আন্তর্জাতিক

কলকাতার ট্রেন বাংলাদেশ হয়ে যাবে শিলিগুড়ি

কলকাতার শিয়ালদহ থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে ট্রেন। বাংলাদেশের ভেতরে পার্বতীপুর, দর্শনা, সাঈদপুর, নীলফামারী, তোরণবাড়ী, দোমার, চিলাহাটি পেরিয়ে ফের তা গিয়ে উঠবে ভারতের হলদিবাড়িতে। সেখান থেকে গিয়ে পৌঁছাবে শিলিগুড়ি। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রেন চলবে এই দুই শহরের মধ্যে। সীমান্ত পেরিয়ে দুদেশের মধ্যে রেলপথ গড়ে উঠবে খুব শিগগিরই। ভারতের রেল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

Advertisement

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ। কাজ শুরু করে দিয়েছে ভারতও। ২০২১ সালের মধ্যে রেললাইন বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে আশা রেল কর্তৃপক্ষের। মূলত দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতেই ওই রেলপথ চালু হচ্ছে। চালু হওয়ার পর আপাতত ওই পথে শুধুমাত্র মালগাড়ি চলবে। তবে ভবিষ্যতে ওই রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো হতে পারে বলে রেল কর্তৃপক্ষ।

১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে শেষবার ট্রেন চলেছিল ভারতের হলদিবাড়ি ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চিলাহাটির মধ্যে। সেইসময় শিলিগুড়ির ওপর দিয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত ট্রেন চলত। আবার হলদিবাড়ি হয়ে ট্রেন ঢুকত কলকাতায়। সম্প্রতি ওই রুটটিকে পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশ।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ রেলপথে ভারতের খরচ হবে খুব কমই। বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার লাইন বসাতে হবে ভারতের। তার জন্য দুই দফায় মোট ৪২ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে ভারতীয় রেল। চিলাহাটি থেকে সাড়ে ৭ কিলোমিটার লাইন বসাতে বাংলাদেশ সরকার মঞ্জুর করেছে ৮০ কোটি ৭০ লাখ টাকা ।

Advertisement

কুচবিহার জেলার হলদিবাড়ি স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার জানিয়েছেন, এ পারের (ভারত) কাজ প্রায় শেষের দিকে। এই মুহূর্তে একটি ওভারব্রিজ গড়ার কাজ চলছে। চলছে বৈদ্যুতিক সিগন্যালের কাজও। ৫৬০ মিটার করে দুটি প্ল্যাটফর্মের নির্মাণও প্রায় শেষ। রেললাইনে আগে যে স্লিপার পাতা ছিল, সেগুলো ৬০ কেজি ওজনের ভার সইতে পারত। সেগুলো সরিয়ে নতুন স্লিপার বসানো হচ্ছে, যেগুলো ৯০ কেজি পর্যন্ত ভার সইতে সক্ষম।

তবে এই পথে ট্রেন চলাচল চালু হলে আ-দৌ কি কোনো সুবিধা হবে? ঠিক কতটা সময় বাঁচবে?-সে বিষয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে ভারত। এ বিষয়ে নর্দান ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের কাটিহার ডিভিশনের এডিআরএম পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘১৯৬৫ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল চালু ছিল। তা বন্ধ হয়ে গেলে পরে আমাদের তরফে নতুন রেলপথ গড়ে তোলা হয়। দুই দেশের উদ্যোগে এখন আবার পুরনো রুটটিকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে। দুদেশের যৌথ উদ্যোগে নতুন করে রেলপথ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে ওই রেলপথে আপাতত মালগাড়ি-ই চলবে।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হলেও সময় খুব একটা বাঁচবে বলে মনে হয় না। তার মতে, শিলিগুড়ি থেকে শিয়ালদহ আসতে শুধু শুধু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ঘুরপথে আসতে যাবেন কেন মানুষ?’

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মোট ৭টি সীমান্ত চেকপয়েন্ট রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র তিনটি পথে ট্রেন চলাচল করে।

Advertisement

আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলে তাতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশিই লাভবান হবে। এর ফলে ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গেও রেলপথে যোগাযোগ স্থাপনে পদক্ষেপ করতে পারবে বাংলাদেশ।

এসআর/পিআর