আন্তর্জাতিক

আকাশে যৌন হয়রানি!

যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আন্দোলন মি-টু। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীরা মুখ খুললেও এখনও অনেকেই রয়েছেন; যারা নীরবেই সয়ে যাচ্ছেন এই যৌন হয়রানি।

Advertisement

ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, আকাশে ওড়ার স্বপ্ন নিয়ে যারা হংকংয়ের বিভিন্ন বিমান সংস্থায় কাজ করছেন; সেই নারীদের অনেকেই প্রতিনিয়ত সহকর্মী অথবা অন্যান্য বিমান সংস্থার কর্মীদের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হলেও এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন না। এমনকি কীভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন সেটিও অনেকেই জানেন না।

দেশটির নারী কেবিন ক্রুরা এএফপির কাছে তুলে ধরেছেন কীভাবে তারা শুধুমাত্র যাত্রী নয় বরং তাদের সহকর্মীদের কাছেও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। তবে এসব অভিযোগের কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিমান সংস্থাগুলো সঠিক পদক্ষেপ নিলেও নারী কেবিন ক্রুরা বলছেন, মি-টুর যুগে এই পদক্ষেপ একেবারেই নগণ্য।

আরও পড়ুন : সিরিয়ায় এক টুকরো ‘শান্তির রাজধানী’

Advertisement

ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি বিমান সংস্থায় কাজ করেন হংকংয়ের ভেনাস ফুং। আকাশে বিমানের ভেতরে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন তিনি। এখন এই হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠন করেছেন কেবিন অ্যাটেনডেন্টস ইউনিয়ন অব হংকং নামের একটি সংগঠন। ফুং বলেন, যৌন হয়রানির ঘটনা কীভাবে মোকাবেলা করবে সে ব্যাপারে কর্মীদের শেখানোর দায়িত্ব বিমানসংস্থাগুলোর।

২৯ বছর বয়সী এই নারী বলেন, তার কোম্পানির প্রশিক্ষণের সময় এই বিষয়ে কখনওই আলোচনা হয়নি। হংকংয়ের এই নারী কেবিন ক্রু বলেন, তিনি একবার বিমানে পাইলটের কাছে নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। পাইলট তার বুক, কোমড় এবং শরীরের পেছনের অংশ অযাচিতভাবে স্পর্শ করে। সেই সময় পাইলট মন্তব্য করেছিল, তোমার বডি অনেক সুন্দর। দুই বছর আগে চাকরিতে যোগদানের শুরুর দিকে অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি।

ফুং বলেন, ‘ওই মুহূর্তে আমি প্রচণ্ড রাগ করেছিলাম। কিন্তু আমি সেই সময় অনেক ভীত এবং আতঙ্কিত হয়েছিলাম। আমার মাথায় কোনো কাজ করছিল না। সেই সময় আমার কোনো ধারণা ছিল না যে, এখন কী করতে হবে বা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবো।’

আরও পড়ুন : মঞ্চে উঠে মন্ত্রীকে চড়, অতঃপর...

Advertisement

ইউরোপের বিমান সংস্থায় কর্মরত এই নারী চাকরি হারানোর শঙ্কায় নিজের নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ফুং বলেন, বিমানের ম্যানেজার ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন; কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। পাইলটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে অাঁটসাঁট স্কার্ট পরার কারণে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ম্যানেজার। পরে এক বছরের বেশি সময় পর্যন্ত স্কার্ট পরেননি তিনি। বেছে নেন ঢিলেঢালা পায়জামা।

তখন থেকেই হংকংয়ের এই নারী যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কীভাবে অভিযোগ আনতে হবে কিংবা সহায়তা চাইতে হবে সে ব্যাপারে সহকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। তবে তিনি বলছেন, দীর্ঘদিনের জেঁকে বসা সাংস্কৃতিক পরিবর্তন জরুরি।

আরও পড়ুন : কলকাতার ট্রেন বাংলাদেশ হয়ে যাবে শিলিগুড়ি

ফুং বলেন, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর প্রধান চাবিকাঠি হলো শিক্ষা। এটা রাতারাতি সম্ভব নয়। এতে সময় লাগবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা এখানেই থেমে যাব।

এদিকে, বিমানে পাইলটের হাতে কেবিন ক্রুর যৌন হয়রানির এই অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওই বিমানসংস্থা।

সূত্র : এএফপি।

এসআইএস/জেআইএম