প্রবাস

মিসরে ষড়যন্ত্রের জালে আটকা বাংলাদেশি ব্যবসায়ী

ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! ২০১২ সালের একটি ঘটনায় সপনের সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। ২২ বছর ধরে তিনি মিসরে সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করে আসছিলেন। একটা সময় মিসরীয় রমণীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সপন। কোলজুড়ে আসে কন্যা সন্তান। দেশটির টেনথ রমাজান সিটিতে প্রায় ১২০০ শ্রমিক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি গড়ে তোলেন এ বাংলাদেশি। মিসরি ও বাংলাদেশি মিলে তিনশো শ্রমিক কর্মরত রয়েছে।

Advertisement

সপন আলী মিসরে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন। মিসরজুড়ে তার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। বাড়ি ঢাকার গুলশানের অভিজাত এলাকায়। ১৯৯৪ সালে যখন বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় পঁচাত্তর জনের একটি গ্রুপ প্রথম মিসরে আসেন তাদের মধ্যে একজন সপন আলী।

জানা গেছে, ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি থাকাকালীন পোর্টসাইদ এলাকার এক ব্রাদারহুড নেতার সঙ্গে সপনের পরিচয় হয়। সপন তাদের সঙ্গে ব্যবসা গড়ে তোলেন। একটা সময় এ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ওই মিসরীয়র সঙ্গে ব্যবসার ইতি টানেন। পরে সপন নিজেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন।

হিংসা সব দেশেই বিদ্যমান। যড়যন্ত্র চলতে থাকে সপনের বিরুদ্ধে। কিভাবে তাকে দমানো যায়। মিসরে নিষিদ্ধ ব্রাদারহুড সংগঠনের যোগান দাতা হিসেবে সপনের নামে মামলা দেয়া হয়। অফিসে কর্মরত অবস্থায় সিসি ক্যামেরা ভেঙে সপনকে তুলে নিয়ে যায় মিসরীয় গোয়েন্দা পুলিশ।

Advertisement

সম্প্রতি মিসরের সামরিক আদালত সপনের বিপক্ষে রায় ঘোষণা করেছেন। বলা হয়েছে, সপনকে সন্ত্রাসী সংগঠনে অর্থ যোগান দাতা হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করে তার রেসিডেনশিয়াল পার্মিট বাতিল করে আগামী পাঁচ বছর মিসরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলো। এ রায়ের বিপক্ষে আপিল করার কোন সুযোগ থাকবে না। তাকে আগামী ৯ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার একটি ফ্লাইটে দেশে পাঠানো হবে।

সপন এ প্রতিবেদককে জানান, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। বঙ্গবন্ধু আদর্শের সৈনিক, ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মিসর শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে ছিলাম। ব্রাদারহুডের ওই নেতার সঙ্গে ব্যবসা করেছি। তবে আমি কোনো ব্রাডারহুড নামক সংগঠনে যুক্ত ছিলাম না। কাগজে কলমে তার বেশকিছু আর্থিক লেনদেনও হয়। এর কয়েকটি ডকুমেন্ট মিসরের জাতীয় গোয়েন্দা পুলিশের কাছে কে বা কারা পৌঁছে দেয়। ব্যবসা আলাদা করার পর থেকেই আমার ক্ষতি করার জন্য বহু চেষ্টা চালিয়েছে এ মিসরীয়।’

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম সচিব জোবায়দা মান্নান ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রদূত এবং শ্রমসচিব এ ঘটনার আসল কারণ জানতে মিসরের সরকারকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছেন। তবে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি সপনের পক্ষে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট মুরসির পতনের পরপরই কাতারে নির্বাসনে চলে যান তিনি। মিসরের সর্বোচ্চ আদালত ব্রাদারহুডকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে রায় দেয়ার পর কারো প্রতি ব্রাদারহুডের ছায়া পর্যন্ত দেখলে মিসরের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

Advertisement

মো. কাউসার আলী, মিশর থেকে/এমআরএম/আরআইপি