলেন ১৪ রানে।
এর আগে টাইগার বোলারদের দাপটে একদমই সুবিধা করতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা। রয়ে সয়ে খেলতে গিয়ে লড়াকু পুঁজি দাঁড় করাতে পারেনি সফরকারী দল। নির্ধারিত ৫০ ওভারে তারা তুলে ৯ উইকেটে ১৯৫ রান।
নিজেদের ব্যাটিং শক্তিমত্তাকে বিবেচনায় রেখে টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে স্বাগতিক বাংলাদেশও দুই প্রান্তে স্পিনার দিয়ে ম্যাচ শুরু করে। দুই ওপেনার পাওয়েল ও হোপ প্রথম কয়েক ওভার দেখেশুনে কাটিয়ে দিলেও অষ্টম ওভারে কাজের কাজ করেন সাকিব।
ওভারের শেষ বলে হালকা ভেতরে ঢোকা বলে বড় শট খেলতে যান পাওয়েল। কিন্তু ব্যাটে-বলে করতে না পারায় বল উঠে যায় আকাশে। শর্ট মিড অফ থেকে খানিক দৌড়ে কভার অঞ্চলের পাশ থেকে ক্যাচটি লুফে নেন রুবেল হোসেন। সাকিবের ক্যারিয়ারের ২৪৫তম ওয়ানডে উইকেট এটি।
পাওয়ার প্লে'র মধ্যেই ওপেনারের উইকেট হারিয়ে খানিক খোলসের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলেন তিনে নামা ড্যারেন ব্রাভো। অপর প্রান্তে শাই হোপ রানরেট ঠিক রেখে খেলার চেষ্টা করলেও ব্রাভো খেলছিলেন রয়ে সয়ে।
দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলতে হয়েছে ১৫তম ওভার পর্যন্ত। প্রথমে মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিংয়ে পয়েন্টে থাকা আরিফুল হক এবং পরে রুবেল হোসেনের বোলিংয়ে উইকেটের পেছনে ড্যারেন ব্রাভোর ক্যাচ ছাড়েন মুশফিকুর রহীম।
তবে তৃতীয় বল বল হাওয়ায় ভাসিয়ে আর বাঁচতে পারেননি ব্রাভো। মাশরাফির করা ২১তম ওভারের চতুর্থ বলে তার হাওয়ায় ভাসানো শটটি লংঅফ থেকে হাওয়ায় ভেসেই তালুবন্দী করেন তামিম ইকবাল। ৫১ বলে ১৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন ব্রাভো।
২৫তম ওভারে আবারও আঘাত হানেন মাশরাফি। এবার তার শিকার ওপেনার শাই হোপ। শুরু থেকেই ছন্দময় ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন হোপ। পৌঁছে গিয়েছিলেন ফিফটির দ্বারপ্রান্তে। তাকে পয়েন্টে দাঁড়ানো মেহেদি মিরাজের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠান মাশরাফি। ৫৯ বলে ৪৩ রান করেন হোপ।
পরের উইকেটটি মিরাজেরই। এবারও টাইগার অফস্পিনারের শিকার সেই শিমরন হেটমায়ার, টেস্টে যাকে চার ইনিংসেই আউট করেন মিরাজ। এবার মাত্র ৬ রান করে বোল্ড হন মারকুটে এই ব্যাটসম্যান। আর ১৪ রান করে মাশরাফির তৃতীয় উইকেট হন ক্যারিবীয় অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল।
তবে সপ্তম উইকেটে রস্টন চেজ আর কেমো পল মিলে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। শেষতক ইনিংসের ৪৮তম ওভারে এসে তাদের ৫১ রানের জুটিটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টারকে তুলে মারতে গিয়ে ইনসাইডেজ হয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিরাজের হাতে ধরা পড়েন ৩২ রান করা চেজ।
ইনিংসের শেষ ওভারে এসে তো আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেন মোস্তাফিজ। দ্বিতীয় বলে তিনি ফেরান ২৯ বলে ৩৭ করা কেমো পলকে। এরপর এক বল বিরতি দিয়ে নিজেই দেবেন্দ্র বিশুর ক্যাচটি লুফে নেন কাটার মাস্টার। ওই ওভারে মাত্র ২ রান তুলতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বাংলাদেশের সব বোলারই উইকেটের দেখা পেয়েছেন। মাশরাফি ৩০ আর মোস্তাফিজ ৩৫ রান খরচায় নেন তিনটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট শিকার সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ আর রুবেল হোসেনের।
এমএমআর/জেআইএম